পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টিপাত এবং মেঘ ভাঙনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়ায় এ আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) শনিবার জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়ায় আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪০ জনে দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে বুনের জেলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া গিলগিট-বালতিস্তানে কমপক্ষে ১২ জন এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও ঘটেছে। গত শুক্রবার ১৫ আগস্ট মেঘ ভাঙন ও সৃষ্ট বন্যায় এক দিনে ২০০ জনেরও বেশি প্রাণহানির খবর জানিয়েছিল খাইবার পাখতুনখোয়া কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে উদ্ধার অভিযানের সময় মোহমান্দে একটি প্রাদেশিক সরকারের হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে নিহত পাঁচজনের মধ্যে ক্রু সদস্যও রয়েছেন। ডনের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৮৪ জন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বুনার জেলার শাংলায় ৩৬ জন, মানসেহরা ২৩ জন, সোয়াত ২২ জন, বাজাউর ২১ জন, বটগ্রাম ১৫ জন, লোয়ার দির ৫ জন এবং অ্যাবোটাবাদে একটি শিশু ডুবে মারা গেছে।
এদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৬০ জন মারা গেছে এবং অন্তত ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়া আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গতকাল রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৯৪ জন মারা গেছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসির। ভারি বৃষ্টির কারণে জম্মু-কাশ্মীরের কিশতওয়ার জেলার চাসোতি শহরে বন্যা ও ভূমিধস হয়েছে। যাত্রাপথে অনেক তীর্থযাত্রী এখানে বিরতি নিয়ে থাকে।
কর্মকর্তারা বলেন, ‘বন্যায় তীর্থযাত্রীদের জন্য তৈরি কমিউনিটি কিচেন ও নিরাপত্তা পোস্ট ভেসে যায়। এটি ছিল মাচাইল মাতার মন্দিরগামী পথে বিরতির জায়গা।’ এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনেক তীর্থযাত্রী দুপুরের খাবারের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। তাদের প্রায় সবাই পানির স্রোতে ভেসে গেছেন।’ হিমালয়ের উঁচু ভূমিতে অবস্থিত মাচাইল মাতার মন্দির তীর্থযাত্রীদের একটি জনপ্রিয় স্থান। এ মন্দিরে যেতে তীর্থযাত্রীদের চাসোতি থেকে হাঁটতে হয়। সেখান থেকে যানবাহন যাওয়ার আর কোনো সড়ক নেই।
এ বৃষ্টিপাত ছিল ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘভাঙা বৃষ্টির মতো প্রবল। মাত্র এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের (প্রায় ৪ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টি হয়। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, মানব সৃষ্ট জলবায়ু সংকট হিমালয় অঞ্চলে মৌসুমি বন্যার ঘনত্ব ও তীব্রতা এ বছর আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান, ভারত শাসিত কাশ্মীর ও নেপালে হঠাৎ সৃষ্ট বন্যায় তিন শতাধিক মানুষ মারা গেছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও বহু মানুষ। খবর সিএনএনের। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
আলাদাভাবে, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ত্রাণ তৎপরতার সময় একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলে পাঁচ ক্রু সদস্য নিহত হন। ভারত শাসিত কাশ্মীরে শুক্রবার চাশোটি শহরে অন্তত ৬০ জন মারা গেছে, নিখোঁজ আরও দুই শতাধিক। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জনপ্রিয় এই গন্তব্যে প্রবল বৃষ্টিপাতের পর এ ঘটনা ঘটে বলে রয়টার্স জানায়। আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ে নেপালে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ১২১ জন আহত হয়েছে বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। এ ছাড়া পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে অন্তত আটজন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একই পরিবারের ছয়জন নিজেদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারায়।
উত্তর পাকিস্তানের সালারজাই এলাকায় বসবাসকারী ফারহাদ আলি বলেন, ‘বৃষ্টি যখন তীব্র হলো, মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হয়েছেÑ পুরো জমি কেঁপে উঠছিল। ঝোড়ো বৃষ্টির মধ্যে আমার পরিবারের সবাই বাইরে বেরিয়ে এলো, আমরা দেখলাম কাদা আর বিশাল পাথর আমাদের বাড়ির পাশের ঝরনাধারা বেয়ে নেমে আসছে। মনে হচ্ছিল কিয়ামত নেমে এসেছে, পৃথিবীর শেষ দিনের মতো দৃশ্য।’ ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বুধবার জানিয়েছিল, এ বৃষ্টিপাত ছিল ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘভাঙা বৃষ্টির মতো প্রবল। মাত্র এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের (প্রায় ৪ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টি হয়। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু সংকট হিমালয় অঞ্চলে মৌসুমি বন্যার ঘনত্ব ও তীব্রতা এ বছর আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে বন্ধুদেশ তুরস্ক।
বলেছে, বন্যার কারণে বহু প্রাণহানির ঘটনায় তুরস্ক ‘গভীরভাবে মর্মাহত’। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে শনিবার ১৬ আগস্ট এ খবর জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৩ জন। বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উত্তর-পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন