বগুড়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে সরকারি সড়কের পাশের ১৩৬টি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ বিক্রি করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। সেই গাছের সঙ্গে বনজ এবং ওষুধিগাছ মিলে দেড় শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানতে পেরে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত শনিবার রাস্তার পাশের গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। বগুড়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান বলেছেন, ‘পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি রাস্তার গাছ বিক্রি এবং কাটার অনুমতি দিতে পারেন না।’
জানা গেছে, সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের ন্যাংড়ার বাজার থেকে দরগাহাট রাস্তার দুই পাশের ওই গাছগুলো কাটা শুরু হয় ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকারপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আরমান আকন্দের কাছে টেন্ডারের মাধ্যমে ঘোলাগাড়ি স্কুল থেকে এরুলিয়া ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ৪৩টি ইউক্যালিপটাস ও ৯৩টি আকাশমণিগাছ মাত্র ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিপন ও কর্মী আরমান আকন্দের নেতৃত্বে ১৫ দিন আগে থেকে সরকারি রাস্তার দুই পাশের গাছ কাটা শুরু হয়। গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, এলজিইডি সরকারি এই রাস্তা সম্প্রসারণ করবে। এ কারণে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাস্তার পাশের ১৩৬টি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ বিক্রি হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই দুই নেতাকর্মী গত ১৫ দিনে দেড় শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের সঙ্গে রাস্তার পাশে থাকা ওষুধিগাছ হরীকতী, আমলকী ও বনজ মেহগনিগাছও কেটে বিক্রি করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাজনৈতিকভাবে অনেক নির্যাতিত। দলের নেতাকর্মীদের চালানোর জন্য ব্যবসা করি। এর আগেও বানদীঘি গ্রামের রাস্তার গাছ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিক্রি করা হয়েছে। আমরা সেই গাছ কিনতে পারিনি। এবার ঘোলাগাড়ি গ্রামের রাস্তার গাছ আমি এবং আমার দলের কর্মী আরমান আকন্দ বৈধ প্রক্রিয়ায় কিনেছি।’
আরমান আকন্দ বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলে আমার কোনো পদ নাই, তবে আমি এবার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। রাজনীতির পাশাপাশি আমি কাঠের ব্যবসা করি। টেন্ডারে ১৩৬টি গাছ কেনা হয়েছে। তবে কাটার সময় শ্রমিকেরা বুঝতে না পেরে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের সঙ্গে কিছু গাছ ভুল করে কেটেছে। সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।’
এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক বলেন, উপজেলা পরিষদের সভায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ হিসেবে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ কেটে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত আছেন। শুধু বগুড়াতে না, সারা দেশে এই দুই প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সে কারণে বগুড়াতেও টেন্ডারের মাধ্যমে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ বিক্রি করা হয়েছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ মে জারি করে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ নিষিদ্ধ করা হয়। এই গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে, যা মাটির আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া এই গাছগুলোর পাতায় একধরনের টক্সিন থাকে, যা মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে এবং নিচে অন্য গাছ জন্মাতে পারে না। প্রজ্ঞাপন জারির পর কৃষি বিভাগ ও বন বিভাগের মাধ্যমে নার্সারিগুলোয় এই গাছের চারা ধ্বংস করার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বগুড়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান জানান, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাসগাছ অপসারণের জন্য উদ্যোগের অংশ হিসেবে বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা এখনো কার্যকর হয়নি। যার কারণে সরকারি রাস্তার পাশের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ‘সরকারিভাবে এ গাছগুলো নিষিদ্ধ করার পর আমরা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে নার্সারিগুলো থেকে গাছের চারা ধ্বংস করি। এ জন্য নার্সারির মালিককে চারাপ্রতি ৫ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হয়। গাছগুলো যেহেতু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ কারণে এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেন। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির সঙ্গে ওষুধি ও বনজগাছ কাটা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ চন্দ্র সরকারকে সেখানে পাঠিয়ে সকল প্রকার গাছ কাট বন্ধ করে দিয়েছি।’