ঢাকা শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫

সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি সবজির

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৫, ১২:২০ এএম

# প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে
# পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে সবজি নেই
# উৎপাদন এলাকায় সবজির দাম বেশি, দাবি বিক্রেতাদের
# ইলিশের দাম কমলেও অন্যগুলো চড়া

রূপালী প্রতিবেদক

রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচাবাজারে গতকাল শুক্রবার বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শফিকুল ইসলাম। এক কেজি টমেটো তিনি কেনেন ১২০ টাকায়। টমেটোর এমন উচ্চমূল্যে হতাশ শফিকুল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সবজির বাজার এখনো মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। বাজারে শীতের সবজির কোনো অভাব নেই, কিন্তু দাম আকাশছোঁয়া।’ তিনি জানান, গত বছর এই সময়ে টমেটো কিনেছিলেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। অর্থাৎ, এক বছরে দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। অন্যান্য সবজির দামও কমবেশি বেড়েছে একই হারে। শীত মৌসুমে বেড়েছে সবজির সরবরাহ, তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই।

মাছ-মাংসের বাড়তি দামের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা ছিল সবজি। কিন্তু কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না সবজির দামে। রাজধানীর নবাবগঞ্জ বাজার, পলাশী, সেগুনবাগিচা ও শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সবজির দাম এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকার ওপরে। সবজির দাম চড়া থাকায় অস্বস্তি বেড়েছে ক্রেতাদের; বিশেষ করে নি¤œ ও সীমিত আয়ের মানুষ বেশি সংকটে পড়েছেন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শিম, শালগম, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে। দিনে দিনে সবজির সরবরাহও বাড়ছে। তবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় সবজির দাম এখনো বেশি। বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে উৎপাদন এলাকাতেই সবজির দাম বেশি। কারণ, কৃষকেরা আগাম চাষ করা নতুন সবজির ভালো দাম পাচ্ছেন। এ ছাড়া গত অক্টোবর মাসে বৃষ্টির কারণে কৃষকদের কিছু সবজি নষ্ট হয়েছিল। ফলে এখন বেশি দামে বিক্রি করে সেই আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন তারা। এসব কারণে ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারেও সবজির দাম বেশি।

এদিকে রাজধানীর বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বেশির ভাগ সবজি এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে নিত্যপণ্যের কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসের টানা বৃষ্টির কারণে সবজির আবাদে ক্ষতি হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে থাকায় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ক্রেতার নাগালে রয়েছে। মাছ, মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

শীতকালে বাজারে রকমারি মৌসুমি সবজি থাকে বলে এ সময় তুলনামূলকভাবে দাম কম থাকে। কিন্তু এবার বাজারে পর্যাপ্ত শীতকালীন সবজি থাকলেও দাম কমছে না। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে হাতে গোনা দু-একটি সবজির দাম সামান্য কমলেও বেশির ভাগ এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০, ঢ্যাঁড়শ ও পটোল ৭০ থেকে ৮০, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লম্বা লাউ প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৫০  থেকে ৬০ টাকা।  মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৬০, বরবটি ৮০, মুলা ৬০ থেকে ৭০, পেঁপে ৩০, কচুর লতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পলাশী বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আলম বলেন, ‘এখন কৃষক পর্যায়েই সবজির দাম বাড়তি। এতে আড়ত থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’ কারওয়ান বাজারের আড়তদারেরা বলছেন, এখন উৎপাদন এলাকায় সবজির দাম বেশি। নতুন সবজির ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। এ জন্য ঢাকায় দাম বাড়ছে। তাদের ভাষ্য, গত মাসে বৃষ্টির কারণে খেতে পানি জমে কিছু গাছ মরে গেছে। কৃষক তা পুষিয়ে নিচ্ছেন।

শান্তিনগর কাঁচাবাজারের ক্রেতা নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘শীতকালীন সবজি বাজারে এলে সব ধরনের সবজির দাম কমে যায়। কিন্তু এ বছরের নভেম্বরের শুরুর দিকে মাত্র কয়েক দিনের জন্য সবজির দাম কিছুটা কমলেও দুই সপ্তাহ ধরে ফের বাড়তি। মাঝারি সাইজের একটা ফুলকপির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। শিমের ভরা মৌসুমেও ১০০ টাকা কেজির নিচে কেনা যাচ্ছে না, যা  মাঝে ৬০ টাকায় নেমেছিল। বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজপাতা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। বর্তমানে দেশি পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। এ বছর দীর্ঘ সময় ১৮-২০ টাকা দরে আলু বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক হয় আলুর দাম কিছুটা বেড়েছে। এরই মধ্যে বাজারে স্বল্প পরিমাণে আগাম নতুন আলু আসতে শুরু করেছে। এসব আলুর দাম অবশ্য বেশি; কেজি ১০০-১২০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগি মানভেদে প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা।

এদিকে বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য মাছ। বাজারে ১ কেজি ওজনের                 ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা এবং মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান ম-ল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ সবজি রবি বা শীত মৌসুমে (অক্টোবর থেকে মার্চ মাস) উৎপাদন হয়। কারণ, এ সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকে।’