রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৬:৩৮ এএম

কবর খোঁড়ার মতো জায়গা নেই গাজায়

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৬:৩৮ এএম

কবর খোঁড়ার মতো জায়গা নেই গাজায়

গাজার প্রায় প্রতিটি কবরস্থানের চিত্র প্রায় একই রকম। ইসরায়েলি হামলায় চিরতরে হারিয়ে যাওয়া আপনজনদের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গার ব্যবস্থাও করতে পারেন না অনেকে। এ আক্ষেপ গাজার প্রায় প্রতিটি স্বজনহারা মানুষের মনে। গাজার একজন বলেন, ‘গতকাল এখানে আমার এক বন্ধুকে দাফন করেছি। এর এক দিনের মাথায় আবারও কবরটি খুঁড়তে হয়েছে আমরা চাচাতো ভাইকে দাফন করার জন্য। কারণ, কবর দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই এখানে।’ ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের কবর দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা পাচ্ছেন না নিহতের স্বজনরা।

বাধ্য হয়ে এক কবরে একাধিক মানুষকে দাফন করতে হচ্ছে তাদের। কবরস্থানে জায়গা না পেয়ে অনেক সময় রাস্তার ধারেই কবর দিতে হয়েছে অনেককে। এমনকি গণকবর দেওয়ার বিষয়টিও সাধারণ ঘটনায়ও পরিণত হয়েছে গাজায়। গাজা উপত্যকার ব্যস্ততম একটি কবরস্থানে প্রতিদিনই দাফন করা হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের। তবে এখানকার কবরের সংখ্যা সীমিত হলেও ফিলিস্তিনি মানুষের লাশের সারি দীর্ঘ। তাই উপায় না পেয়ে এক কবরেই একাধিক মানুষকে দাফন করতে হচ্ছে গাজাবাসীকে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

বিপুলসংখ্যক মানুষকে কবর দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গাও রাখেনি দখলদাররা। এরই মধ্যে উপত্যকাটির পূর্বাঞ্চলের বড় কবরস্থানগুলো ইসরায়েলিরা দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ ফিলিস্তিনিদের। স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত এখন আর কোনো ভালো কবরস্থান নেই। পূর্বাঞ্চলীয় ও শুজাইয়া কবরস্থান নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি দখলদাররা। প্রিয়জনদের দাফনে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কখনো কখনো ফুটপাতে বা রাস্তার পাশে আত্মীয়দের দাফন করতে বাধ্য হই। আজকাল কবরস্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন।’ এমনকি অনেক সময় কবরস্থানে জায়গা না পেয়ে রাস্তার ধারে কিংবা খোলা মাঠে সুবিধাজনক কোনো জায়গায় কবর দিতে হয় ফিলিস্তিনি মুসলিমদের। গাজায় বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রতিবারই একজনকে কবর দিতে অন্য আরেকজনের কবর খুঁড়তে হয়। কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই, কোনো কবরস্থান নেই।’

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে পশ্চিম তীরে একটি বসতি নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই প্রকল্পটির নাম ই-১ বসতি প্রকল্প। ফিলিস্তিনের বাসিন্দা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, এই প্রকল্পটি পশ্চিম তীরকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলবে। দখলদার দেশটি মনে করে, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে।

নেতানিয়াহু সরকারের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি ই-১ প্রকল্প নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে বলেন, প্রকল্পটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দেবে। স্বীকৃতি দেওয়ার মতো এখানে কিছুই নেই। কেউ যদি স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে, তারা আমাদের কাছ থেকে জবাব পেয়ে যাবে। ইসরায়েলি মন্ত্রীর ঘোষণাটি এমন সময় এলো, যখন অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডাসহ অনেক দেশ আগামী মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করছে।

পূর্ব জেরুজালেমে চলমান ই-১ প্রকল্পটি বিতর্কিত। প্রকল্পটি পশ্চিম তীরের প্রধান শহর রামাল্লা ও বেথেলহেমের মধ্যে সংযোগ ঘটাবে। এই প্রকল্পটি ফিলিস্তিনিদের চলার গতিপথ বদলে দেবে। বিভিন্ন শহরে যেতে হলে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে বাসিন্দাদের। মুখোমুখি হতে হবে একাধিক চেক পয়েন্টের। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় শুক্রবার জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিক থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত আড়াই মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় অন্তত ১ হাজার ৭৬০ জন নিহত হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত সংখ্যার তুলনায় এবারের প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা কয়েকশ বেশি। জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়। ফিলিস্তিনবিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়টি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৭ মে থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৭৬০ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ চাইতে গিয়ে নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৯৪ জনের মরদেহ গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) সাইটের আশপাশে এবং ত্রাণ সরবরাহ কনভয়ের পাশে আরও ৭৬৬ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নিহত হয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে।

গত ১ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ হাজার ৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ চাইতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছিল। এএফপি এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা প্রতিবেদনগুলো খতিয়ে দেখছে।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫১ জন নিহত হয়েছে।  আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩৬৯ জন।  এর মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ হাজার ৮২৭ জনে দাঁড়াল। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর বার্তা সংস্থা আনাদোলুর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,  গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ জন নিহত এবং ৩৬৯ জন আহত হয়েছে।  যার ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রণালয় অনাহার ও অপুষ্টির কারণে এক তরুণীর মৃত্যুর খবরও জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি অবরোধের ফলে সৃষ্ট অনাহারে মৃত্যুর মোট সংখ্যা এখন ২৪০ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৭টি শিশুও রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,  ইসরায়েলি বাহিনী মানবিক সাহায্য পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। 

গত এক দিনেই ১৭ জন নিহত এবং ২৫০ জন আহত হয়েছে। ২৭ মে থেকে মানবিক সাহায্য নিতে যাওয়া ১ হাজার ৮৯৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আর আহত হয়েছে ১৪ হাজার ১১৩ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখ-ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা। এদিন ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কথিত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে একযোগে নিন্দা জানিয়েছেন আরব ও ইসলামি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা ফিলিস্তিন ভূখ- বিভক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই নিন্দা জানান তারা। শনিবার (১৬ আগস্ট) যৌথ বিবৃতিতে ৩১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আরব লিগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) প্রধানরা এই নিন্দা জানান। সৌদি প্রেস এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিপরিষদের বক্তব্যÑ আন্তর্জাতিক আইনের এক নির্লজ্জ ও বিপজ্জনক লঙ্ঘন এবং এটি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!