দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ।
মাত্র তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে এই ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৫১ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়কালেও ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা বা ৫৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতে বড় ঋণগ্রহীতারা নীতিগত ছাড়ের সুযোগ নিয়ে পুরোনো ঋণ ‘নিয়মিত’ দেখিয়ে আবার নতুন নামে ঋণ নিতেন। এতে প্রকৃত ঋণের চিত্র আড়াল থাকত। তবে সরকার পরিবর্তনের পর মার্চ থেকে নতুন নিয়মে নির্ধারিত সময় পেরোলেই ঋণকে মেয়াদোত্তীর্ণ ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত খেলাপি চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, শিল্প খাতের দুরবস্থা, উদ্যোক্তাদের দেশত্যাগ কিংবা কারাবরণ এবং ব্যাংকের দুর্বল ঋণ আদায় ব্যবস্থাই ঋণ প্রবৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। তখন আন্তর্জাতিক মানদ-ে ঋণ শ্রেণীকরণ হতো। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ঋণ পুনঃতপশিল সুবিধা চালু হয় এবং পরবর্তী সময়ে নানা ছাড়ে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হয়।
বর্তমান গভর্নরের আমলে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। প্রভিশন ঘাটতি রেখে এখন কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ইতিমধ্যে ৩৬টি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে ২০টি ব্যাংক চলতি বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। এমনকি আগামী বছর কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি হলে সেখানেও লভ্যাংশ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘আগে ছয় মাস অনাদায়ে ঋণখেলাপি হতো। ২০১৯ সালে সময়সীমা বাড়ানো হয়, পরে করোনা পরিস্থিতিতে আরও ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এখন নতুন নিয়মে আসল খেলাপির ছবিটাই উঠে এসেছে।’
আপনার মতামত লিখুন :