বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ১২:২৮ এএম

দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্গম স্থানে ড্রোন ও ঢাকায় রোবট ব্যবহারের ভাবনা

মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ১২:২৮ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় ড্রোন ও রোবট ব্যবহারের কথা ভাবছে সরকার। এ জন্য ড্রোন ও রোবট কেনার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপদে আগুন নেভানোর জন্য কেমিক্যালসমৃদ্ধ সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ও পরিকল্পনায় রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব কাজী শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান।

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘যেসব দুর্গম এলাকায় সচরাচর যাওয়া সম্ভব হয় না, সেখানে আমরা ড্রোনের সহায়তা নেব; ঢাকাসহ কিছু এলাকায় আমরা রোবট ব্যবহারের চেষ্টা করব।’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ‘ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগ অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ (৩য় পর্যায়)’ নামে প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। 

প্রকল্পের পরিচালক কাজী শফিকুল আরও বলেন, ‘দেশে জটিল অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। কিছু কিছু ঘটনায় আগুন নেভানো রীতিমতো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কয়েকটি ঘটনায় আমাদের মনে হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের পানি দিয়ে এ আগুন নেভানো দুরূহ। ক’দিন আগে একজন ফায়ার কর্মীর মর্মান্তিক প্রাণহানির পর কেমিক্যালসমৃদ্ধ ইকুইপমেন্ট কেনার কোনো বিকল্প নেই বলে আমাদের মনে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ছয় বছরব্যাপী প্রকল্প হাতে নেয় ২০২১ সালে। কিন্তু গুছিয়ে উঠতে না পারায় সম্প্রসারণ করে এর মেয়াদ নির্ধারিত হয় ২০২৭ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। কাজী শফিকুল ভূমিকম্প সম্পর্কে তাদের প্রস্তুতির একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। তিনি জানান, দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা, সিলেট ও টাঙ্গাইলে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার কাছে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, এর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পরবর্তীতে যেখানে যে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে, সেখানে তা পাঠানো হবে। এ জন্য এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ, আনসার, র‌্যাব এব নৌবাহিনীকে এই প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এদিকে দেশে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় আবারও বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ১৪ অক্টোবর কথা হচ্ছিল এই কর্মকর্তার সঙ্গে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর যশোরের মনিরামপুরে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় এবং এটির উৎপত্তিস্থল মনিরামপুরেই হওয়ায় বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এর আগে ভারতের আসামে ১৪ সেপ্টেম্বর ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর আঁচ আমাদের এখানেও লাগে। সাত দিনের মাথায় ২১ সেপ্টেম্বর আবার সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে  ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উদ্বেগের বিষয়, এর উৎপত্তিস্থল ছিল এই জেলারই ছাতকে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪।

এভাবে দেশেই উৎপত্তি হয়ে কম শক্তিধর ভূমিকম্প আঘাত হেনে একটু একটু করে বড় ধরনের ভূমিকম্পের বার্তা দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত ২৭ জানুয়ারি এই বিষয়েই রূপালী বাংলাদেশের সাথে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুর কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারীর সঙ্গে। তিনি যেকোনো সময় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প দেশে আঘাত হানতে পারে বলে তখন আভাস দিয়েছিলেন। 

তিনি জানান, বড় মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হবে টাঙ্গাইলের মধুপুর অথবা সিলেটের ডাউকি। এর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ড. মেহেদী বলেন, সাধারণত কোনো চ্যুতি রেখার মেয়াদ এক-দেড়শ’ বছর পার হয়ে গেলে শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। সেই হিসেবে মধুপুর ও সিলেটের চ্যুতি রেখা ১২৫ বছর অতিক্রম করেছে। বলতে গেলে দুটিই পরিপক্ব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সবকিছুই আল্লাহপাকের হাতে। তবে গণনা বলে, যেকোনো একটি চ্যুতি রেখা থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা হবে ৭। 

এই বক্তব্যের সূত্র ধরে ৯ অক্টোবর ড. মেহেদীর সঙ্গে ফের কথা হয় রূপালী বাংলাদেশের। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক। আমাদের এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উচিত জোরেশোরে প্রচার চালানো। বিল্ডিং কোড মেনে সবাই যেন ভবন নির্মাণ করেন, সে ব্যাপারে সচেতন করা। সেইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া। তা ছাড়া সরকারি যেসব সংস্থা ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করে, তাদের কাজকে আরও বেগবান করা দরকার। মনে রাখতে হবে, এখন আরও সময়ক্ষেপণ আমাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। অপরদিকে রাজউকের অধুনাবিলুপ্ত আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মধুপুরে উৎপত্তি হওয়া সম্ভাব্য বড় ভূমিকম্পের ফলে রাজধানী ঢাকায় কম করে হলেও ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়তে পারে। যদি উৎপত্তিস্থল সিলেটের ডাউকি হয়, তাহলে ৪০ হাজার ৯৩৫টি থেকে ১৪ হাজার ৭৪২টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর মধুপুরের ভূমিকম্প যদি দিনের বেলায় হয়, কমবেশি ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যাবে, আহত হবে প্রায় ২ লাখ ২৯ হাজার। 

এর কারণ হিসেবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দিনের বেলায় অফিস-আদালত ও কলকারখানায় লোকসমাগম বেশি থাকায় এই বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এরইমধ্যে দেশের স্বনামধন্য কাঠামো প্রকৌশলী অধ্যাপক এম শামসুজ্জামান বসুনিয়া গত ১ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। 

তিনি বলেন, অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ঢাকার প্রায় সব ভবনই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। দুঃখের বিষয়, ভূমিকম্প নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষই কমবেশি উদাসীন। ভূমিকম্প নিয়ে তেমন একটা কাজ হয়নি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কেবল একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেই খালাস। আর এরা এগোয়নি। উল্টো তারা প্রকল্পই বন্ধ করে দিয়েছে। সংস্থাটি ২০১৮ সালে ‘আরবান রেজিলেন্স’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় চার বছরব্যাপী এক সমীক্ষা পরিচালনা করে সংস্থাটি। এর মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত। ৫৩৬ কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দের এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী ছিলেন প্রকল্প পরিচালক। ঢাকা মহানগরীর ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে পরিচালিত হয় সমীক্ষাটি। ২০২২ সালের ৩০ জুন দীর্ঘ এই সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। ভূমিকম্প নিয়ে এত বড় সমীক্ষা সংস্থাটি প্রথম পরিচালনা করে।

সেখানকার বিশেষজ্ঞ সভার কার্যপত্রে বলা হয়, ২০২১ সালে সিলেটে পরপর ৭ বার এবং চট্টগ্রামে তিনবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এ ছাড়া সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আরও বেশ কয়েকবার মাঝারি ভূমিকম্প প্রত্যক্ষ করা গেছে। এসব ছোট ও মাঝারি ভূমিকম্প ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়। তখনকার পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, ঢাকায় রাজউকের নিবন্ধিত ভবন রয়েছে প্রায় ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯টি। এর মধ্যে চারতলা ভবন রয়েছে ৬ লাখ। সাড়ে তিন হাজার হাসপাতাল ও ভবন ধরে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। রাজউকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। 

এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো দুটি বিপজ্জনক চ্যুতি রেখার ওপর বাংলাদেশের অবস্থান। একটি টাঙ্গাইলের মধুপুর, অন্যটি সিলেটের ডাউকি। 

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঢাকায় ভূমিকম্প ঝুঁকির অন্যতম কারণ জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ। ওইসব ভবন ভূমিকম্প সহনীয় নয়। কেউ কেউ আবার নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা না করে ভবন নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে ১৫ বছর আগের ভবন নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুসৃত হচ্ছে ১৯৯৬ সালের বিধিমালা। ফলে ভবন নির্মাণে নিয়ম-রীতি পুরোপুরি লঙ্ঘিত হচ্ছে। 

তা ছাড়া ইটের তৈরি দেয়াল ভূমিকম্পের ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয় বলে মন্তব্য করে তাদের অভিমত, ‘আমরা যদি ভূমিকম্পসহনীয় কংক্রিটের ব্লকের ব্যবহার বেশি বেশি বাড়াতে পারি তাহলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিঃসন্দেহে কমে আসবে।’ এসব বিষয়ে বিশদভাবে  কাজ করার চেষ্টা করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ লক্ষ্যে সংস্থাটি ‘বাংলাদেশ স্ট্রাকচারাল রিস্ক অ্যান্ড রেজিলেন্স ইনস্টিটিউট’ নামে  একটি স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করেছিল তৎকালীন সরকারের কাছে। এই ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ-পরবর্তী কার্যক্রমে প্রকৌশল সহায়তা দেওয়া বলে সুপারিশমালায় উল্লেখ করা হয়। 

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এর পরিচালনা পর্ষদ হবে ১২ সদস্যের। গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব হবেন প্রকল্পের চেয়ারপার্সন।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র আভাস দিয়েছে, ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’  প্রণয়ন করেছে। সূত্রের দাবি, এই কোড অনুসরণ করে ভবন নির্মাণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কম হবে। তবে যেসব ভবন ইতোমধ্যেই কোনো নিয়ম-কানুন না মেনেই নির্মিত হয়েছে, সেসবের কী হবে এই প্রশ্নের উত্তর মিলেনি কোনো পক্ষ থেকেই। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!