ঢাকা সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব গেছেন ৫৯ হাজার ৫০০ কর্মী

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশিদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে সৌদি আরবের চাহিদা। এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪০ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে সেপ্টেম্বরে প্রায় ৯৫ হাজার ৬৯৪ জন কর্মী বিদেশে গেছে। এই সংখ্যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হলেও আগস্টের চেয়ে ৩৩ শতাংশ কম। আগস্টে ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৬৫ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন, যা ছিল এক মাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক কর্মসংস্থানের রেকর্ড। শ্রমশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টের চেয়ে কম হলেও সেপ্টেম্বরের এই সংখ্যায় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের স্বাভাবিক চিত্রই ফুটে উঠেছে। গত কয়েক মাসের মতো সেপ্টেম্বরেও সবচেয়ে বেশি কর্মী নিয়োগ করেছে সৌদি আরব ৫৯ হাজার ৫০০ জন।

বিএমইটির তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে বিদেশে পাঠানো প্রায় ৪৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মীর মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ কর্মীই গেছেন সৌদি আরবে। তবে এই বিপুলসংখ্যক কর্মীর অধিকাংশই মূলত স্বল্প-দক্ষ কাজে নিযুক্ত। ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মী এই ধরনের কাজে নিয়োজিত। এমনকি কর্মীদের একটি বড় অংশ প্রতিশ্রুত চাকরি পাননি অথবা অনিয়মিত বেতন ও ইকামা-সংক্রান্ত (বসবাসের অনুমতিপত্র) সমস্যায় ভুগছেন। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি বলেন, সৌদি আরব এখন দক্ষ কর্মী নিয়োগের ওপর জোর দিয়েছে। কারণ অনেক স্বল্প দক্ষ কাজ এখন তাদের লোকেরাও করা শুরু করেছে। এ কারণে তারা বেশি দক্ষ কর্মী নিতে বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রচুর বাংলাদেশি সৌদি গেলেও তাদের অনেকে বেকার জানিয়ে তিনি বলেন, কথিত ফ্রি ভিসায় গিয়ে অনেকের কাজ নেই, অনেকে নিয়মিত বেতন পান না। আমাদের সময় প্রতিটি কর্মী আসার আগে চেক করতাম চাকরিটি জেনুইন কি না। এটা দূতাবাসের দায়িত্ব। নতুন চুক্তির ফলে শ্রম অধিকার রক্ষিত হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব চুক্তিতেই ভালো ভালো কথা লেখা থাকে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের দূতাবাসকে দায়িত্ব নিতে হবে।

এদিকে সৌদি আরব ছাড়া অন্য ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে কর্মী নিয়োগ সীমিতই রয়েছে। সেপ্টেম্বরে শীর্ষ ১০ গন্তব্যের মধ্যে ছিল কাতার, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কম্বোডিয়া, জর্ডান, ইতালি ও ইরাক। তবে এসব দেশে কর্মী নিয়োগের সংখ্যা ছিল ১ হাজার থেকে ১০ হাজারের মধ্যে। মালয়েশিয়া, ওমান ও বাহরাইনের মতো ঐতিহ্যবাহী শ্রমবাজারগুলোতে কর্মী নিয়োগ প্রায় বন্ধ রয়েছে। কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬০-৭০ হাজার কর্মী যেতে পারত, যা গত কয়েক বছরে প্রায় ১ লাখে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স-প্রবাহ বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে দেশে মোট ২.৬৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি অর্থবছরে এটি এখন পর্যন্ত এক মাসে আসা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে জুলাইয়ে ২.৪৭ বিলিয়ন ডলার ও আগস্টে ২.৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স প্রবাহে বার্ষিক প্রবৃদ্ধিও দেখা গেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৪০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে মার্চ মাসে, ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। গত সেপ্টেম্বর মাসে সৌদিপ্রবাসীরা দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪০ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও কাতার থেকে সেপ্টেম্বর মাসে যথাক্রমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার, ২৭ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার, ১৭ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার, ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার, ১৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার, ১২ কোটি ৯২ লাখ, ১২ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ও ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। দুই দেশের আর্থিক খাত একসঙ্গে কাজ করলে অর্থ পাঠানোর এই খরচ কমানো সম্ভব। আহসান এইচ মনসুর বলেন, সৌদি আরব থেকে প্রবাসীরা তাঁদের রেমিট্যান্স পাঠাতে ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ দেন। এটি তাঁদের জন্য বিশাল চাপ। সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের আরও দক্ষ ও কম খরচে অর্থ স্থানান্তরের ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ জন্য দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে।