শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আনন্দ আড্ডা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ১১:১১ পিএম

বছরজুড়ে অন্ধকার

বন্ধ হচ্ছে ৩ হল

আনন্দ আড্ডা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ১১:১১ পিএম

বন্ধ হচ্ছে ৩ হল

দেশে সিনেমা হল ব্যবসা এখন প্রায় পুরোপুরি ‘ঈদনির্ভর’। বছরের বাকি সময় নামেমাত্র নতুন সিনেমা মুক্তি পায়। সেসব সিনেমা ঘিরে দর্শকদের থাকে অনাগ্রহ।

যে কারণে বছরের বাকি সময়ে দর্শক সংকটে হলের খরচ তুলতেই হিমশিম খান হল মালিকরা। করোনা মহামারি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল বাংলা সিনেমা। কিন্তু পট পরিবর্তনের পর ফের দেশের সিনেমা শিল্পে দেখা দেয় অশনিসংকেত! দেশের সিনেমা হল আবারও বড় ধাক্কায় পড়ছে।

ঈদ ছাড়া সারা বছর দর্শক টানতে না পারায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। সবচেয়ে ভুক্তভোগী সিঙ্গেল স্ক্রিন! কিন্তু এবার সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম সিনেমা হল ‘মণিহার’। যশোরে অবস্থিত হলটিকে একসময় মনে করা হতো এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। নব্বইয়ের দশকে যখন বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ; তখন মণিহারও ছিল সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। রাজধানী থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পর্যন্ত ছুটে যেতেন মণিহারের পর্দায় নিজের সিনেমার দেখতে। কিন্তু বাণিজ্যিক সিনেমার অভাবে হলটি এখন বন্ধ হওয়ার পথে।

হল কর্তৃপক্ষ জানান, দর্শক চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসাসফল সিনেমা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্রমাগত গুনতে হচ্ছে লোকসান। এমন অবস্থায় হলের কার্যক্রম বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। যেকোনো সময়ে হলটি বন্ধ হয়ে যাবে।
এ খবর প্রকাশ্যে আসতেই জানা যায়, একই পথে দুটি আধুনিক সিনেমা হল— ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের লায়নস সিনেমাস ও বগুড়ার মধুবন। একসময় যেগুলোকে নতুন প্রজন্মের বিনোদনের ভরসা বলা হচ্ছিল, আজ সেগুলোও দর্শক সংকটে টিকে থাকতে পারছে না।

ঢাকার বাইরের অত্যন্ত সু-সজ্জিত সিনেমা হল হচ্ছে বগুড়া শহরের পৌরসভা এলাকার মধুবন সিনেপ্লেক্স। ২০২১ সালে আধুনিকভাবে মধুবন চালু করা হলেও গতকাল থেকে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে আধুনিক এই প্রেক্ষাগৃহটি।

মধুবন সিনেমা হলের মালিক রোকনুজ্জামান ইউনূস রূপালী বাংলাদেশকে আক্ষেপ করে বলেন, ‘মধুবন একেবারে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে হল ভেঙে কি বানাবো সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি। তবে হলটি ভাঙা হচ্ছে সেটি নিশ্চিত করে বলছি। কারণ, মাসের পর মাস এত লস খেয়েছি যে এই ভার বইতে পারছি না। সর্বশেষ ‘নন্দিনী’ সিনেমা চালিয়েছি কিন্তু দর্শক পাইনি। সিনেমা চালালে যে খরচ হয়, সেটাও তুলতে পারি না। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ আছে। সিনেমা চালিয়ে ব্যবসা না হলে কিভাবে এই খরচ তুলব? আমার ইচ্ছে একেবারে বন্ধ থাকবে। তবুও দেখব নির্বাচিত সরকার আসা পর্যন্ত। তার আগে আর চালু করব না। ওদিকে মনিহার বন্ধ হচ্ছে, গতকাল থেকে আমি মধুবন বন্ধ করে দিচ্ছি। আগামী মাসে লায়ন সিনেমাও বন্ধ করে দেবে। আগামী সপ্তাহে আমরা প্রেস কনফারেন্স করে জানাব।’

রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ‘আমাদের দেশের সিনেমা যেখানে ঈদ ছাড়া দর্শক টানতে পারছে না। তাই আমরা চেয়েছিলাম বাইরের সিনেমা দিয়ে সিনেমা হল সচল রাখব। বিদেশি ভালো সিনেমাগুলো চালাতে পারলে দর্শক হলে আসা অব্যাহত রাখত, সেই প্রতিযোগিতায় আমাদের সিনেমাগুলোও ভালো চলতে পারতো। কিন্তু ইন্ডিয়াসহ অন্যান্য সিনেমা আসা একেবারে বন্ধ। এই অবস্থায় আর লোকসান টানা সম্ভব না।’

মধুবন সিনেপ্লেক্সের আসন সংখ্যা ছিল ৩৩৬টি। নির্মাণের পর এই হলেই ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘প্রিয়তমা’, ‘তুফান’ ও ‘বরবাদ’ সিনেমাগুলো রমরমা ব্যবসা করে। এমনকি পরিবার নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শকদের জন্যেও সর্বশেষ ‘বরবাদ’ সিনেমায় একাধিক দিন ‘মিড নাইট’ চলেছিল মধুবনে। 

রাজধানী ঢাকার অদূরে সবচেয়ে আধুনিক ও মান সম্পন্ন সিনেমা হল বলা হয় লায়ন সিনেমাস-কে, চারটি স্ক্রিন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ২০২২ সালে। লায়ন সিনেমাস-এর কর্ণধার মির্জা আবদুল খালেক হতাশা আর আক্ষেপ ঝরে বলেন, ‘কবে থেকে সিনেমা হলটি বন্ধ করব, সে অপেক্ষায় আছি। বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর তো কোনো উপায় দেখছি না। সিনেমা হলের কোনো ভবিষ্যৎ দেখছি না।’

লায়ন একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে মি. খালেক বলেন, ‘গত ঈদের পর থেকে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা করে লস দিয়ে যাচ্ছি। আর কত টানা যাবে, আর টানতে পারব না। এসব কারণে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি যে, লায়ন একেবারে বন্ধ করে দেব।’

তবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও নিজেদের সংকট নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘এই সেক্টর (সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি) নিয়ে যে কেউ আলোচনা করবে, সেটার প্রতি কারো কোনো আগ্রহই নাই। চব্বিশের ৫ আগস্ট পরবর্তী আমরা হল মালিকরা কয়েক দফায় তথ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি। এসব দেখে মনে হয়েছে, এই সেক্টর থাকুক বা না থাকুক- এটা নিয়ে কারো কিছু আসে যায় না।’

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে লায়ন বন্ধ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লায়ন বন্ধের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কাগুজে অনেক বিষয় আছে এটা বন্ধ করতে, সেগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি। বড় করে প্রেস কনফারেন্স করে লায়ন বন্ধের ঘোষণা দেব।’

বলা দরকার, নব্বই দশকের শেষভাগ পর্যন্ত দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩০০টির ওপরে। এখন কমতে কমতে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫টিতে। এর মধ্যে সবগুলো চালু নেই। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে মধুমিতা সিনেমা হল। নতুন করে বন্ধ হতে যাচ্ছে আরও তিনটি হল। সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেলে এই অঙ্গন সামনে এগিয়ে যাওয়া খুব কষ্টকর বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এমন সংকটের উত্তরণের একমাত্র উপায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!