ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, অনাহারে জর্জরিত গাজা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ১২:১৫ এএম

গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহর ৭৫ বছর বয়সি সালিম আসফুর। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে শুধু রুটি আর পানি খেয়ে বেঁচে আছি। আমার ওজন ৮০ কেজি থেকে এখন ৪০ কেজি হয়ে গেছে। আমার ছেলে আমাকে বাথরুমে নিতে সাহায্য করে।

আমি রাফাহ থেকে খাবার আনতে কীভাবে যাব? ২০ কিলোমিটার হাঁটব কীভাবে?’ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে প্রাণ গেছে ১৮৮ ফিলিস্তিনির, যার মধ্যে ৯৪ শিশু। গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ৮ শিশুসহ আরও মানুষ অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন। এ ছাড়া গাজায় শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলেও সতর্ক করেছেন অনেকে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক ইসরায়েলের জাতিসংঘের ক্লিনিকে হামলা, ভোর থেকে গাজায় ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয় ।

গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ৫৮ জনই ছিলেন সহায়তাপ্রত্যাশী। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান। গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, জিএইচএফের বিতরণ কার্যক্রম মে মাসে শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই একই ঘটনা ঘটছে। ফিলিস্তিনিরা খাবারের আশায় কেন্দ্রে যাচ্ছেন, আর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালাচ্ছে। তিনি জানান, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছে একটি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র থেকে আল-শিফা হাসপাতালে আনা আহতদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের শরীরের যেসব অংশে গুলি লেগেছে, তা চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত জটিল। অনেকের মাথা, গলা, বুকেও গুলি লেগেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা জিএইচএফের কার্যক্রম ও এর আশপাশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, এই সংস্থা পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে খাদ্যসহায়তার আশায় থাকা ১ হাজার ৫৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, সোমবার গাজায় মাত্র ৯৫টি সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যেখানে দৈনিক কমপক্ষে ৬০০ ট্রাক প্রয়োজন সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৮৫টি ট্রাক প্রবেশ করছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আবারও সতর্ক করে বলেছে, সেখানে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমিত সংখ্যক সহায়তার বড় অংশই ইসরাইলি বাহিনীর সৃষ্ট নিরাপত্তা বিশৃঙ্খলার সুযোগে লুট হয়ে যাচ্ছেÍ যা পরিকল্পিত নৈরাজ্য ও দুর্ভিক্ষ তৈরির অংশ।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি ত্রাণের ট্রাক উল্টে ২০ জন নিহত হয়েছেন। খাবারের আশায় জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত লোকদের ভিড়ের মাঝে এটি উল্টে যায়।বুধবার (৬ আগস্ট) গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, গত রাতের দিকে ত্রাণ বহনকারী একটি ট্রাক উল্টে ২০ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। শত শত বেসামরিক মানুষ সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিল।হামাসের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েল ট্রাক চালকদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য অনিরাপদ পথ ব্যবহার করতে বাধ্য করছে। এর ফলে প্রায়শই মরিয়া ক্ষুধার্ত জনতা ট্রাকগুলোর কাছে ভিড় জমায়। এদিকে জর্ডান জানিয়েছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা বুধবার গাজাগামী ত্রাণের বহরে আক্রমণ করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে এটি দ্বিতীয় আক্রমণের ঘটনা। ইসরায়েল এসব আক্রমণ রোধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ।গাজা উপত্যকার ওপর পূর্ণমাত্রার পুনর্দখল অভিযান শুরু করার ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের মতে, এমন পদক্ষেপ ‘বিপজ্জনক’ এবং এটি দ্রুত বন্ধ না হলে আরও প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে চীনের জাতিসংঘ প্রতিনিধি গেং শুয়াং বলেন, “আমরা ইসরায়েলকে এমন বিপজ্জনক পদক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানাই।