এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্কারোপ করল যুক্তরাষ্ট্র, যা আগামী পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকরের কথা রয়েছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে ব্রাসেলসের কয়েক সপ্তাহ আলোচনার পরও বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারায় শুল্ক নির্ধারণ করে ইইউ কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে পালটা শুল্কারোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইইউ নেতারা। ট্রাম্পের এ শুল্ক নীতিকে মার্কিন স্বার্থ ঘেঁষা বলছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছে। এ হুমকির বিপরীতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উভয় পক্ষ। মেক্সিকো এ পদক্ষেপকে আখ্যা দিয়েছে ‘অন্যায় চুক্তি’ হিসেবে এবং জানিয়েছে, তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাতের বিষয়ে আপস করা হবে না। এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, প্রয়োজন হলে ‘পালটা ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। তবে উভয় পক্ষই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখতে চায় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইইউর ট্যারিফ ও বাণিজ্য নীতির কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক ঘাটতি সহ্য করেছি। এখন আর তা চলবে না।’ ফক্স নিউজে প্রচারিত এক পূর্ব-রেকর্ডকৃত সাক্ষাৎকারে শনিবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘অনেক দেশ এখন খুব বিরক্ত। আগামী ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকির জবাবে পালটা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। গত শনিবার এই হুঁশিয়ারি দেন কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন। তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় পণ্যে একতরফাভাবে শুল্কারোপ করে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সপ্তাহব্যাপী আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, ১ আগস্ট থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
গত এপ্রিলের ২ তারিখে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ৩৯ শতাংশ শুল্কারোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য এরপর ৯ জুলাই পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে গেলো তিন মাসেও শুল্ক হার কমানোর ইস্যুতে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটন।তবে ইইউ ব্লকে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও এবার দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। ট্রাম্পের সম্পূরক শুল্কের তালিকায় নতুন করে নাম উঠে আসলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর। স্থানীয় সময় শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশের ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আগামী পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকরের কথা।এরইমধ্যে বিষয়টি অবহিত করে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উসজুলা ভন দেইর লিয়েনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। একইদিন ইইউভুক্ত দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি করে ট্রাম্প বলেন, তারা যদি পাল্টা শুল্কারোপের কথা ভাবে তবে এই হার আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে।
মার্কিন ট্রেড ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ দেশগুলোর বাণিজ্য হয়েছে ৯৭৬ বিলিয়ন ডলারের। যেখানে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ২৩৫ বিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতি পূরণেই মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। তবে মার্কিন এই শুল্কের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইইউ নেতারা।ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে আটলান্টিক অঞ্চলের পণ্য সরবরাহের স্বাভাবিক শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে। আর এতে নিন্দা ও অসন্তোষ জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। আগামী পহেলা আগস্টের মধ্যে যদি কোন ধরনের চুক্তিতে পৌঁছানো না যায় তবে এর পাল্টা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি তার।এক বিবৃতিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বচ্ছ বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশা করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধ কোনোভাবেই কাম্য নয়। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের নেতারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ চান না বলে বিবৃতি দিয়েছেন। ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি একইদিন মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্কারোপের কথা জানান ট্রাম্প। এতে হতাশ দেশটির সাধারণ নাগরিকরা।