বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

রূপালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা

স্বপ্নের মতো বছর পার

মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

স্বপ্নের মতো বছর পার

কেমন করে যে কি হয়ে গেলÑ টেরই পেলাম না। স্বপ্নের মতোই পার হয়ে গেল একটি বছর কখন যে প্রিয় রূপালী বাংলাদেশ দ্বিতীয় বছরে পা রাখল, টেরই পেলাম না। দেখলাম, সত্যি মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। পত্রিকা প্রকাশের সূচনাতেই আলো ছড়িয়েছিল রূপালী বাংলাদেশ। এক বছর পর আজ দেশের গণমাধ্যম রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রূপালী বাংলাদেশ। সূচনালগ্নে বার্তা সম্পাদক ছিলেন অনিল সেন, তার হাত ধরেই পত্রিকা আলোর পথে পা বাড়িয়েছে। তাছাড়া আমরা তো ছিলাম-ই। বলতে দ্বিধা নেই, গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রিয় পত্রিকাটি এক বছরেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সব স্তরের পাঠক বলছেন, ‘সত্যি এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পত্রিকা।’ এমন প্রশংসা যখন শুনি, গর্বে বুক ভরে ওঠে। এজন্যই তো সংবাদকর্মীরা শ্রম দেন, মেধা খাটানÑ তাদের প্রশান্তি বোধ করি এখানেই। 


রূপালী বাংলাদেশের আজকের এই যে অবস্থান, এর পেছনে সবার আন্তরিকতা ছিল, ছিল মমতায় ভরা দ্বিধাহীন শ্রম। আর বিরামহীন শক্ত বিনিয়োগের পাশাপাশি নেতৃত্বের প্রাবল্য ছিল প্রাচীরের মতো। সম্পাদক মো. সায়েম ফারুকীর অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ দৃষ্টি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করিম আহমদের দিন-রাত ছুটোছুটি ও বলিষ্ঠ নির্দেশনার সঙ্গে আমাদের চিন্তা-ভাবনার মিশেলে রূপালী বাংলাদেশের আজকের এই বিজয় মুকুট। 


মনে পড়ে, ‘পত্রিকার ডিক্লারেশন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সায়েম সাহেব করিম আহমেদকে ফোন করে আনেন। করিম সাহেব সময়ক্ষেপণ না করে আমাকে কল করেন। সাপ্তাহিকীটি অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বলতে গেলে শুয়ে-বসেই কাটছিল আমার তখনকার দিনরাত। করিম সাহেবের ফোন পেয়ে আমি দ্রুত চলে আসি।’ করিম আহমেদ সব খুলে বললেও সম্পাদকের নামটি গোপন রাখেন। আমি বিনা বাক্যব্যয়ে রাজি হই। শুরু হলো আমাদের প্লানিং ও নিত্য-নতুন আহরণের চেষ্টা। তখন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তৈরিই হয়নি। পত্রিকার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের বিভিন্ন স্থানে মিলিত হতে হতো। কখনো সেগুনবাগিচায় জিটিভির পেছনে, কখনো শিল্পকলায় আমরা নিয়মিত মিলিত হতাম। এখানেই পত্রিকার স্লোগান চূড়ান্ত করা হয়। সবাই মতামত দিলেন। সবার মতামত শুনতে শুনতে আমার মাথায় গিজগিজ করছিল নানান চিন্তা। কারো স্লোগানই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করিম আহমেদের পছন্দ হচ্ছিল না। আচমকা আমি বলে উঠলাম, ‘মুক্ত চিন্তার দুরন্ত সাহস’ দিলে কেমন হয়? সবাই চিৎকার করে বলে উঠলেন, দারুণ দারুণ। কিন্তু মনসুর হেলাল যোগ করলেন, সাহস না দিয়ে প্রকাশ দিন। সঙ্গে সঙ্গে পাস হয়ে গেল, ‘মুক্ত চিন্তার দুরন্ত প্রকাশ’। ক্রেডিটটা একা নিতে পারলাম না বলে তাৎক্ষণিক আফসোস হলেও পরক্ষণেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে যারপরনাই উল্লসিত হলাম। অস্থায়ী এসব সম্মিলনে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগ দিতেন মনসুর হেলাল এবং জিয়াউর রহমান সুমন। মাঝে মাঝে উৎপল দাশগুপ্তর উপস্থিতিও ছিল। তিনিই একদিন বার্তা সম্পাদক হিসেবে অনিল সেনকে জিটিভির পেছনে নিয়ে এলেন। সেদিন আমার আসতে খানিক দেরি হয়েছিল, এসে শুনলাম। এর বাইরেও মাঝেমধ্যে ‘চ্যানেল এস’-এ বসা হতো। চ্যানেলটির ভাইস চেয়ারম্যান মঈনুল ভাই খুশি মনে তার নিজকক্ষে আমাদের বসতে দিতেনÑ তিনি সিলেটি মানুষ, সিলেটিরা এমনিতেই অতিথিপরায়ণ, তার উপর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বন্ধু। তাই আমাদের জন্য সোনায় সোহাগা হয়েছে। অবশ্য চ্যানেলের এমডি সুজিত দা’ও কম করেননি তিনিও সিলেটের মানুষ এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ। সবমিলিয়ে আমাদের জন্য সাপে বরই হয়েছে বলা যায়। এরপর আমাদের মিলনস্থল স্থির হলো রামপুরায় বেটার লাইফ হাসপাতালের পেছনে। এখানকার হাজিরা ছিল সময়ধরে নিয়মিত। কারণ এখানে আসতেন ওমর ফারুক ভাই। ফারুক ভাই বিভিন্ন পাতার ডিজাইনের পাশাপাশি পত্রিকার চিন্তা-চেতনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ স্লোগানসমৃদ্ধ ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতেন। উৎপল দাশগুপ্ত ও ওমর ফারুক ভাই সম্মিলিতভাবে এসব স্লোগান লিখতেন। ফটোকার্ডের জন্য আমারও বেশ কিছু চমৎকার স্লোগান লেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিছু স্লোগানে স্টিকারও হয়। 


ফলে প্রতিদিন রামপুরার বেটার লাইফে ফারুক ভাইয়ের আসা এবং আমাদের সঙ্গে দেখা হওয়াটায় ছিল বাধ্যবাধকতার মতো। অনেক সময় আমাদের পকেটে টান পড়ে গেলে ফারুক ভাইয়ের পকেট ছিল অবারিত। বলা দরকার, এখানে আমি, করিম ও জিয়াউর রহমান সুমন নিত্যদিন বসতাম। অনিয়মিত হাজির হতেন আহমেদ সিরাজ। এই অস্থায়ী বসাবসির মাঝেই একদিন পল্টনে সম্পাদক সায়েম ফারুকীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হলো। পত্রিকা প্রকাশের জন্য আমাদের প্রস্তুতির সর্বশেষ তথ্য অবহিত হয়ে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন বলে ধারণা করি। সে-কারণে হয়তো তিনি আনন্দচিত্তে আমাদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করলেন। সেই দিনই তার কাছে হস্তান্তরিত হলো পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রজেক্ট প্রোফাইলসহ যাবতীয় কাগজপত্র। তখনো পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করিম আহমেদ ছাড়া আমরা কেউ জানি না বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। তবে জানলাম কদিন পরেইÑ যখন বনানীর নাবিল হাউজে পত্রিকার ক্যাম্প অফিসের জন্য দুটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হলো। একটি মাত্র কম্পিউটার দিয়ে শুরু হলো প্রাথমিক কাজকর্ম। সময়টা ছিল হাল্কা শীতের মাস। এমনই এক মিষ্টি রোদেলা সকালে চমৎকার এক স্যুট পরে গ্রাফিক্সের রাজ্জাক ভাই হাজির হলেন অফিসে। সেদিন থেকে যেন কাজকর্মের গতি আরও বেড়ে গেল। তখন এসব কাজের জন্য পকেট মানি না পেলেও আনন্দের কমতি ছিল না। অবশ্য, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের জন্য প্রকাশকের তরফ থেকে যৎসামান্য বরাদ্দ ছিলÑ তিনি (ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক) তা থেকেই আমাদের অল্প-স্বল্প দিতেন। এমনি করেই দিন চলেছেÑ কাজ এগোচ্ছে। একদিন হঠাৎ শুনলাম, বনানীরই চেয়ারম্যানবাড়িতে ক্যাম্প অফিস নেওয়া হয়েছেÑ সাজসজ্জার কাজ চলছে। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লোকেশন জেনে নিলেন, ছুটলাম অফিস দেখতে। দেখে ভালো লাগল। সুন্দর একটি ফ্ল্যাট। ডেকোরেশন চলাকালীনই আমরা এখানে চলে এলামÑ কাজের তত্ত্বাবধান করতে হবে তো! ডেকোরেশন শেষে শুরু হলো ওয়ার্ক স্টেশন স্থাপনের কাজ। আগেই সিদ্ধান্ত ছিল আমিসহ বার্তা বিভাগে কয়েকজন এবং গ্রাফিক্সের কয়েকজন ডামি পর্যায়ে থাকবেন। সেভাবেই সবাই যোগ দিলেন। তিনটি প্রশস্ত কক্ষের একটিতে প্রকাশক-সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একটিতে গ্রাফিক্স-অন্যটিতে আমি, অনিল দা’ এবং নগর সম্পাদক শাহিন করিম বসতাম। বাইরে নিউজ রুমের এক ডেস্কে বসতেন ইসহাক ফারুকী। সে সময় চিফ রিপোর্টারের দায়িত্বে ছিলেন উৎপল দাশগুপ্ত। তখন মাত্র ডেকোরেশনের কাজ চলছিল। পাশাপাশি জায়গাও ছিল স্বল্প। তাই চিফ রিপোর্টারকে নিউজের ডেস্কে বসেই কাজ সম্পাদন করতে হতো। ফিচারের দায়িত্বে থাকা সদাহাস্যোজ্জ্বল ফারুকী ভাই পুরো অফিস মাতিয়ে রাখতেন সবসময়। ডিজিটালেও তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। শুরু হলো ডামি। কখনো সাদা-কালো, কখনো রঙিন। রঙিন কাগজ মাঝেমধ্যেই বিশেষ বিশেষ জায়গায় যেত। ডামি প্রকাশের ফাঁকে ফাঁকে ডিএফপিতে দৌড়ঝাঁপ চলতে থাকল। কয়েকদিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সঙ্গে আমাকেও যেতে হতোÑ আবার দিনকয়েক আমাকে একাও যেতে হয়েছেÑ মাঝে মাঝে মার্কেটিং ম্যানেজার আতিয়ার সাহেবও শরিক হয়েছেন। কর্মকর্তাদের কক্ষ থেকে বেরিয়ে কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিজাম মুন্সীর কক্ষে এসে বিশ্রামের সুযোগ নিতাম নিয়মিতই। মুন্সীর আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল নাÑ কখনো চা-বিস্কিট না খেয়ে কেউই আসতে পারতাম না। মাঝেমধ্যে অফিস ক্যান্টিনে লাঞ্চ না করিয়ে ছাড়ত না। আজকের দিনে মুন্সীকেও মনে পড়ে বিশেষভাবে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মহান আল্লাহর মেহেরবাণীতে একদিন মিডিয়া হয়ে গেল। এর মাঝেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলতে থাকে জোরেশোরে। হোটেল শেরাটনে বর্ণাঢ্য অয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবার প্রশংসাধন্য হলো। অনুষ্ঠানের প্লেকার্ড, ফেস্টুনসহ অপরাপর সব প্রচার-স্লেøাগানে যৎসামান্য মেধা খাটানোর সুযোগ পেয়েছিলাম বলে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় চেয়ারম্যান সাহেব এসে যত দ্রুতসম্ভব কাগজ বাজারে দেওয়ার তাগিদ দিলেন। বনানীর সেঞ্চুরি টাওয়ারে নতুন অফিসের সাজসজ্জা শেষে শুরু হলো লোকবল নিয়োগের পালা। সেই লোকবলের মেধাবৃত্তিক শ্রমে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ব্যাপকসংখ্যক পাঠকের দরবারে উপস্থিত হলো রূপালী বাংলাদেশ। আলহামদুলিল্লাহ, উদ্বোধনী সংখ্যা পাঠকসমাদৃত হলো। পর পর তিন দিনের বিশেষ আয়োজন রীতিমতো সাড়া ফেলল। ছয় মাসের মাথায় বার্তা সম্পাদক অনিল দা’ ভালো সুযোগ পেয়ে চলে গেলে ওই পদে যোগ দিলেন এস আই শরীফ। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে রূপালী বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। নবযাত্রার এই ধারাবাহিকতায় বছর পার করে আজ দুই বছরে পা রাখল প্রিয় পত্রিকা। আমরা, সংবাদকর্মীরা আজ আনন্দে উদ্বেলিত। অনিল দা’, ইসহাক ফারুকী, সুমন মোস্তফা, মেহেদী আজাদ মাসুম ও শাহিনুর ইসলাম সানুসহ যারা ইতোমধ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছেনÑ এই শুভক্ষণে তাদের স্মরণ করি। কারণ রূপালী বাংলাদেশের পাতায় পাতায় তাদের শ্রম-ঘাম আছে। পত্রিকার এই শুভদিনে সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা।

লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, রূপালী বাংলাদেশ

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!