ঋণ বিতরণে সীমা লঙ্ঘন করছে ঘুরেফিরে কিছু ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরে এসব ব্যাংক ঋণসীমা লঙ্ঘন থেকে বের হতে পারছে না। গত মে পর্যন্ত ১৭টি ব্যাংক ঋণসীমা লঙ্ঘন করেছে। গত ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ১৬। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাতসীমা ৮৭ টাকা। অর্থাৎ, এই খাতের ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারবে। অন্যদিকে ইসলামি শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলো ৯২ টাকা পর্যন্ত ঋণ বা বিনিয়োগ করতে পারে। এই সুবিধা পাওয়ার পরও ১৭টি ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করেছে।
ব্যাংকগুলো হলোÑ বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এডিআর সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ১১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘন করে বেসরকারি এবি ব্যাংক, ৯৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া জনতা ব্যাংক ৯০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ৮৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংক ৮৭ দশমিক ২২ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংক ৮৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
জানতে চাইলে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, এখন গ্রাহকের টাকা তোলার চাহিদা বেশি। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমানত কমে যাচ্ছে। ঋণের স্থিতি আগের জায়গায় আছে। যেহেতু অনেকে জেলে আছেন, সেহেতু তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায় হচ্ছে না। এ জন্যও এডিআর সীমা বেড়ে গেছে।
ইসলামি শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এডিআর সীমা লঙ্ঘন করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ১৩৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের, ১২৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংকের এডিআর ১১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ১২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংকের ১০৩ দশমিক ২০ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৯৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ইসলামী শাখার ১২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এডিআর সীমা নিঃসন্দেহে অনেক হিসাব-নিকাশ করে দিয়েছে এবং তা যথেষ্ট বৈশ্বিক মানের। সেই সীমা অতিক্রম করা ঠিক নয়। এতে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশেষ করে আমানতকারীরা বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সম্প্রতি অনেক বেশি আমানত উত্তোলন করা হয়েছে, যে কারণে ঋণ অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিওটা (এডিআর) বেশি দেখানো হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায় ও ডিপোজিট বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :