আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া দলটির কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কার্যক্রমের মধ্যে সাইবার স্পেসে সংঘটিত কার্যক্রমও রয়েছে।
সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মতো দলটির সহযোগী সংগঠনের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে চিঠি দেবে সরকার। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের যেসব ওয়েবসাইট আছে, সেগুলোকেও বাংলাদেশে ‘ব্লক’ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, পরিপত্র জারির পর এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (১০ মে) রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। সেই বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।
সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বৈঠক শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা রাখবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে সাইবার স্পেসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। আর এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। পরিপত্র জারির পর ফেসবুক, ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পেজ, চ্যানেল ও অ্যাকাউন্ট বন্ধে চিঠি দেওয়া হবে উল্লেখ করে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের (শফিকুল আলম) সাথে কথা হয়েছে। পরিপত্র জারির অপেক্ষায় আছি। এটা জারি হলে ফেসবুক, ইউটিউব এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বিটিআরসির মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হবে। ফেসবুক এবং ইউটিউবকে জানানো হবে যে, তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের যেসব পেইজ বা চ্যানেল আছে, সেগুলো যেন তারা সরিয়ে নেয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা যুবলীগের যেসব ওয়েবসাইট আছে, সেগুলো বাংলাদেশে ব্লক করে দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সেগুলো ব্লক করে দেব। তবে এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হবে পরিপত্র জারি হলে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো থেকে বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারবিরোধী প্রচার চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক কনটেন্টও প্রকাশিত হচ্ছে সেসব পেজ ও চ্যানেল থেকে।
ফেসবুক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেরিফায়েড পেজে প্রায় ৪০ লাখ অনুসারি রয়েছে আওয়ামী লীগের। ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ইউটিউবে আওয়ামী লীগের চ্যানেলে সাড়ে চার লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার এবং প্রায় দেড় হাজার ভিডিও রয়েছে। আওয়ামী লীগের ইউটিউব চ্যানেলটিও ভেরিফায়েড। তবে টিকটক আইডি ভেরিফায়েড না। টিকটকে আওয়ামী লীগের ৩০ হাজারের কিছু বেশি ফলোয়ার রয়েছে। আর মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার তথা এক্সে সাড়ে ছয় লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলটির সাথে যোগাযোগের জন্য টুইটারে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া আছে, যেটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের একটি নম্বর। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় রয়েছে তাদের ওয়েবসাইট। অন্যদিকে ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রয়েছে প্রায় ৯ লাখ অনুসারী।
আপনার মতামত লিখুন :