একসময় বাংলাদেশি পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল কলকাতার নিউমার্কেটের পাশের ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিট। সাশ্রয়ী হোটেল, দেশি খাবার, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য জায়গাটি পরিচিত ছিল ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে। তবে গত এক বছর ধরে এই এলাকাটি প্রায় পর্যটকশূন্য। রাস্তাঘাট এখন শুনশান, দোকানপাটে নেই সেই ভিড়। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করেই থেমে যায় বাংলাদেশের পর্যটকদের কলকাতাযাত্রা। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ এলাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক বছরে এ অঞ্চলের ক্ষতি ছাড়িয়েছে ১ হাজার কোটি রুপি, আর আশপাশের নিউমার্কেট ও বুররাবাজারের ক্ষতি ধরলে সেই অঙ্ক ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান জানান, আগে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হতো এই এলাকায়। এখন সেই অঙ্ক নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা ও পরিবহন ব্যবসাÑ সবখানেই ধস নেমেছে। মার্কুইস স্ট্রিটের ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস জানান, আগে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি বাস পর্যটক নিয়ে আসত, পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া কঠিন হতো। এখন পর্যটকের দেখা নেই। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার অবস্থাও একই রকম। ইনতেজার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন টিকে থাকার লড়াই করছি।’ এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ মাঝারি ও ছোট রেস্তোরাঁ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোও কর্মী ছাঁটাই করে খরচ কমিয়ে চালাতে বাধ্য হয়েছে। ‘রাঁধুনী’ রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক বলেন, ‘ব্যবসা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, এইভাবে চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন।’ করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার পর অনেকে ধারদেনা করে হোটেল ও রেস্তোরাঁ সাজিয়েছিলেন, কিন্তু নতুন করে আবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক মালিক। এই এলাকায় যারা হোমস্টে চালাতেন, গাইডের কাজ করতেন, খাবার সরবরাহ করতেন, তারাও এখন কর্মহীন। হোটেলকর্মী, ড্রাইভার, দোকানদারসহ শত শত মানুষ আয়ের উৎস হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন।