গ্রাম একসময় তাকিয়ে ছিল তাচ্ছিল্যের চোখে, ‘পোকা চাষ করে আবার টাকা রোজগার হয় নাকি?’ কিন্তু সেই পোকা এখন বাঁচাচ্ছে মাছ চাষের খরচ, দিচ্ছে বাড়তি আয়, হচ্ছে পরিবেশ রক্ষাও। হ্যাঁ, আমরা বলছি কালো সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই নিয়ে স্বপ্ন দেখা নওগাঁ সদরের উদ্যোক্তা আহসান হাবিবের গল্প।
নওগাঁ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত উলিপুর গ্রামের কৃষক হাবিব এখন পরিচিত ‘পোকাচাষি হাবিব’ নামে। ইউটিউব থেকে ধারণা নিয়ে শুরু করেছিলেন এই ভিন্নধর্মী খামার। আজ তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, আশপাশের মানুষদের জন্যও হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা।
২০১৯ সালে ইউটিউব ভিডিও দেখে কালো সৈনিক পোকার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বুঝতে পারেন হাবিব। তখন মাছ চাষে ব্যয় কমাতে বিকল্প খুঁজছিলেন তিনি। সেই প্রেরণা থেকেই ২০২৪ সালে পিকেএসএফের সহযোগিতায় মৌসুমী আরএমটিপি প্রকল্পের আওতায় খামারটি আরও সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার খামারে প্রতি মাসে উৎপাদিত হয় ২৫০ থেকে ২৬০ কেজি লার্ভা। মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করেও আয় করছেন মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
কালো সৈনিক পোকা চাষে ব্যবহার হয় ফেলে দেওয়া খাবার, বাসাবাড়ি ও হোটেলের উচ্ছিষ্ট, পচনশীল ফলমূল ও শাকসবজি। এসব সংগ্রহ করে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে সেই বর্জ্যইে জন্ম নেয় প্রোটিনসমৃদ্ধ লার্ভা, যা মাছের জন্য প্রাকৃতিক ও কার্যকর খাদ্য। বাজারে এই লার্ভা বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে।
আহসান হাবিব জানান, ‘এই পোকার প্রোটিন কনটেন্ট ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ বাজারে যে খাবার কিনি, সেগুলোতে প্রোটিন নামেই মাত্র, ব্যবহারে ফারাক বোঝা যায়।’
তিনি আরও জানান, শুরুর দিকে গ্রামের লোকজন হাবিবকে ‘পাগল’ ভাবত। কিন্তু তার সাফল্য এখন বদলে দিয়েছে স্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি। মাছ চাষি রফিকুল ও রাজা জানান, ‘হাবিব ভাইয়ের কাজ দেখে আমরাও এখন এই পোকা চাষে আগ্রহী। কম খরচে পুষ্টিকর খাবার পেলে মাছ চাষে লাভ হবে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. বায়েজিদ আলম বলেন, ‘এই পোকা শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, এটি আবর্জনার মধ্য থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস শোষণ করে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। আমরা মাছ চাষিদের মধ্যে এই পোকার উপকারিতা ছড়িয়ে দিতে সচেতনতা তৈরি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি গবেষণার মাধ্যমে যদি লার্ভা পাউডার আকারে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা যায়, তাহলে দেশজুড়ে মাছ চাষিদের জন্য এটি হবে বিপ্লবী এক সমাধান।’
নিজের অর্জনকে বড় করে দেখতে চান না হাবিব। তবে তিনি চান এর চাষপদ্ধতি ছড়িয়ে যাক সারা দেশে। ‘যে জিনিস একসময় অপচয় ছিল, এখন তা আয় আর পরিবেশ রক্ষার হাতিয়ার। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?’ গর্বের সঙ্গে বলেন তিনি।