টানা মেয়াদের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুতের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে জরুরিভাবে চালু করেছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বিনা টেন্ডারে দায়মুক্তি আইন বা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের নামে এসব কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে অনেক আগেই। এখন চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু তবু গলার কাঁটার মতো এসব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পালছে সরকার।
ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারের পক্ষ থেকে গচ্চা যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। যেগুলোর বেশির ভাগেরই মালিক তৎকালীন সরকারের নিকটাত্মীয়রা। স্বজনপ্রীতির খাতিরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে হাতিয়ে নিয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সামিট গ্রুপই ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে আয় করেছে ১৪ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। সামিটের অন্তত ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করে বছরের পর বছর আদায় করছে ক্যাপাসিটি চার্জ।
অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ আইন বাতিল করলেও এসব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চাইলেও বন্ধ করতে পারছে না। আর এর মূল কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের চাপ। খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা পর্যন্ত স্বীকার করেছেন এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে গেলেই ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এতে করে সরকারকে দিনের পর দিন পোহাতে হচ্ছে বড় রকমের আর্থিক ঘাটতি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদই বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ক্যাপাসিটি চার্জ দেয় ৩৬ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কিছু কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিমাণ খুবই নগণ্য। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কোটি কোটি টাকা এখনো সরকারকে গচ্চা দিতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, সামিটের অন্তত ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্ট, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৫৯০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের এসএস পাওয়ার প্লান্ট, ইউনিক ও রিলায়েন্সের তিনটি গ্যাসভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র গত বছর উৎপাদনে এলেও গ্যাস সংকটে কেন্দ্রগুলো প্রায় প্রতিদিনই বন্ধ থাকে। মাঝে মাঝে গ্যাস পেলে কেন্দ্রগুলো আংশিক চালানো হলেও তা একেবারেই নামেমাত্র। মাত্র ছয় মাসেই ইউনিকের কেন্দ্রটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে খরচ হয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা। ২২ বছর মেয়াদের এসব কেন্দ্র ২০৪৫ সাল পর্যন্ত চলবে। পটুয়াখালীতে চীন-বাংলাদেশের আরও একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। এর চুক্তি শেষ হবে ২০৫০ সালে। নির্মাণাধীন আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলো ২০২৬-২৭ সালের দিকে চালু হবে। চলবে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত। এর আগ পর্যন্ত এসব কেন্দ্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে টানতে হবে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা।
জানা যায়, ২০১০ সালে দায়মুক্তি আইন বা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ীদের উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। আর এসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ সক্ষমতায় ব্যবহার করা হবে এমন শর্তে লাইন্সেস দেওয়া হলেও এসব কেন্দ্র গড়ে চলেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলো বছরের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই অলস বসেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের স্বার্থে বছরের পর বছর সময় বাড়িয়েছে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর। অর্থাভাবে যখন দেশের অন্য খাতগুলো ধুঁকছিল, তখনো শুধু কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থে এগুলোকে টিকিয়ে রেখেছিল বিগত সরকার।
বিগত সরকার বিতর্কিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার ওরিয়ন গ্রুপকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ ঢাকা লিমিটেডের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়। পিপিএ অনুসারে, চুক্তি-পরবর্তী ৪৫ মাস বা ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। কিন্তু ওরিয়ন গ্রুপ নির্ধারিত সময়ে উৎপাদন তো দূরের কথা, নির্মাণকাজই শুরু করতে না পারায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাতারবাড়ি এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয়। পরপর কয়েকবার সময় পরিবর্তন করে অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। যেটির কোনো প্রয়োজনই নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার ঋণে নির্মিত খুলনা ১৫০ মেগাওয়াটের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে উৎপাদন করেছে সক্ষমতার মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ। একই অঞ্চলে ১৫০ মেগাওয়াটের ডুয়েল-ফুয়েল আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও বসে রয়েছে। যেটির নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। আর খুলনা ২২৫ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও উৎপাদন করতে পারছে না জ্বালানির অভাবে। কিন্তু গত ১১ বছরে ওই কেন্দ্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারকে দিতে হয়েছে ১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। এটির মেয়াদ শেষ হবে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত। যদি উৎপাদন না-ও করে, তারপরও ওই সময় পর্যন্ত কেন্দ্রটিকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে ডজনখানেক কোম্পানি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তার নির্দেশনায়ই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেওয়া হতো পছন্দের কোম্পানিকে। বিশেষ আইনের সুযোগ নিয়ে টেন্ডার ছাড়াই নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে চুক্তি সই হতো, প্রয়োজন না থাকলেও মেয়াদ বাড়ানো হতো। এমনই সুবিধা পাওয়া কেন্দ্রগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল। তাদের ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি ২০১০ সালের আগস্টে উৎপাদনে আসে। কেন্দ্রটির জন্য অ্যাগ্রিকোর বিনিয়োগ ছিল ৫৬০ কোটি টাকা। তিন বছর মেয়াদি কেন্দ্রটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চালানো হয়। এই আট বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে ২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, যা বিনিয়োগের প্রায় সাড়ে চার গুণ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে শীর্ষে ছিল সামিট গ্রুপ। বর্তমানে গ্রুপটির ১ হাজার ৯৮১ মেগাওয়াটের আটটি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনছে পিডিবি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের ঘনিষ্ঠদের এই ব্যবসায়ী গ্রুপ গত দেড় দশকে শুধু বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে আয় করেছে ১৪ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ইউনাইটেড গ্রুপ পাঁচটি কেন্দ্রের জন্য ১৫ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। সামিট আর ইউনাইটেডের যৌথ বিদ্যুৎ কোম্পানি খুলনা পাওয়ারে (কেপিসিএল) দুই গ্রুপের ৩৫ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে। কেপিসিএল এ পর্যন্ত চার্জ নিয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপ বাংলা ক্যাট পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে ৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলা ক্যাটের ৪৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। তা থেকে আরও কয়েকশ কোটি টাকা নিয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ডরিন গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এ পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মোহাম্মদী গ্রুপ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৩ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে। এ ছাড়া হোসাফ গ্রুপ ৫ কেন্দ্রের জন্য ১৫ বছরে ৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, কনফিডেন্স গ্রুপ ৪ কেন্দ্রের জন্য ২ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, ইয়ুথ গ্রুপ তিনটি কেন্দ্রের জন্য ২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, ম্যাক্স গ্রুপ ২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, বারাকা গ্রুপ ২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, প্যারামাউন্ট ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা, শিকদার গ্রুপ ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, আনলিমা গ্রুপ ১ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, এনার্জিপ্যাক ১ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা, সিনহা গ্রুপ ১ হাজার ৪১০ কোটি টাকা এবং রিজেন্ট গ্রুপ ১ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এসব চিত্র। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়ে কমিশন বাণিজ্য হয়েছে। এর মাধ্যমে ৩০০ কোটি ডলার নয়-ছয় হয়েছে। বিনা দরপত্রে চুক্তি করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকবার চুক্তি নবায়নের সময়ও তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি দেওয়া হয়েছে।
ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্যও। ২০১৩ সাল থেকে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করা হয়। এখন সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। আদানির বিদ্যুৎ বাদে ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে আমদানির পরিমাণ ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ কিনতে গত ১১ বছরে খরচ হয়েছে ৪১ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ১৬ হাজার ১০১ কোটি টাকা। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিগুলোর কয়েকটির মেয়াদ ২০৩৩ ও একটির ২০৩৯ সালের দিকে শেষ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো রামপাল, পায়রা, এস আলম, আদানির মতো বড় কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এসব কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা বেশি, ক্যাপাসিটি চার্জও বেশি। আদানি গ্রুপ দেড় বছরেই ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে ৫ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা তিন বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে ১২ হাজার ৪২ কোটি টাকা। চালুর পর বেশির ভাগ সময় বসে থাকা (চলেছে সক্ষমতার ২১%) বাঁশখালীর এস আলম কেন্দ্রটি এ পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে ৩ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ১ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো ২০৪৮ সালের দিকে বন্ধ হবে। বিদ্যুতের চাহিদা সেভাবে না বাড়লে আরও দুই দশক ধরে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা টানতে হবে পিডিবিকে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখনই বন্ধ করা হবে কি না তা স্পষ্ট না হলেও এটি বন্ধ করা জরুরি উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ২০০৯-১০ সালের বিদ্যুৎ খাত এবং এখনকার বিদ্যুৎ খাত এক নয়। তখন জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তিগুলো ছিল তিন থেকে পাঁচ বছরের। কিন্তু এরপর এগুলোর সঙ্গে একই শর্তে কেন চুক্তি নবায়ন করা হলো আমি বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, নো ইলেকট্রিক, নো পে বলা হলেও এই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পেছনে বাজেটের একটা বড় পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিগত সরকার কতিপয় ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে বছরের পর বছর কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে গেছে। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিশেষ আইন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাই আমরা বলব, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের যেন আর মেয়াদ বাড়ানো না হয়। আর ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয়টা নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসে।
তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান দাবি করেছেন, এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে কুইক রেন্টালের এমন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র যেগুলো উৎপাদনে ছিল না। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, কুইক রেন্টালের বাকি কেন্দ্রগুলোও বন্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আপনারা জানেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ বিধান বাতিল করেছে। এই আইনের অধীন সম্পাদিত বিদ্যুৎ চুক্তিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই অন্য কেন্দ্রগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বা বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের কোনো চাপ রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঠিক চাপ না যেগুলোর সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়নি সেগুলো রান করছে। কিন্তু বিশেষ আইন তো বাতিল তাহলে এসব চুক্তি বাতিল হলো না কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কিছু চাপ তো রয়েছেই। তবে আমরা আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই করব না। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্র নিয়ে অভিযোগ পাই তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।