আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার প্রদর্শনী দেখালেন মেহেদি হাসান মিরাজরা। তাতে প্রশ্ন উঠছে, প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে ক্রিকেটের ব্যাটিংটাই কী ভুলে গেল বাংলাদেশ? আবুধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানদের ১৯০ রানের জবাবে লড়াই জমাতে পারেনি লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১০৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। এই হারের ব্যাখ্যায় ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ মুশতাক বললেন, ‘৫০ ওভার খেলা মিনি টেস্ট ক্রিকেটের মতো। এখানে কখন রক্ষণ করতে হবে, কখন আক্রমণ করতে হবে, কোন বোলারকে মারতে হবে, কোন বোলারকে সমীহ করতে হবেÑ এসব বুঝতে হবে। এসব হিসাব করে ব্যাটাসম্যানদের প্রতিপক্ষের চেয়ে স্মার্ট হতে হবে।’
মুশতাকের মতে, বাংলাদেশ ভালো দল। অর্ধেক কাজ ঠিকঠাক করা বাংলাদেশ দল বাকি অর্ধেক শুধরে নিয়ে যে কারো সঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে। মুশতাক বলেন, ‘আমি বিশ^াস করি, বাংলাদেশ ভালো দল। যেমন প্রতিভা আছে আমাদের, মাঠে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বোলিং ভালো হচ্ছে। এখন ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে পারলে যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারব।’ মুশতাকের মনে হয়েছে, ব্যাটসম্যানরা রশিদের নাম দেখেই অর্ধেক ঘাবড়ে গেছেন! রশিদ নামের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে বলের মেরিট বুঝতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতে ১০ ওভারে ৩৮ রানে ৩ উইকেট নেন রশিদ। দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি আরও বিপজ্জনক। ৮.৩ ওভার বল করে মাত্র ১৭ রান দিয়ে তিনি নেন ৫ উইকেট। ১৯১ রানের লক্ষ্যে ছুটেও যে ৮১ রানে হারতে হলো, তার পেছনে অন্যতম কারণ রশিদ। মুশতাক জানান, ‘আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রশিদ খান নামের বিপক্ষে খেলছে, ওর বলের বিপক্ষে নয়। অবশ্যই ও গ্রেট বোলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে হলে বলের বিপক্ষে খেলতে হবে, বোলারের নামের বিপক্ষে নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দারুণ বোলিংয়ের জন্য রশিদ খানকে অভিনন্দন। আফগানিস্তানের হয়ে বহু বছর ধরেই ও সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমাদের জানা উচিত, কীভাবে বল খেলতে হয়, বোলারকে নয়।’
ব্যাটসম্যানদের কা-জ্ঞানহীন প্রদর্শনীতে বাকি থাকতেই আফগানদের কাছে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির যে লক্ষ্য নিয়ে তারা সিরিজ শুরু করেছিল, সেটিও এখন আরও হুমকির মুখে। স্বাভাবিকভাবেই এত বড় ব্যবধানে হারের দায় ব্যাটসম্যানদের ওপর দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচ শেষে হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা সত্যিই খুব ভালো বোলিং করেছিলাম এবং আমরা সহজেই এই লক্ষ্যটা তাড়া করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের ব্যাটিং খুব খারাপ হয়েছে।’ দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের কারণে ভালো শুরু পেয়েও বিপর্যয় ঠেকানো যাচ্ছে না বলে দাবি মিরাজের। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছিলাম যে টপ অর্ডারে আমাদের জুটি গড়া দরকার, সেটা করতে পারিনি। আমরা জুটি শুরু করি ঠিকই, কিন্তু যখন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে, তখনই সমস্যা হচ্ছে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা যথেষ্ট দায়িত্ব নিচ্ছে না।’
সিরিজ হারের পর এখন বাংলাদেশের সামনে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। আপাতত সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা খুবই হতাশ, তবে আমাদের হাতে এখনো একটি ম্যাচ বাকি আছে। এরপর আমাদের আরেকটি সিরিজ আছে এবং কীভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসা যায়, সে বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’ ওয়ানডেতে টিকে থাকতে ব্যাটিংয়ে উন্নতির বিকল্প নেই বলেও মনে করেন মিরাজ, ‘আমাদের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে। ওয়ানডেতে যদি আমরা রান না করি, তাহলে টিকে থাকতে পারব না।’ আগামী ১৪ অক্টোবর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে আবার বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান পরস্পরের মুখোমুখি হবে। এই সিরিজ খেলে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ রয়েছে। আমিরাতের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে অন্তত একটি জয় নিয়ে ফিরতে পারলে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে বাড়তি আত্মবিশ^াস কাজ করবে। তাই শেষ ম্যাচটি জয়ে রাঙিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন