ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার দুই বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে অবশেষে শান্তি ফিরছে। প্রশ্ন হলো, যে হামাসকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে এ নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, সেটার ফলাফল কী? হামাস কতটা শক্তি হারিয়েছে বা ধ্বংসের কতটা কাছে গেল আর ইসরায়েলও বা কী পেল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই বছরে হামাসের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। সংগঠন ভেঙে গেছে। নেতৃত্ব ভেঙে পড়েছে। কিন্তু হামাস সম্পূর্ণ ক্ষমতা হারিয়েছে, এমন মনে করার কারণ নেই। যেকোনো সময় হামাস নতুন করে সংঘবদ্ধ হতে পারে। নতুন নেতৃত্ব তৈরি হতে পারে এবং নতুন করে তারা শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। তবে ইসরায়েলের হাতে যে অস্ত্র আছে, হামাসের হাতে সেই পরিমাণ অস্ত্র নেই বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মারিনা মিরন ডয়েচে ভেলকে জানান, ‘হামাস প্রচুর ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা এখনো তাদের আছে। গাজায় তাদের প্রভাবও যথেষ্ট।’
দুই বছর আগে হামাস যখন ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়েছিল এবং প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তখন তাদের যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ২৫ থেকে ৩০ হাজার। গত দুই বছরে ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাসের অন্তত ১৭ থেকে ২৩ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল এই দাবির সপক্ষে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ দেয়নি।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৫০০ হামাস যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ইসরায়েলের সেনা বাহিনীর কাছে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত নথিভুক্ত নিহত হামাস যোদ্ধার নামের সংখ্যা ৮ হাজার ৯০০। এদিকে গাজায় নিহতের ৮০ শতাংশ মানুষ বেসামরিক নাগরিক। যার মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত দুই বছরে হামাস অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার নতুন যোদ্ধা নিয়োগ করেছে। ফলে হামাস সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এবং অকেজো হয়ে গেছে, এমনটা মনে করার কারণ নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েলের প্রাপ্তি কী, সেটা নিয়েও আছে প্রশ্ন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছিলেন, দুটি লক্ষ্য নিয়ে তিনি যুদ্ধে নেমেছেন। এক, সব পণবন্দিকে মুক্ত করবেন, দুই, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করবেন। দুই বছর পর দুটি লক্ষ্যের কোনোটিই তিনি পুরোপুরি পূরণ করতে পারেননি। ২৫১ জন পণবন্দির মধ্যে ১৪৮ জন জীবন্ত অবস্থায় ইসরায়েল ফিরেছেন। বেশ কিছু মৃত পণবন্দির দেহও ইসরায়েলে এসেছে। এখনো ৪৮ জন পণবন্দি হামাসের কাছে আছে। তার মধ্যে ২০ জন বেঁচে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া এই লড়াই শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ ছিল না, ইয়েমেনে হুতি, লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গেও হয়েছে। ইসরায়েলের বিমানবাহিনী ইরানে পরমাণু প্রকল্পের ওপর লাগাতার বোমাবর্ষণ করেছে। সিরিয়ায় বাশার আসাদের শাসন শেষ হওয়ায় ইরান দীর্ঘদিনের এক মিত্রকে হারিয়েছে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নারারাল্লাও ইসরায়েলের আক্রমণে মারা গেছেন।
গত দুই বছরে ইসরায়েলের সেনা গাজায় হাসপাতালে, ত্রাণশিবিরে, স্কুলে বোমা ফেলেছে, ফলে প্রচুর নারী, শিশু মারা গেছেন। প্রচুর সাংবাদিক, ত্রাণকর্মী, উদ্ধারকারী কর্মীও মারা গেছেন। ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর জেনোসাইড স্কলারস, বি সেলেম ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের মতো ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েল গণহত্যা করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন