চুল কারো কাছে পরিচ্ছন্নতার প্রতীক, কারো কাছে সাজ-সজ্জার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। চুল শরীরের এমন একটি অংশ, যার যতেœ নিয়মিত নজর না দিলে সহজেই দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। সারা বছর রোদ ও বাতাসে চুল স্বাভাবিকভাবেই শুকিয়ে যায়। তাই আলাদা করে চুল শুকানোর প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বর্ষা এলেই ঘটে ব্যতিক্রম। বৃষ্টির দিনে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, সূর্যের আলোও তেমন থাকে না। ফলে চুল শুকাতে দেরি হয়। অনেকে গোসলের পর কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে এলেও চুল শুকানোর দিকে গুরুত্ব দেন না। অনেকেই ভেজা চুল নিয়ে ঘোরাফেরা করেন, চুল শুকানোর প্রয়োজন মনে করেন না কিংবা সময় না থাকায় অবহেলা করেন। কিন্তু এ অভ্যাসে ধীরে ধীরে চুল ও স্ক্যাল্পের ক্ষতি হয়, যা অনেকেই শুরুতে টের পান না।
ভেজা চুলের ক্ষতি
ভেজা অবস্থায় চুলের বাইরের স্তর নরম ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এই সময় চুল টানলে বা ঘর্ষণে সহজেই ভেঙে যেতে পারে। এ ছাড়া ভেজা চুল স্ক্যাল্পে আর্দ্রতা বাড়ায়, যা ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিতে পারে। এর ফলে খুসকি, চুলকানি বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। বর্ষাকালে এই সমস্যা আরও বেশি হয়, কারণ ঘরের ভেতরও বাতাসে আর্দ্রতা থাকে বেশি। চুল দীর্ঘক্ষণ ভেজা থাকলে উকুনের সমস্যাও বাড়তে পারে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুদের মাঝে এই সমস্যা বেশি হয়। ভেজা চুলে উকুন বংশবৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ পায়। এ ছাড়া রাতে যারা ভেজা চুল নিয়ে ঘুমাতে যান, তাদের মাথায় ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা বা সাইনাসের সমস্যাও হতে পারে। আবার বালিশের সঙ্গে ঘর্ষণে চুল আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
চুল শুকানোয় হেয়ার ড্রায়ার
চুল শুকানোর ক্ষেত্রে সময় বাঁচানোর জন্য অনেকেই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে বা জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত চুল শুকিয়ে নেওয়া দরকার হলে এটি বেশ কার্যকর। তবে ভুলভাবে ড্রায়ার ব্যবহার করলে সেটি উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করতে পারে। হেয়ার ড্রায়ারের অতিরিক্ত তাপ চুলের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা নষ্ট করে দেয়। এতে চুল হয়ে যায় রুক্ষ, দুর্বল এবং সহজে ভেঙে পড়ে। আবার অনেকেই ড্রায়ার চুলের খুব কাছ থেকে ব্যবহার করেন, যা চুলের প্রোটিন গঠন নষ্ট করতে পারে।
হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
সঠিক নিয়মে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কমানো যায়। নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে চুল থাকবে তুলনামূলক নিরাপদ:
পানি ঝরিয়ে নিন : প্রথমে তোয়ালে দিয়ে চুলের অতিরিক্ত পানি আলতোভাবে মুছে নিন।
হিট প্রটেকশন ব্যবহার করুন : হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের আগে হিট প্রটেকশন সিরাম বা স্প্রে ব্যবহার করলে চুলের বাইরের স্তর কিছুটা সুরক্ষিত থাকে।
মাঝারি বা ঠান্ডা বাতাস ব্যবহার করুন : হেয়ার ড্রায়ারের তাপমাত্রা মাঝারি বা কুল মোডে রেখে ব্যবহার করুন। কখনোই হাই হিট ব্যবহার করবেন না।
মাথা থেকে দূরে রাখুন : চুলের থেকে অন্তত ৬-৮ ইঞ্চি দূরে রেখে ব্যবহার করুন এবং এক জায়গায় বেশি সময় ধরে বাতাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
চুল ভাগ করে শুকান : ধাপে ধাপে চুল ভাগ করে শুকালে সময়ও কম লাগে, চাপও কম পড়ে।
প্রতিদিন ব্যবহার নয় : প্রয়োজনে ব্যবহার করুন, কিন্তু প্রতিদিন ড্রায়ার ব্যবহার করা উচিত নয়।
বিকল্প উপায়
যারা ড্রায়ার ব্যবহার করতে চান না বা সবসময় সম্ভব হয় না, তারা চাইলে নিচের উপায়েও চুল শুকাতে পারেন :
মাইক্রোফাইবার তোয়ালে ব্যবহার করুন। এটি চুলের পানি দ্রুত শোষণ করে ও ঘর্ষণ কমায়।ফ্যানের নিচে বসে চুল শুকান। এতে কোনো অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ করতে হয় না।সকালে চুল ধোয়ার চেষ্টা করুন। রাতে চুল শুকাতে সময় বেশি লাগে। তাই সকালে ধুয়ে সারাদিনে ধীরে ধীরে শুকানো নিরাপদ।
চুলের সুস্থতা নির্ভর করে দৈনন্দিন যতেœর উপর। ছোট ছোট অভ্যাসেই বড় পার্থক্য তৈরি হয়। বর্ষাকালে কিংবা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে চুল ভেজা রাখলে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। আর হেয়ার ড্রায়ার ঠিকভাবে ব্যবহার না করলে তা ক্ষতি করতে পারে। তাই চুলের যতেœ সচেতন থাকা জরুরি। সময় বাঁচানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যও যেন ঠিক থাকে, সেটাই হোক লক্ষ্য।