ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

‘কক্সবাজার ভ্রমণের’ ব্যাখ্যা দিলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি- সংগৃহীত

কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ায় দল থেকে পাওয়া শোকজ নোটিশের জবাবে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর প্রেরিত চিঠির মাধ্যমে তিনি এই ব্যাখ্যা দেন।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট ) বিকালে  নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ।

তিনি দাবি করেন, ‘ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টি ছিল একান্ত ব্যক্তিগত। পূর্বনির্ধারিত কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি কিংবা দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত না থাকায় মানসিক প্রশান্তির জন্য ঘুরতে যান।’

নাসীরুদ্দীন জানান, ৪ আগস্ট রাতে দলের  দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার কোচিংয়ের একজন সহকর্মীর ফোন থেকে যোগাযোগ করে  জানান যে, তিনি তার স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন। নিজের মোবাইল ফোন পদযাত্রায় চুরি যাওয়ায় অন্যের ফোন ব্যবহার করেন তিনি। 

এ সময় পাটওয়ারী তাকে পরামর্শ দেন বিষয়টি দলের আহ্বায়ককে জানাতে। তখন হাসনাত জানান যে বিষয়টি জানাবেন এবং আমাকেও জানাতে বলেন, যার কারণে নিজেও একই রাতে পার্টি অফিসে গিয়ে আহ্বায়ককে অবহিত করি। পাশাপাশি সদস্য সচিবের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে এনসিপি থেকে তিনজন প্রতিনিধি থাকলেও তার কোনো দায়িত্ব নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রশান্তির অংশ হিসেবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।’

তবে এটি কেবল অবকাশ যাপন ছিল না বলেই দাবি করেন তিনি। ‘বরং সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’

এনসিপির এই নেতা শোকজের জবাবে আরও বলেন, কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে তারা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে কক্সবাজার গেছেন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই দাবি করেন তিনি।

পাটওয়ারী বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায় সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনো কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি; কিন্তু ঘুরতে আসলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোনো বার্তা আমাকে কখনো দল থেকে দেওয়া হয়নি।’

জবাবের শেষ অংশে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির আলোকে, আমি মনে করি শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়। আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব প্রদান করছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে।’

এর আগে গতকার বুধবার (৬ আগস্ট) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে নোটিশের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

পাঁচ শীর্ষ নেতা হলেন, এনসিপি মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে আপনি এবং দলের আরও চারজন কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজার গিয়েছেন। এই সফরসংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা ‘রাজনৈতিক পর্ষদ’-এর কাছে পূর্বে অবগত করা হয়নি।’

আরও বলা হয়েছে, ‘এ অবস্থায়, আপনার এই সিদ্ধান্তের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’