ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

টানা চার মাস রেমিট্যান্সের শীর্ষে সৌদি আরব

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম

গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর হঠাৎ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড পরিমাণে রেমিট্যান্স আসতে শুরু করে। টানা আট মাস রেমিট্যান্স পাঠানোর দেশ হিসেবে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

গত মে মাস থেকে  রেমিট্যান্স পাঠানো দেশ হিসেবে শীর্ষে উঠে আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব।

সর্বশেষ গত জুলাই মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪২ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চলে এসেছে পঞ্চম অবস্থানে। তবে গত মাসেও ফের রেমিট্যান্স পাঠানোর দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, ইতালি, কাতার ও সিঙ্গাপুর। 

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের করা বিপুল ঋণ পরিশোধের চাপ যখন বাড়ছে, তখন রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকছেন প্রবাসীরা। ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ যদি বৈদেশিক শ্রমবাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে চায়, তাহলে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ ও দক্ষ কর্মী পাঠানোর প্রবণতা বাড়ানোই ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্সসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে হিসাব)। গত বছরের একই মাসের তুলনায় এ আয় ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশে এসেছিল ১৯১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। গত বছরের জুলাইয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেন। পরে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ফের বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে পাঠানো এই অর্থ সরাসরি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের নানা উদ্যোগ, রেমিট্যান্সে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা এবং ব্যাংকিং সেবার উন্নয়নের কারণে এই ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে। এর আগে গত জুন মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৮২ কোটি মার্কিন ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। গেল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবাহ এসেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।  এই অংক এক অর্থবছরে দেশে আসা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে সৌদি আরব প্রবাসীরা দেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪২ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে ২৮ কোটি ৩৫ লাখ  ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ কোটি ২১ লাখ ডলার, ইতালি থেকে ১৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, ওমান থেকে ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, কুয়েত থেকে ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, কাতার থেকে ১০ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার, বাহরাইন থেকে ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ফ্রান্স থেকে ৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২ কোটি ১১ লাখ ডলার, গ্রিস থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, জর্ডান থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, কানাডা থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, স্পেন থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, জার্মানি থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘পশ্চিমের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি আমাদের দেশের জন্য ভালো দিক। তবে আমার ধারণা, সম্প্রতি প্রবাসীদের সঞ্চয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় ইউএস ও ইউকে থেকে ইনভেস্টমেন্ট আসছে। কিন্তু আরবের দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ নয়, বরং শ্রমিকদের রেমিট্যান্স আসে। সব মিলিয়ে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে। এটা ফরেক্স মার্কেটকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।’

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিশে^র ১৬৮টি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তানি করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। চলতি বছরের পাঁচ মাস সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ৪ জন। এ ছাড়া কাতারে ৪০ হাজার ৩০৮ জন, সিঙ্গাপুরে ২৬ হাজার ৩৮৯ জন, কুয়েতে ১১ হাজার ১১ জন, জর্ডানে ৪ হাজার ৯২৬ জন, মালয়েশিয়ায় ২ হাজার ৪৮৬ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২ হাজার ৯৯৩ জন, লেবাননে ২ হাজার ১৮১ জন এবং ইতালিতে গেছেন ২ হাজার ৩৫ জন।