ফিলিস্তিনের গাজা নগরে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রোমভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তা পর্যবেক্ষণবিষয়ক প্যানেল আইপিসির প্রতিবেদনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে এমন ঘটনা এটিই প্রথম।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গাজার পাঁচ লাখ মানুষ ভয়াবহ রকমের অনাহারে ভুগছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, এ দুর্ভিক্ষ পুরোপুরি ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের পরিকল্পিত বাধার কারণে ফিলিস্তিনি অঞ্চলটিতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যায়নি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের দাবি, ‘গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।’
ইসরায়েল আইপিসি প্যানেলের প্রতিবেদনটির তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, একটি স্বার্থান্বেষী সংস্থার মাধ্যমে হামাসের প্রচার করা মিথ্যা তথ্যের ওপর ভর করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির মানবিক পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে বলে কয়েক মাস ধরে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সতর্ক করে আসছিল।
গতকালের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে আইপিসি বলেছে, ১৫ আগস্ট নাগাদ গাজা উপত্যকার গাজা নগরে দুর্ভিক্ষ (আইপিসি ধাপ ৫) নিশ্চিত হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক প্রমাণ আছে। গাজা নগরী গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত।
আইপিসির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, গাজা নগর এখন খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সূচকে পঞ্চম ধাপে আছে। এটি এ সূচকের সবচেয়ে মারাত্মক ও সর্বোচ্চ স্তর।
আইপিসি তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, যখন পরিবারগুলো সব ধরনের চেষ্টা করেও খাবার বা অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পারে না, তখনই আসে পঞ্চম ধাপ।
আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে আইপিসি। এতে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি অঞ্চলের ওপর দুর্ভিক্ষের প্রভাব পড়বে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘২২ মাসের অবিরাম সংঘাতে গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এখন অনাহার, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর মতো ভয়াবহ সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।’
গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৪১ হাজারে পৌঁছাবে। অর্থাৎ তখন গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের ওপর এ দুর্ভিক্ষের প্রভাব পড়বে।
আইপিসি বলেছে, তারা গাজা উপত্যকায় অনাহারের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা শুরুর পর থেকে গাজায় ক্ষুধার পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যকার সংঘাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও পালটেছে। এ সংঘাতকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক কিংবা বাণিজ্যিক কোনোভাবেই খাবার সরবরাহ করা যায়নি।
মার্চের শুরুর দিকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে ইসরায়েল। এতে খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র ঘাটতি দেখা দেয়। মে মাসের শেষদিকে সীমিত পরিমাণে সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দেওয়া হলেও ঘাটতি থেকে গেছে।
আসন্ন সংকট নিয়ে সতর্ক করার জন্য জাতিসংঘ নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের একটি জোট হচ্ছে আইপিসি। তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে আইপিসি দুর্ভিক্ষকে সংজ্ঞায়িত করে থাকে।
প্রথমত, কমপক্ষে ২০ শতাংশ পরিবার, অর্থাৎ প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একটি তীব্র খাদ্যঘাটতিতে থাকবে।
দ্বিতীয়ত, ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বা প্রতি ৩ শিশুর মধ্যে ১টি তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে।
তৃতীয়ত, প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের মধ্যে সরাসরি ক্ষুধায় বা অপুষ্টিতে বা রোগের কারণে কমপক্ষে দুজনের মৃত্যু হবে।