ভোরের কুয়াশা আর ঘাসে জমা শিশির বিন্দু গ্রামীণ জনপদে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। এমন সময়ে প্রতিবছরের মতো এবারও খেজুর রস সংগ্রহে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গাছিরা। এরপর শুরু হবে গাছ থেকে রস সংগ্রহ, আর তা থেকে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি।
খেজুরগাছ থেকে যারা রস সংগ্রহ করেন তাদের স্থানীয় ভাষায় গাছি বলা হয়। শীতের মৌসুম শুরু না হতে গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙা বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁছাছোলা করছেন। এ ছাড়া ভাড় (কলস) কেনা, রস জ্বাল দেওয়ার তাওয়া কেনা, চুলা তৈরি করাসহ রস সংগ্রহ ও খেজুরগুড় তৈরির নানা আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কারণ কিছু দিনের মধ্যেই গ্রামবাংলার গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে খেজুরগাছ। জমির প্রতিটি আইলে খেজুরগাছ লাগিয়েছেন গ্রামের কৃষকেরা। এমনকি রাস্তার দুই পাশে, পুকুরপাড়ে অযতেœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছগুলো শীত মৌসুমে তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে আসে। এ সময় রস-গুড় উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার।
বাঘাডাঙ্গা গ্রামের রজব আলী নামের এক গাছি বলেন, ‘শীত আসার আগে গাছগুলো ভালো করে প্রস্তুত করতে হয়, যাতে রস বেশি পাওয়া যায়। আমরা দিন-রাত খেটে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। কষ্ট বেশি কিন্তু যখন গুড় তৈরি হয়, তখন সেই কষ্টের ফলটা দেখতে ভালো লাগে।’
হাফিজুর নামে আরেক গাছি বলেন, ‘আমাদের কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গাছের অনেক ওপরে উঠে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাঁছাছোলা করতে হয়। কখনো কখনো গাছে সাপও থাকে, তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।’
বড় দুধপাথিলা গ্রামের গাছি রনি মিয়া বলেন, ‘চলতি মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য তিনি ২০০ গাছ প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ৯৭টি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেছে, বাকিগুলোর পরিচর্যা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর আশ্বিনের ২০ তারিখ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হয় আর কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গুড় উৎপাদন শুরু হয়। এ কাজ চলে চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত, যা আয় হয়, তা দিয়ে সারা বছরের খরচ চলে।’
আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের ৬০ বছর বয়সি গাছি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমি এ বছর ৮০টি গাছ প্রস্তুত করেছি। আশা করি, প্রতিদিন ৭-৮ কেজি করে গুড় উৎপাদন হবে। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ রস সংগ্রহ এবং গুড় উৎপাদন চলবে।’
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, ‘উপজেলায় প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে ৫৬ হাজার ২৫০টি খেজুরগাছ রয়েছে। এ বছরে ১৩৩ টন খেজুরের গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’