আ.লীগের নেতাকর্মী না ছাড়ায় ওসিকে হুমকি যুবদল নেতার

ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ছেড়ে না দেওয়ায় থানার ওসি ও পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ করে হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। গত বুধবার দুপুরে জেলার রানীশংকৈল থানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ একটি জিডি করেছে বলে নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম।

ওই যুবদল নেতার নাম নাজমুল হুদা ওরফে মিঠু। তিনি পাশের পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার দুজনকে ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির সঙ্গে বাগবিত-ার একপর্যায়ে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় ওই যুবদল নেতাকে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল।

রানীশংকৈল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের ৪ জন কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেনÑ ওই উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাজোর এলাকার মৃত বজির উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান (৬০), তার ছেলে সারোয়ার নুর লিওন (৩২), ভাউলারবস্তি সম্পদবাড়ি এলাকার মৃত হুসেন আলীর ছেলে খলিলুর রহমান (৫০) ও ধর্মগড় এলাকার এনামুল হকের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪২)।

তবে গ্রেপ্তার হামিদুর ও সারোয়ারের বাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের এলাকায় হওয়ায় আসামিদের গাড়িতে তোলার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন। পুলিশ তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে তাদের থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ছাড়াতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেন। পরে তার নেতৃত্বে প্রায় ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী ও আসামিদের আত্মীয়-স্বজন থানায় উপস্থিত হয়।

পুলিশ আরও জানায়, পরবর্তী সময়ে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা মিঠু থানায় এসে হামিদুর ও সারোয়ারকে তার আত্মীয় দাবি করে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ওসিকে বলেন। ওসি তা প্রত্যাখ্যান করে আসামিদের থানা হাজত থেকে গাড়িতে তোলার সময় নাজমুল হুদা মিঠু ও জাহিদুল ইসলামসহ আরো অনেকেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ও থানার সেকেন্ড অফিসারসহ পুলিশের অন্য সদস্যদের অশ্রাব্য গালিগালাজ করে ‘হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি দেন।

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মধ্যরাতে কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে। তার মধ্যে আমার ব্যাবসায়িক পার্টনারও ছিল। তারা আমাকে রাতেই ফোন করে জানাল, পুলিশ তাদের আটক করেছে। আমি ওসিকে ফোন দিচ্ছিলাম; কিন্তু তাকে পাচ্ছিলাম না। পরে ওসি নিজেই আমাকে বাসায় ডেকে পাঠান। আমি গিয়ে দেখি আগ থেকেই কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। আমি বলি যে বাবা-ছেলেকে ধরে নিয়ে এসেছেন, তারা তো কোনো দল করে না। তখন তিনি হুট করে খেপে গিয়ে বলেন, আপনার চ্যালেঞ্জ আমি গ্রহণ করলাম এবং প্রমাণ দেব তারা কমিটিতে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওসি আর আমাদের ফোন ধরেন না। তাদের ছাড়বেন কি ছাড়বেন না সেটা তো আমাদের বলতে হবে। আমরা আদালতে গিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করব। এদিকে জেলার নেতারাও ফোন দিচ্ছেন। কিন্তু ওসি কারো ফোন ধরছেন না।’

পুলিশ সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি আগস্টের ৪-৫ তারিখ যখন থানা জ্বালিয়ে দিতে যায়, তখন জেলার এক নেতা আমাকে বলে এটা জাতীয় সম্পদ। তোমাকে রক্ষা করতে হবে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে সেদিন থানা রক্ষা করেছিলাম, এ কথা ওসিকে বলেছি। হুমকি বা প্রাণনাশের কোনো কথা আমি বলিনি।

এ বিষয়ে রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক বলেন, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রানীশংকৈল থানায় বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা রয়েছে। মধ্যরাতে তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আদালতের মাধ্যমে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আসামি ধরেছিলাম ৪ জন। এ জন্য অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করে এবং দেখে নিবো, থানা উড়িয়ে দিবো, বাইরে গেলে ঠ্যাং ভেঙে দিবো। কীভাবে চাকরি করেন দেখে নিবো- বলে নানানভাবে হুমকি দেন পীরগঞ্জ উপজেলার যুবদলের সভাপতি মিঠু। শুধু আমাকে নয়, যে অফিসার আসামিদের ধরেছিলেন তাকেও গালিগালাজ করেন। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানিয়েছি।’

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, থানায় যে ঘটনাটি ঘটেছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রথমত আমরা জিডি করেছি। তাদের হাইকমান্ডের সাথে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার। এরপরেও আমরা এটা তদন্ত কবি। কোর্টের আদেশ নিয়ে যা যা করার আমি সেগুলো করব।

এদিকে ওসিকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল। গতকাল বৃহস্পতিবার যুবদলের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলামের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।