তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে পাওয়া গেছে ভিন্নমাত্রার প্রতিক্রিয়া। নির্বাচনকে ঘিরে টানাপোড়েনের সময়ে ঘোষিত এ রায়কে অনেকেই ‘সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে নতুন আশার বার্তা’ হিসেবে দেখছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের ১৪ বছর আগের রায় সম্পূর্ণভাবে বাতিল ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করেন। রায়ে বলা হয়, চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, যে ভোটাধিকার হরণের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে নির্বাচনকে সুসংহত ও গ্রহণযোগ্য করতে এই রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলেও এই রায়ের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন পরিবেশ অন্তত আরও গ্রহণযোগ্য হবে। তার ভাষায়, ‘বাংলাদেশের মানুষ একটি নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমেই।’
গতকাল দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আদালতের রায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে।’ তার দাবি, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনই ছিল দেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, আর সেগুলো হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর পর পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সুযোগ ফিরে আসায় জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে শঙ্কা কমবে। পাশাপাশি তিনি ইসি ও অন্তর্বর্তী সরকারকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচনব্যবস্থাসহ সব জায়গায় গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে,’ বলেন তিনি।
এর আগে রায় প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নির্বাসন থেকে ফিরে এসেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায় নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও সংকটময় করেছিল, যার ধারাবাহিকতায় গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। রিভিউর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়াকে তিনি গণতন্ত্রের জন্য ‘ঐতিহাসিক অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেন। বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়াও রায়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, আদালত খায়রুল হকের রায়কে ‘পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল’ করেছেন, ফলে ত্রয়োদশ সংশোধনী দ্বারা আনা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন