সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ টাঙ্গুয়ার হাওড় শীতকাল মানেই ছিল অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য। শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে ঝোপঝাড়, খাল-বিল এবং জংলা এলাকায় ভিড় করত হাজারো পরিযায়ী পাখি। সারাদিন কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকত হাওড়। স্থানীয় মানুষ, গবেষক ও দেশ-বিদেশের প্রকৃতিপ্রেমীরা উপভোগ করতেন সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই চিরচেনা দৃশ্য যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে কমছে অতিথি পাখির আগমন, ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয় পরিবেশবিদদের।
২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওড়কে রামসার সাইট হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর পরপরই সরকারি উদ্যোগ, দাতা সংস্থা ও পরিবেশ–সচেতন সংগঠনগুলো হাওড় পুনরুদ্ধার এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। তবে মাঠপর্যায়ে দীর্ঘ দেড় দশক সংরক্ষণ কার্যক্রম চলার পরও কাক্সিক্ষত উন্নতি ঘটেনি বলে দাবি করছেন স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা। বরং অনেক ক্ষেত্রে কমছে জীববৈচিত্র্য ও পাখির উপস্থিতি।
এনইআরপির জরিপে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরাঞ্চলে প্রায় ২৮৪ প্রজাতির পাখির উপস্থিতি ছিল। এর মধ্যে শুধু টাঙ্গুয়ার হাওড়েই পাওয়া যেত ২১৯ প্রজাতির পাখি। তাদের মধ্যে ৯৮টি পরিযায়ী এবং ১২১টি দেশি প্রজাতি। এ ছাড়া ২২ প্রজাতির পরিযায়ী হাঁসও ছিল তালিকায়। তবে পরবর্তী পর্যবেক্ষণে সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। ২০১১ সালের এক জরিপে ৬৪ হাজার পাখির মাঝে ৮৬ জাতের দেশি এবং ৮৩ জাতের বিদেশি পাখির কথা জানানো হয়।
একই সঙ্গে বেগুনি কালেম, ডাহুক, পানমুরগি, রাজসরালি, মাছরাঙা ও চখাচখিরও উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন সেই উপস্থিতি আর নিয়মিত দেখা যায় না।
স্থানীয়দের মতে, এর বড় কারণ হচ্ছে হাওরের জলাধার সংকুচিত হওয়া, নির্বিচারে মাছ শিকার, নৌ-যান চলাচল বৃদ্ধি, জলজ উদ্ভিদ-উচ্ছেদ এবং পর্যটনকেন্দ্রিক বিশৃঙ্খলা। পাখির বিশ্রামস্থল ও খাদ্য-উৎস কমে যাওয়ায় তারা পথ পরিবর্তন করছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী মনজুর মোহাম্মদ বলছেন, শীত এলে যেভাবে টাঙ্গুয়ার আকাশ-জল ভরত পাখিতে, এ বছর তা আর হয়নি। কেউ কেউ আশা করছেন, মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই হয়তো কিছু পরিযায়ী এসে পড়বে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেনÑ আগের সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ।
হাওড়ে প্রতিবেশ প্রকল্পে যুক্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএসের সাইট অফিসার শাহ কামাল বলেন, আমরা কিছুদিন ধরে হাওড়ের প্রতিবেশ সুরক্ষায় ইসিএ ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে কাজ করছি। তবে এর মধ্যেই আমরা জানতে পেরেছি, কিছু লোক ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। স্থানীয়রা আমাদের বলছেন, কয়েক বছর ধরে পাখি কমছে। তবে ইসিএ রোল বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনকে সচেতন না হলে সুফল মিলবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন