শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

অনন্তযাত্রায় কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

অনন্তযাত্রায় কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।  

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

ল্যাবএইড হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফারুক আহমেদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ (গতকাল) সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের চিকিৎসার বিষয়ে হাসপাতালে তদারকি করা অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম জানান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ শনিবার সকাল ১১টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হবে। পরে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হতে পারে।

তিনি স্ত্রী সানজিদা ইসলাম, একমাত্র পুত্র যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাফাকাত ইসলামসহ অগণিত ছাত্র, ভক্ত, অনুরাগী রেখে গেছেন।

পারিবারিক ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ৩ অক্টোবর শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যাওয়ার পথে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গাড়িচালক একজনের সহায়তায় তাকে পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে নেন। খবর পেয়ে মাজহারুল ইসলামসহ অন্যরা সেখানে যান। সেখান থেকে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তার ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়। পরে সেখানে তার হৃদযন্ত্রে স্টেন্টিং করা (রিং পরানো) হয়।

পরদিন শনিবার অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে, ফুসফুসে পানি জমার কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে রোববার সন্ধ্যায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। তবে পরে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে পুনরায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে গতকাল বিকেল ৫টায় চিকিৎসকেরা লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জন্ম ১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেটে। তার বাবার নাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম, মা রাবেয়া খাতুন। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি; সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটস-এর কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পিএইচডি করেন। পেশাগত জীবনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

দীর্ঘদিনের কর্মজীবন শেষে ২০১৭ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নেন এই শিক্ষক। এরপর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। পরে ২০২৩ সালের ২৭ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ‘ইমেরিটাস অধ্যাপক’ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে মনজুরুল স্যার বা নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে এসএমআই স্যার নামে বেশ জনপ্রিয় তিনি। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এই শিক্ষকের রয়েছে ছাত্রকে চমকে দেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সাবেক ছাত্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শেখ হাফিজুর রহমান সজল জানান, মনজুরুল স্যারের শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল অন্য শিক্ষকদের থেকে একদমই আলাদা। স্যারের অসাধারণ বলার ভঙ্গি আর ব্যতিক্রমী স্টাইল, যা ইদানীংকালের শিক্ষকদের মাঝে ভীষণভাবে অনুপস্থিত।

এদিকে শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের সাহিত্য অঙ্গনে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার পাঠক ও সাহিত্যিকরা ছুটে যান হাসপাতালে। এ ছাড়া ফেসবুকে অনেকে তার ছবি শেয়ার করে শোক প্রকাশ করেন। 

শিক্ষাবিদ পরিচয় ছাড়াও সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বিচরণ ছিল বাংলা সাহিত্য ও মুক্তচিন্তার জগতে। লেখক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত তিনি। তিনি সত্তরের দশকে লেখালেখি আরম্ভ করেছিলেন, এরপর স্বেচ্ছাবিরতির কারণে বাংলা কথাসাহিত্যে আত্মপ্রকাশ ঘটে আশির দশকে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিয়মিত কলাম লিখেছেন। একদম শুরুর দিকে সংবাদ সাময়িকীতে, ‘অলস দিনের হাওয়া’ তাকে পরিচিত করে তোলে। প্রধানত বিদেশি সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের নিয়ে আলোচনা করতেন তিনি। তার  উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৪), থাকা না থাকার গল্প (১৯৯৫), কাচ ভাঙ্গা রাতের গল্প (১৯৯৮), অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প (২০০১), প্রেম ও প্রার্থনার গল্প (২০০৫)। সুখদুঃখের গল্প, বেলা অবেলার গল্প।

উপন্যাসের মধ্যে রয়েছেÑ আধখানা মানুষ্য (২০০৬), দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন, যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক, ব্রাত্য রাইসু সহযোগে, কানাগলির মানুষেরা। প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থ: নন্দনতত্ত্ব (১৯৮৬), কতিপয় প্রবন্ধ (১৯৯২)। অলস দিনের হাওয়া, মোহাম্মদ কিবরিয়া, সুবীর চৌধুরীর সহযোগে রবীন্দ্রানাথের জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্পপ্রসঙ্গ।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমানেরর ওপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম রয়েছে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৮ সালে একুশে পদক অর্জন করেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!