শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০২:৪৬ এএম

স্থবির সাংস্কৃতিক অঙ্গন

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০২:৪৬ এএম

স্থবির সাংস্কৃতিক অঙ্গন

  • শিল্পীদের উজ্জ্বল দিনে মেঘের ছায়া
  • অভিভাবকহীন শিল্পকলা
  • স্পন্সর সংকট
  • রেভিনিউ তলানিতে
  • কাজ নেই চরিত্রাভিনয় শিল্পীদের
  • নতুন সিনেমারখরা

গভীর সংকটে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বিনোদনের সব মাধ্যম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ২০২০ সালে আসা বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণে থমকে গিয়েছিল দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। সেই দূর সময় পেরিয়ে বিনোদন দুনিয়া চেনা ছন্দে ফিরে। ঘুরে দাঁড়ায় মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটক, সংগীত এবং সিনেমা অঙ্গন। হলবিমুখ দর্শক পুনরায় পরিবার নিয়ে হলে ফিরে। বেশ কয়েকটি সিনেমা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেন হল মালিকরা। যদিও ঢাকাই সিনেমা এখন ঈদকেন্দ্রিক। স্বাভাবিক সময়ে সিনেমা মুক্তি পেলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানে না। যে কারণে প্রযোজক ও পরিচালকরা বেছে নিয়েছেন দুই ঈদ।


তবে পট পরিবর্তনের পর প্রায় এক বছর ধরে নেই নতুন সিনেমা। একসময় দিন-রাত শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে বিএফডিসি। শুটিং হয় না বললেই চলে। বেতন না পেয়ে প্রায়ই আন্দোলন করতে দেখা যায় এফডিসির কর্মচারীদের। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়ায় শিল্পীরাও এফডিসি থেকে দূরে সরে গেছেন। সম্প্রতি রূপালী বাংলাদেশকে অভিনেতা রুবেল জানান, এফডিসিতে শুটিং না থাকায় আগের মতো এক সময়ের প্রিয় কর্মস্থলে এখন আর যান না। কারণ, শূন্য এফডিসি দেখলে তার কষ্ট হয়।


এখন মঞ্চে সেভাবে আলো জ্বলছে না। গান হলেও আগের মতো ভিউ নেই। কমেছে নাটকের সংখ্যা। বিগত সময়ে ঈদকে টার্গেট করে পাঁচ থেকে ছয়শো নাটক নির্মাণ হলেও সর্বশেষ কোরবানির ঈদে ১২৪টির মতো নাটক প্রচার হয়েছে বলে জানা গেছে। তার মধ্যে কিছু নাটক পূর্বের নির্মিত। অনেক নাটক স্পন্সর সংকটে প্রচারের আলোয় আসেনি। কমে গেছে নতুন নাটক নির্মাণ।


মূলত গত বছরের পট পরিবর্তনের পর থেকে দেশের চলমান নানা ইস্যুর কারণে কাজ কমে গেছে বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার বলছেন, স্পন্সরশিপ সংকট ও অনলাইন মাধ্যমে (ফেসবুক- ইউটিউবে) আয়ের রেশিও একেবারে তলানিতে নেমে আসাতেই এই কাজ কমে যাওয়া। টেলিভিশনের পর অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য নাটক নির্মাণেও পড়েছে ভাটা।


কয়েক মাস আগেও ছোট ও বড় পর্দার পরিচিত মুখ অভিনেত্রী মৌ শিখার জীবন ছিল কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ। এই অভিনেত্রী মাসে প্রায় ২০ দিন তিনি শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অভিনয়ই ছিল তার জীবনের আনন্দ ও জীবিকার উৎস। কিন্তু এখন তার ওই উজ্জ্বল দিনগুলোতে মেঘের ছায়া। আড়াই মাস ধরে কাজের অভাব তাকে বিমর্ষ করেছে। যে কারণে এখন নিজেকে অভিনেত্রী ভাবতেই লজ্জা লাগছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন।


২৫ বছর ধরে নিয়মিত কাজ করে যাওয়া একজন শিল্পী কেন হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়বেন? একই সম্মানী, একই পরিমাণ কাজ করেও কেন তার পেশাগত অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে? নাটক ও সিনেমার প্রযোজনা হঠাৎ কেন এত কমে গেল? এর কারণ কি শুধু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, নাকি আরও গভীর কিছু?


পট পরির্বতনের পর নিয়মিত গান তৈরি হলেও কমে গেছে মঞ্চ নাটকের সংখ্যা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে অভিভাবকহীন শিল্পকলা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নানামুখী আন্দোলন, নতুন নাটক মঞ্চায়নে অনাগ্রহ, পর্যাপ্ত মঞ্চের অভাব, মৌলিক পা-ুলিপির অভাব, মিলনায়তন সংকট, হল বরাদ্দ নিয়ে জটিলতাসহ নানারকম সমস্যা। যদিও এখন কিছু নাট্যদল নতুন নাটক মঞ্চে আনার চেষ্টা করছে এবং কিছু পুরোনো নাটকও মঞ্চস্থ হচ্ছে। ধীরে ধীরে এ স্থবিরতা কাটানোর চেষ্টা চলছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিল্পকলায় যে কয়েকটি মঞ্চনাটক চলমান সেগুলো মূলত শিল্পকলার নিজস্ব প্রযোজনা। সেটাও আবার ৮-১০ দিনের গ্যাপ দিয়ে। এর মধ্যে মাঝেমধ্যে বাইরের এক-দুটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়েছে। গত ২ মাস ধরে যেসব শিল্পকলায় নিজস্ব প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়েছে সেগুলো জুলাই অনুদানের। সেগুলো ছাড়া তেমন করে প্রযোজনা নেই শিল্পকলার মঞ্চে। ফলে শিল্পকলার কর্মযজ্ঞ হয়ে পড়েছে স্থবির। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় ভাবা হচ্ছে শিল্পকলার মহাপরিচালক পদ শূন্যতা।


কোরবানির ঈদের পর গত ১৯ জুলাই মাত্র চারটি মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পায় ইরফান সাজ্জাদ অভিনীত ‘আলী’ নামের সিনেমাটি। যদিও সেভাবে সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে পারেনি। এরই মধ্যে সিনেমাটি সিনেপ্লেক্স থেকে নেমে গেছে। ফের কবে নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে তারও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। যে কারণে এখন অনেক হলে পুরোনো সিনেমাই শেষ ভরসা। তার মধ্যে মেরামতের জন্য বন্ধ আছে মধুমিতা সিনেমা হল। নতুন সিনেমাখরায় হল মালিকরা।


নাটকপাড়ার অনেকের হাতেই এখন কাজ নেই। এরই মধ্যে দুই মাসের বিশ্রাম নেওয়ার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান। যদিও সূত্রের খবর, তার হাতে নতুন কেনো কাজ নেই। যে কারণে তিনি ছুটির মেজাজে রয়েছেন। পট পরিবর্তনের পর থেকে হাতে তেমন একটা কাজ নেই তৌসিফ মাহবুব, মুশফিক ফারহান, রুকাইয়া জাহান চমকসহ অনেকের। যদিও এ নিয়ে তারা সরাসরি কিছু বলছেন না। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।


এদিকে, সম্প্রতি অবকাশ যাপনে কানাডা গিয়েছেন ছোট পর্দার চলতি সময়ের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। সম্প্রতি ছুটি শেষে দেশে ফিরেছেন আরেক অভিনেত্রী কেয়া পায়েল। তবে তাকে নতুন নাটকের শুটিংয়ে এখনো দেখা যায়নি। অনেক দিন ধরেই লাইট, ক্যামেরা আর অ্যাকশন থেকে দূরে আছেন তিনি। চলতি সপ্তাহে মাস দুয়েকের জন্য স্ত্রীসহ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের।


চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দীর্ঘ সাত মাসের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ছোট পর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা নিলয় আলমগীর। উদ্দেশ্য গ্রিন কার্ড। যে কারণে সহসাই দেশে ফিরছেন না তিনি। তাই আগামী কয়েক মাস নতুন নাটকে পাওয়া যাবে না তাদের। পুরো সময়টা তাদের নির্মাতারাও থাকবেন কাজহীন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন শাকিব খান ও শবনম ইয়াসমিন বুবলী। শাকিবের হাতে আসন্ন ঈদের একটি নতুন সিনেমা থাকলেও বুবলীর হাতে নেই কেনো নতুন সিনেমা।


চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শাহীন সুমন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের সিনেমা এখন ঈদনির্ভর। ঈদ ছাড়া সিনেমাই নির্মাণ ও মুক্তি পায় না। বাকি দশ মাস হল ফাঁকা থাকে। আমাদের প্রযোজক সংকট রয়েছে। এবার তো অনুদানে বাণিজ্যিক সিনেমার নির্মাতাদের গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া চলচ্চিত্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’


নাট্যাঙ্গনের বর্তমান হালচাল নিয়ে পরিচালক সৈয়দ শাকিল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘পট পরিবর্তনের পর নাটক ইন্ডাস্ট্রি থমকে গেছে। অনেকের হাতেই এখন কাজ নেই। রয়েছে স্পন্সর সংকট। আগে এক ঈদের জন্য প্রায় ছয়শো নাটক নির্মিত হতো। তবে ৫ আগস্টের পর তা নেমে দাঁড়িয়েছে দেড়শোর ঘরে। গত ঈদে মাত্র ১২৪টি নাটক প্রচার হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি নাটক ছিল অনেক আগের। প্রযোজক সমস্যা, স্পন্সর জটিলতার পাশাপাশি ফেসবুক ও ইউটিউবের ব্যবসা পড়ে গেছে। সবমিলিয়ে সময়টা অনুকূলে নেই। এ থেকে উত্তরণ হতে হলে নির্বাচিত সরকার লাগবে। তাও এর রেশ কাটিয়ে উঠতে কম করে তিন বছর লেগে যাবে।’


চরিত্রাভিনেতা জয় রাজ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে চরিত্র-অভিনয় শিল্পীদের জীবন-জীবিকার অবস্থা এখন গুরুচরণ। আমাদের মতো চরিত্রাভিনেতার কাজের সংকট যাচ্ছে। আমাদের চরিত্র কমে গেছে। বছরে দু-একটা একক নাটকে কাজ করতে পারি। ধারাবাহিক ছাড়া আমাদের কাজই নেই।’


তবে ভিন্ন কথা বলছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী স্বর্ণলতা দেবনাথ। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাজের ধরনের একটা পরিবর্তন এসেছে। তবে আমি মনে করছি না কাজ কমেছে। আগে যেসব শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতাম তারা এখন কাজ করছে না বা নেই। আগে যে ধারাবাহিকগুলো চলছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে কিছু ধারাবাহিক প্রচারে এসেছে। আমি যেহেতু নিয়মিত ধারাবাহিকে কাজ করি সেই জায়গা থেকে বলতে পারি কাজ আগের মতোই আছে। আগে সাতটি ধারাবাহিক করতাম এখন পাঁচটি করছি। আর এই বছর আমি অন্যান্য বছর থেকে কাজ কম করেছি। কারণ এখন কাজের সংখ্যা না বাড়িয়ে মানের দিকে বেশি নজর দিয়েছি।’


নাটক সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, নাটকপাড়ায় খারাপ সময় যাচ্ছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো স্পন্সর সংকটে ভুগছে, পরিচালকদের অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না, শিল্পীদেরও নাটকের সংখ্যা কমেছে। শিল্পীদের হাতে আগের মতো কাজ নেই এটি এরই মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন। অভিনেত্রী মৌ শিখার ফেসবুক পোস্ট সেটি আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।


ঈদের পর থেকে দর্শকপ্রিয় অভিনয়শিল্পীদের অনেককেই নিয়মিত কাজে ফিরতে দেখা যায়নি। নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজ কমে যাওয়ায় শিল্পীদের অনেকে দেশের বাইরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ কাজের জন্য অপেক্ষা করছেন।


এ নিয়ে কথা হয় অভিনেতা জামিল হোসেনের সঙ্গে। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগের চেয়ে ব্যস্ততা কমেছে। আগে যেখানে মাসে ১৫ দিন কাজ করতাম সেটা এখন দশের মধ্যে নেমে এসেছে। অনেকের হাতেই কাজ নেই। কেউ বলছেন, কেউ বলতে পারছেন না। তবে সংকট আছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চলমান না থাকার কারণে অনেক প্রযোজক এখন আগের মতো পৃষ্ঠপোষকতা করছেন না। স্পন্সর সংকট তো রয়েছেই।’


অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু বলেন, ‘করোনার চেয়ে খারাপ সময় আমরা পার করছি। সে সময় আমরা সাহায্য সহযোগিতা করতে পেরেছি। কিন্তু এখন সেই পরিবেশটাও নেই। অনেক শিল্পীই মুখ খুলে তার কথাটা বলতে পারছেন না। বিশেষ করে যারা নাটকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে জীবন যাপন করতেন তারা এখন খুব খারাপ সময় পার করছেন।’


পট পরিবর্তনের পর কাজ কমেছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন যেসব নাটক নির্মিত হচ্ছে সেখানে পার্শ্বচরিত্র নেই বললেই চলে। এখন কাজও অনেক কম হচ্ছে। আগে কাজের বুয়া, মা, ভাই-ভাবী পার্শ্বচরিত্র যারা করতেন, তাদের হাতে এখন কাজ নেই। সম্প্রতি শিখা মৌ জানিয়েছেন, মাত্র ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন ২০ বছর ধরে। তারপরও তার হাতে কাজ নেই গত আড়াই মাস ধরে। নাটকের বাজেট এখন নায়ক-নায়িকা নির্ভর, যে কারণে এখন আর পার্শ্বচরিত্র থাকে না। এ থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।’


স্পন্সর সংকট প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা শামীম জামান। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘টেলিভিশন নাটকে এখন স্পন্সর নেই। ফেসবুক ও ইউটিউবের ভিউ পরে গেছে। আয়ের রেশিও একেবারে তলানিতে। সবমিলিয়ে আমরা অস্থির সময় পার করছি। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।’


আগে প্রতি মাসে দুটি কনটেন্ট নিজের প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দিলেও এখন তা কমিয়ে একটি কনটেন্ট মুক্তি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নির্মাতা মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল রাজ। সেই সঙ্গে শিল্পীদের কাজ কমে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করলেন এই প্রযোজক-নির্মাতা। তার ভাষ্য, ‘কাজ কমে যাওয়ার বিষয়টি কেবল শিল্পীদের ক্ষেত্রে নয় বরং বাংলাদেশের অনেক সেক্টরেই। আগে প্রতি মাসে আমার প্ল্যাটফর্ম থেকে দুটি নাটক মুক্তি দিতাম, গত দুই মাস হলো একটি মুক্তি দিচ্ছি। এর কারণ হিসেবে আমি দুটি বিষয় বলব। এক. ফেসবুক ও ইউটিউবে রেভিনিউ কমে গেছে। দুই. আগের তুলনায় আমরা স্পন্সর পাচ্ছি না। এর বাইরে আমি কোনো কারণ দেখি না।’


শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার দুটি শুটিং হাউজ আছে। এক বছর আগেও এটি মাসে ২৫ দিনের মতো ভাড়া যেত। কিন্তু এখন সেটি অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রায় প্রতি মাসেই লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।’


ছোট পর্দায় এখন সমানতালে কাজ করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চরিত্রাভিনেতা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি মনে করি না কাজ কমেছে। যারা ভালো অভিনয় করে তারা ঠিকই নিয়মিত কাজ করছেন। আমি নিজেও বেশ ব্যস্ত সময় পার করছি।’


নাট্য প্রযোজক নেতা সাজু মুনতাসির বলেন, ‘কাজ কমেছে ঠিক তা নয়। কাজ হচ্ছে তবে চ্যানেলগুলো খুব বেশি বিজ্ঞাপন পাচ্ছে না। দেশের পরিস্থিতির কারণে স্পন্সর সংকট রয়েছে। এ ছাড়া ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে আয়ও কমেছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন কোন দিকে যায়, সেটির ওপর নির্ভর করে সামনে লগ্নি হবে। এটি কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।’


টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদে গত চার বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম নাটক প্রচার হয়েছে। শুধু ঈদেই নয়, ঈদের পরও নাটক নির্মাণের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। যে কারণে বেশির ভাগ শিল্পী ও কলাকুশলীই শুটিং থেকে দূরে। নাটক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বেকার হয়ে পড়ছেন বলেও মন্তব্য প্রতিষ্ঠানটির।


দর্শক যাদের নাটক বেশি দেখতেন তারাও এখন অনিয়মিত। বিশেষ করে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজাবীন চৌধুরী, মীর সাব্বির, তারিন জাহান, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, তাসনিয়া ফারিণ, সাবিলা নূরের মতো শিল্পীরা এখন ছোট পর্দায় কাজ করছেন না। ফলে নাটকের চাহিদাও কমেছে। যদিও দু-একজন শিল্পী পট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন।
এছাড়া ঈদের পর নিয়মিত অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে নিলয় আলমগীর, তৌসিফ মাহবুব, মুশফিক আর ফারহান, ফারহান আহমেদ জোভান, কেয়া পায়েল, তানিয়া বৃষ্টি, তটিনী, নাজনীন নাহার নীহাসহ একাধিক শিল্পীকে নিয়মিত কাজে ফিরতে দেখা যায়নি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!