ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

টিনটিন হোম

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

ছোট্ট একটি গ্রামে থাকত মীম নামে একটি মেয়ে। বয়স মাত্র আট কি দশ। সে খুবই চুপচাপ, মায়াবতী, আর একটু একাকী প্রকৃতির। মা-বাবা ব্যস্ত থাকত মাঠে কাজ নিয়ে, তার ভাইবোন কেউ ছিল না। তাই মীম প্রায়ই একা বসে থাকত জানালার পাশে।

একদিন হঠাৎ সন্ধ্যার সময় মীমের ঘরের দরজায় কান্নার মতো শব্দ শোনা গেল। মীম গিয়ে দেখে একখানা ছোট্ট, কাঁপতে থাকা বিড়ালছানা দাঁড়িয়ে আছে। চোখে জল, গায়ে ধুলো, আর ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে। মীম একটুও না ভেবে তাকে কোলে তুলে নেয়। আদর করে। বিড়ালটিও আদর পেয়ে গা হেলিয়ে ঘুমের ভান করে। মীম বলে- ‘তোমার নাম আমি রাখব... টিনটিন!’

সেই থেকেই শুরু হলো টিনটিন আর মীমের বন্ধুত্ব। সকাল-বিকেল মীম যেখানে যেত, টিনটিনও সঙ্গে যেত। টিনটিন মীমকে হাসাত, তার দুঃখে পাশে বসত, রাতে তার পাশে ঘুমাত। মীমও টিনটিনকে খাবার দিত। টিনটিনও খেয়ে ফেলত। একদিন মীমের মা দেখে ফেলে। টিনটিনকে বাইরে রেখে আসে মীম অনেক কান্নাকাটি করে। বাড়ির বাইরে টিনটিনও মেউ মেউ করতে থাকে। মীমের মা পরে টিনটিনকে বাসায় এনে রাখে। সেই থেকে শুরু হলো টিনটিনের সঙ্গে মীমের বন্ধুত্ব। টিনটিনকে দেখতে মীমের অনেক বন্ধুও আসে প্রতিদিন। একদিন মীম অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বর হয়। মা-বাবা ডাক্তার ডাকেন। কিন্তু মীম একটুও হাসে না। চোখে জল।

টিনটিন তখন কী করল জান?

মীমের সামনে গিয়ে টিনটিন নাচতে শুরু করে। টিনটিন দৌড়াদৌরি করতে থাকে।

মীম দেখে হেসে উঠে, টিনটিন মেউ মেউ করতে থাকে। সেই দেখে মীম হাসল, টিনটিনকে কাছে ডাকলো বলল, ‘তুই

আমার সবচেয়ে আপন।’

দিন যায়, মাস যায়, বছর কেটে যায়। মীম বড় হয়, একদিন হঠাৎ শহরে চলে যায় পড়তে। টিনটিন সেই থেকে একা হয়ে যায়। আবার যখন মীম গ্রামে ফিরে আসে, টিনটিন তাকে চিনে ফেলে, টিনটিনের কুঁকড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে দৌড়ায়ে আসে মীমের দিকে, চোখে সেই আগের ভালোবাসা।

মীম শহরে একটা বাড়ির উঠানে বিড়ালের বাড়ি বানায়। তার নাম দেয় ‘টিনটিন হোম’। মীম জানত, একটুখানি ভালোবাসা একজন মানুষ আর একটি প্রাণীর জীবন কতটা বদলে দিতে পারে। তার বাড়ি দেখাদেখি অনেকেই বাড়ির সামনে খোলে টিনটিন হোম।