শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম

হিসাব বাড়লেও কমেছে সঞ্চয়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম

হিসাব বাড়লেও কমেছে সঞ্চয়

দেশে শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে শুরু হওয়া ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রমে হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে সঞ্চয় বা আমানতের পরিমাণ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চÑ এই তিন মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আমানত কমেছে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। আর গত ৯ মাসে এই কমার পরিমাণ ৩৩২ কোটি টাকা। অথচ এ সময়েই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে প্রায় ৬৮ হাজারটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।


২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য টাকা জমার সুযোগ আসে ২০১১ সালে। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক এই কার্যক্রমের জন্য পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করে। উদ্দেশ্য ছিলÑ ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের আর্থিকভাবে সচেতন করে তোলা।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫০। এ সময় এসব অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ১ হাজার ৯৬৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পাঁচ মাস আগেও (ডিসেম্বর শেষে) অ্যাকাউন্টসংখ্যা ছিল ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৯ এবং আমানত ছিল ২ হাজার ৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ মাসে হিসাব বেড়েছে ৯৮ হাজার ৯৮১টি; তবে আমানত কমেছে ১০৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে সবচেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে গ্রামে। গ্রামের ব্যাংকগুলোতে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে হিসাব খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯৪টি। অপরদিকে শহরের ব্যাংকগুলোতে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে হিসাব খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫৬টি। এ ছাড়া গ্রামের তুলনায় স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত বেশি শহরের শাখাগুলোতে। গত মে মাস শেষে গ্রামের শাখাগুলোতে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অপরদিকে শহরের ব্যাংকগুলোতে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। 
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। স্কুলের বেতন, খাতা-কলমসহ নানা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। পাশাপাশি, গত সরকারের সময় ব্যাংক খাতে যে অনিয়মের চিত্র সামনে এসেছে, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। এতে কয়েকটি ব্যাংকের প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়, যা স্কুল ব্যাংকিংয়েও প্রভাব ফেলেছে। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, বছরের শুরুতে বা শেষে অনেকে ছুটির কারণে পর্যটনে যান, বা স্কুলের বকেয়া ফি পরিশোধ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন। এগুলোকেও আমানত হ্রাসের স্বাভাবিক কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে সবচেয়ে সক্রিয় বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তারা এখন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ১১৪টি হিসাব খুলেছে, যেখানে জমা রয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোÑ যাদের হিসাবসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৭ এবং আমানত ৪২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো খুলেছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৪০৬টি হিসাব, যাতে জমা রয়েছে ৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো খুলেছে ২ হাজার ৭১৫টি হিসাব, যেখানে জমা রয়েছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্কুল ব্যাংকিংয়ে ছেলেরা অ্যাকাউন্ট খোলায় এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে মোট হিসাবের ৫১ শতাংশ ছেলেদের নামে, যা ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৬২৪টি। এর মধ্যে শহরে ছেলেদের নামে হিসাবসংখ্যার পরিমাণ ১১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৩টি। ছেলেদের নামে গ্রামের ব্যাংকগুলোতে হিসাবসংখ্যার পরিমাণ ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮২১টি। আমানতের পরিমাণেও ছেলেরা এগিয়েÑ মোট সঞ্চয়ের ৪৯ শতাংশ তাদের নামে।


এদিকে স্কুল ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবের ৪৯ শতাংশ মেয়েদের নামে, যা ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৭২৬টি। এর মধ্যে গ্রামে মেয়েদের নামে হিসাবসংখ্যার পরিমাণ ১২ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৩টি। মেয়েদের নামে শহরের ব্যাংকগুলোতে হিসাব সংখ্যার পরিমাণ ৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৫৩টি।  


জানা গেছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে স্কুল পড়ুয়াদের ব্যাংকসেবা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচি চালু করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। স্কুলপড়ুয়ারা মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসব এবং পার্বণে উপহার বা নগদ অর্থ পায়। নিয়মিতভাবে দুপুরের টিফিন বাবদ অর্থ পেয়ে থাকে। এসব থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলতেই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। এখানে ১১ থেকে ১৭ বছরের তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ব্যাংকিংয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়।


বর্তমানে দেশের ৫৯ ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব চালু রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যাংক হিসাব চালাতে গ্রাহককে কোনো না কোনো চার্জ দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে এ হিসাব চালাতে শিক্ষার্থীদের কোনো খরচ দিতে হয় না, চেকবই নিতে গুনতে হয় না মাসুল। জমা বই, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্য সব সুবিধাও রয়েছে স্কুল ব্যাংকিংয়ে। লেনদেন করা যায় যত খুশি। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জন্য স্কুল ব্যাংকিংয়ের আমানত মূলত একটি দীর্ঘস্থায়ী আমানত, যা স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগযোগ্য।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!