ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে চিৎকার!

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:০৭ এএম

স্ট্রেস হলো এমন একটি পরিস্থিতির মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া, যা নিজেকে হুমকি বা চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করে। মানসিক চাপ মস্তিষ্কেও পেছনের ছোট অংশটিকে সক্রিয় কওে, যা হাইপোথ্যালামাস নামে পরিচিত। হাইপোথ্যালামাস হরমোন নিঃসরণ করে, যা আমাদের লড়াই বা ফ্লাইটের প্রতিক্রিয়াকে ট্রিগার করে। গবেষণা অনুসারে, নিঃসৃত প্রাথমিক হরমোন হলো কর্টিসল, যা আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। এটি শরীরকে দক্ষতার সাথে মস্তিষ্ক এবং পেশি মেরামতের কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম করে।

একই সময়ে, এটি প্রজনন এবং পাচনতন্ত্রের মতো অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোকে বাধা দেয়। তুমুল প্রতিযোগিতার এই যুগে মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কাজের চাপ থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে কেউ প্রকৃতির কোলে সময় কাটান, কেউ বাড়িতেই করেন ধ্যান বা যোগব্যায়াম। এমন চেষ্টা নিঃসন্দেহেই ইতিবাচক। তবে মনের চাপ কমাতে এসবের বাইরেও আরেকটি বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। তা হলো খাদ্যাভ্যাস।

শিকাগোর নর্থ অ্যাভিনিউ বিচে প্রতি মাসের রোববার সন্ধ্যায় ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। হঠাৎ একসঙ্গে চিৎকার করে ওঠেন একদল মানুষ। মূলত মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতেই এ কার্যক্রমে অংশ নেন তারা। আপনি যদি কোনো এক রোববার সন্ধ্যায় শিকাগোর নর্থ অ্যাভিনিউ বিচে যান এবং হঠাৎ অনেক মানুষের একসাথে চিৎকার করার শব্দ শুনে চমকে ওঠেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা কোনো প্রতিবাদ কিংবা নাট্য কর্মসূচি নয়Ñ এটা হলো ‘স্ক্রিম ক্লাব শিকাগো’ নামের একটি অভিনব উদ্যোগ, যেখানে মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ভেতরের মানসিক চাপ, দুঃখ ও হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জোরে চিৎকার করেন। সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শিকাগোতে এসে এই বিশেষ আয়োজনটি শুরু করেছেন ম্যানি হার্নানদেজ।

তিনি একজন লাইফ ট্রান্সফরমেশন কোচ এবং ব্রেথওয়ার্ক প্রশিক্ষক। তিনি জানান, জুন মাসে এক কঠিন দিনে এই পরিকল্পনাটি মাথায় আসে। স্ক্রিম ক্লাব শিকাগোর উদ্যোক্তা ম্যানি হার্নানদেজ বলেন, ‘সেদিন আমার সঙ্গীর সঙ্গে দিনটি ভালো যাচ্ছিল না। হঠাৎ আমি তাকে বললাম, চলো লেকের ধারে গিয়ে চিৎকার করি। সে রাজি হয়ে গেল।’ তাদের সেই চিৎকার দেখে আশপাশের বেশ কয়েকজন আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেদিনই হার্নানদেজ সিদ্ধান্ত নেন এটিকে নিয়মিত আয়োজন হিসেবে চালু করার। ম্যানি হার্নানদেজ বলেন, ‘আমি বললাম, আমরা একটু চিৎকার করতে যাচ্ছি, আপনাদের বিরক্ত করছি, দুঃখিত। আপনারা চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। আর তারা রাজি হয়ে গেলেন। কেউ কেউ কেঁদেও ফেললেন।’ গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে অনুশীলন শুরু হয়।

এরপর নিজের ভেতরের জমে থাকা ক্লান্তি, দুঃখ, রাগ বা হতাশা মুক্ত করার জন্য অংশগ্রহণকারীরা তিনবার গলা ছেড়ে চিৎকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একটা প্রেশার কুকারের মতো। প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের জন্য এক ধরনের হরমোন জমছে শরীরে। যদি সেটাকে মুক্ত করার উপায় না থাকে, তাহলে একসময় সেটা বিস্ফোরণ ঘটাবে।’ ৩১ বছর বয়সি হেভি মেটাল সংগীতশিল্পী আলেকজান্ডার রুভালকাবা নিয়মিত আসেন এ সেশনগুলোতে।

তার মতে, শুধু চিৎকার নয় এই উদ্যোগের সামাজিক দিকটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংগীতশিল্পী আলেকজান্ডার রুভালকাবা বলেন, ‘আমি এখানে আসি, কারণ এমন কিছু আছে, যা আমি ছেড়ে দিতে চাই। এই চিৎকারের পর আমি নিজেকে অনেক বেশি হালকা, অনেক বেশি আনন্দিত মনে করি।’ এই স্ক্রিম ক্লাবকে আরও বড় করার স্বপ্ন দেখেন হার্নানদেজ। ম্যানি হার্নানদেজ বলেন, ‘যদি আমাদের সমাজে এ ধরনের মুক্তির পথ আরও বেশি থাকত, তাহলে মানুষ আরও শান্ত, আরও সহানুভূতিশীল হতো।’ এই উদ্যোক্তার ইচ্ছা, সবাই নিজের মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুক।

মানসিক দুশ্চিন্তা, হতাশা, মানসিক চাপ ও নেতিবাচক জীবনযাপনের ফলে স্বাভাবিক কোমলতা হারায় ত্বক, তৈরি হয় কুঁচকে যাওয়া, ব্রণ, চর্মরোগ, শুষ্কতা ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা।