সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ০১:৪৫ এএম

অনলাইন জুয়ার ছোবলে যুবসমাজ

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ০১:৪৫ এএম

অনলাইন জুয়ার ছোবলে যুবসমাজ

*** বেনাপোল-শার্শায়
*** অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের প্রলোভনে
*** সর্বস্বান্ত হচ্ছে বিভিন্ন পেশার মানুষ
*** অনলাইনে টাকা হারিয়ে তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ে
*** জুয়ার টাকা জোগাড় করতে জোটবদ্ধ হয়ে গঠন করছে কিশোর গ্যাং

দেশে নতুন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জুয়া বহু পুরোনো একটি বিনোদনের মাধ্যম হলেও প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির সঙ্গে জুয়া এখন অনলাইন আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। কৌতূহল থেকে শুরু করে ‘সহজে আয়’ ভাবনা তরুণ প্রজন্মকে নানান অনলাইন জুয়ার সাইটে আকৃষ্ট করছে। গোপন পদ্ধতিতে পাকা আয়ের সুফল দেখানো হয়, ফলে শহর-গ্রাম সবার মধ্যে এর বিস্তার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

যশোর জেলার শার্শা-বেনাপোল অঞ্চলে অনলাইন জুয়ার প্রভাব ইতোমধ্যেই তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্রতিদিন হাজারো যুবক অনলাইনে বাজি ধরে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন; এক ক্লিকে লাখ লাখ টাকা উড়ে যাচ্ছে। কলেজছাত্র থেকে মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ী, ফুটপাতের চা দোকানি, সেলুনকর্মী, হকার, নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয়কর্মী, রিকশা-চালক, গৃহপরিচারিকা ও দিনমজুরÑ অনেকেই নির্দিষ্ট সময় অনলাইনে বাজি ধরায় ব্যস্ত থাকেন। শুরু হয় সাধারণত এক হাজার টাকা দিয়ে, পরে তা ১০ হাজার বা তারও বেশি হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সব সম্পদ হারিয়ে যায়।

শার্শা উপজেলার মোট ১১টি ইউনিয়ন উল্লেখযোগ্য বেনাপোল, বাগআঁচড়া, গোগা, কায়বা, শার্শা, উলাশী, লক্ষণপুর এবং একমাত্র পৌরসভা বেনাপোল। এ অঞ্চলে জুয়ার বিস্তার শহর-গ্রাম ধরে ছড়িয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনলাইনে হারানো টাকা জোগাড় করতে না পেরে অনেক তরুণ চুরি-ছিনতাইয়ের পথে নামছে। নাভারন, শার্শা, বেনাপোল ও বাগআঁচড়া এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। কিশোররা জোটবদ্ধ হয়ে গ্যাং গঠন করে রাতে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে সর্বস্ব লুট করছে এই ধরনের ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কে আছে।

কলারোয়ার ভুক্তভোগী আনারুল বলেন, বাসে যশোর যাওয়ার পথে কিশোর গ্যাং চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে আমার কাছে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। অচেতন অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে নাভারন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এখন আমরা অনিরাপদ জীবন কাটাচ্ছি। আগে চিহ্নিত চোর-ডাকাতদের ভয় ছিল, আর এখন উঠতি বয়সি কিশোররা গ্যাং তৈরি করে একই কায়দায় লুটপাট করছে। মাদক ও অনলাইন জুয়ার টাকার নেশায় তাদের এই বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছে।

অন্যদিকে বেনাপোলের আরাফাত রহমান জানান, মোবাইলে জুয়া খেলে টাকা ইনকামের নেশায় কিশোর-তরুণরা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। আর সেই টাকার যোগান দিতে গিয়ে তারা চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে আছি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

অপরদিকে নিঃস্ব হওয়া যুবক আব্দুল্লাহ জানান, নেশায় পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছি। ধার করে খেলেছি এখন দেনার দায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছি। কেউ টাকা দিতে চায় না। আমরা এখন সব হারিয়ে দিশাহারা। স্থানীয়রা বলছেন, এ সমস্যা কেবল আর্থিক নয়। সামাজিক নিরাপত্তা, গণপরিবেশ আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরের প্রভাব নিয়েও বড় প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে। জনগণ ও প্রশাসনকে মিলে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ ও পূনর্বাসনমূলক উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে এটাই এলাকার মানুষের দাবি।

এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত (ওসি) এস আই মানিক কুমার সাহা জানান, অনলাইন জুয়ার ব্যাপারে থানায় কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। নানা কারণে সর্বস্বান্তরা থানায় আসতে ভয় পায়। মোবাইলে জুয়ার বিরুদ্ধে আমরা তৎপর আছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান জানান, অনলাইন জুয়া আমাদের সমাজের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে নানা ধরনের অপরাধ যেমনÑ চুরি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং সক্রিয়তা জড়িত। এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা ইতোমধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি, যাতে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। একইসঙ্গে, জনগণকে সচেতন করতে প্রশাসন সভা-সেমিনার, বিদ্যালয়-মাদ্রাসায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু অপরাধ দমন নয়, বরং মানুষকে বোঝানো যে অনলাইন জুয়া তাদের পরিবার, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!