আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারীদের পোশাকের ভালো সংগ্রহ এনেছে রাজধানীর মৌচাক এলাকার ফরচুন শপিং মলের ড্রেস কর্নার। তবে এখনো কাক্সিক্ষত বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মাসুদ রানা। তারা বলেন, ‘নারীদের আনস্টিচ জর্জেট পোশাক এনেছি প্রায় ২ লাখ টাকার। শুক্রবার ক্রেতা না থাকায় এখনো সেগুলো থেকে একটিও বিক্রি করতে পারিনি।’ মাসুদের মতো রাজধানীর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী এবারের পূজার বাজারে ভালো বিক্রি হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে অধিকাংশই ধারণা করছেন, কেনাকাটা এ মাসের শেষে কিছুটা বাড়তে পারে।
এদিকে মৌচাক-মালিবাগ এলাকায় পূজায় আগেভাবে বিক্রি বেড়েছে গয়নার। বেশির ভাগ নারীই হাত, কান, নাক ও গলার ইমিটেশন ও সোনার অলংকার কিনছেন। সোনার দাম অতিরিক্ত বাড়ার কারণে কাক্সিক্ষত গয়নাটি কিনতে পারছেন না অধিকাংশ ক্রেতা। জুতা-স্যান্ডেল, গয়নাও পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আছে নতুন ধরনের ভ্যানিটি ব্যাগ।
দুর্গাপূজা ঘনিয়ে এলেও দেশের অন্যতম বড় পাইকারি কাপড়ের এই বাজারে পূজার আগে যেখানে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ভিড়ে ব্যস্ত সময় পার করেন, এবার সেখানে অচেনা নীরবতা বিরাজ করছে। ফলে রাজধানীর ইসলামপুরে এখনো জমে ওঠেনি কেনাকাটা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরই দুর্গাপূজা ঘিরে বিপণিবিতানগুলোতে থাকে বাড়তি চাপ। এবারও তা বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের নিত্যনতুন সব পোশাক আনা হচ্ছে। সেই তুলনায় কেনাকাটা এখনো সেভাবে জমেনি। তবে কিছু ক্রেতা আসছেন। এমনই একজন মৌসুমি মন্ডল বলেন, ‘কয়েক বছর পর এবার পূজায় গ্রামের বাড়িতে যাব। যে কারণে একটু বাড়তি কেনাকাটার চাপ রয়েছে। এর মধ্যে বাচ্চার স্কুলও চলছে। তাই আগেভাগে এসেছি কেনাকাটা করতে।’
মৌচাকের পাশাপাশি রাজধানীর মালিবাগ ও মগবাজার এলাকার বেশ কয়েকটি বিপণিবিতান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে রয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট ও জুয়েলারির দোকান।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে যারা আসছেন, তাদের বেশির ভাগই ঘুরেফিরে দেখছেন। মূল কেনাকাটা হবে পূজার আগের শেষ সপ্তাহে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ঈদ ও পহেলা বৈশাখ ছাড়া পূজায়ও ভালো বেচাকেনা হয় এখন। তবে গত বছর এই সময়ে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বেচাবিক্রি ভালো ছিল না। এবার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও অর্থনৈতিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি, যে কারণে শঙ্কিত তারা। তবে গতানুগতিকভাবে আমাদের প্রস্তুতি আগের মতোই আছে। ভালো বিক্রি না হলেও তা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বাড়বে।
মৌচাক অঞ্জনসে এবার পূজায় আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে নতুন সব পোশাক এনেছেন। ক্রেতার চাহিদা ও সাধ্যের মধ্যে এসব পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
মৌচাক-মালিবাগ এলাকায় জুতা-স্যান্ডেল ও গয়নাও পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আছে নতুন ধরনের ভ্যানিটি ব্যাগ। তবে পূজায় আগেভাবে বিক্রি বেড়েছে গয়নার। বেশির ভাগ নারীই হাত, কান, নাক ও গলার ইমিটেশন ও সোনার অলংকার কিনছেন। সোনার দাম অতিরিক্ত বাড়ার কারণে কাক্সিক্ষত গয়নাটি কিনতে পারছেন না অধিকাংশ ক্রেতা।
সোনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পূজায় সোনার জিনিসপত্র বানানোর একটা ঝোঁক থাকে। এবারও রয়েছে। তবে সোনা-রুপার দাম বেশি বলে ক্রেতা কমেছে।
এদিকে ইমিটেশন গয়নার দাম কম, আবার দেখতেও সুন্দর। এ কারণে উৎসব-পার্বণে এগুলো বেশ জনপ্রিয়। নিলিমা নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বেশি। পরিবারের সবার জন্য স্বর্ণের গয়না কেনায় বাড়তি চাপ পড়বে। ইমিটেশন হলে সহজে কেনা যায়, আবার দেখতেও ভালো।’
সান শাইন টেক্সটাইলের ব্যবসায়ী জানান, বাজারে মন্দাভাবের কারণে তারা ব্যাংক ঋণের কিস্তি, দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আল মদিনা ফ্যাশন হাউসের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে জমি বিক্রি করার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকার যদি আমাদের কিছু সহযোগিতা করত, তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে ব্যবসা চালাতে পারতাম। এতে শুধু ব্যবসায়ীরাই বাঁচত না, দেশের অর্থনীতিও আরও শক্তিশালী হতো। বিদেশে এখনো বাংলাদেশি পোশাকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
মোমেন্ট ফ্যাশনের দাবি, সংকট কাটানোর জন্য আমরা সাধারণত দুই ঈদ ও পূজার মৌসুমের দিকেই তাকিয়ে থাকি। কিন্তু এবারের ঈদেও তেমন বেচাকেনা হয়নি। আর পূজায় এখনো কোনো ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না। ফলে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
পূজা ঘিরে প্রতি বছরই বিপুল চাহিদা তৈরি হয়। বিশেষ করে শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, প্যান্ট, ধুতি, সেলাওয়ার-কামিজ ও বাচ্চাদের পোশাকের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা ইসলামপুরে আসেন। কিন্তু এ বছর মন্দার কারণে ক্রেতা আসা কমে গেছে। ফলে বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না। বিক্রি নেই বললেই চলে।