শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:০৭ এএম

দুদকে ১৩৫ আওয়ামী দোসর আইনজীবী এখনো বহাল

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:০৭ এএম

দুদকে ১৩৫ আওয়ামী দোসর  আইনজীবী এখনো বহাল

ছাত্র-জনতার রক্তেভেজা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১১ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ দেওয়া ১৩৫ জন আওয়ামী দোসর আইনজীবী এখনো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বহাল রয়েছেন। দুদকের দায়ের করা মামলাগুলো পরিচালনার জন্য সারা দেশের জেলা বার ও উচ্চ আদালতে তারা রয়েছেন। এসব  আইনজীবীকে সরিয়ে এখনো নতুন নিয়োগ দিতে পারেনি দুদক।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে দুদক প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিলেও এখনো সেই নিয়োগের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বরং হচ্ছে, হয়ে যাবে বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। এতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গতি হারাচ্ছে দুদকের মামলাগুলো। মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তারা কমিশন এবং ঊর্ধ্বতনদের কাছে আওয়ামী শাসনামলে স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট এবং তৎকালীন আইনমন্ত্রীর অনুগ্রহে নিয়োগ পাওয়া প্যানেল আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে গাফিলতি, আদালতে অনুপস্থিতিসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। একই সূত্র মতে, দুদকের মামলা পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ আইনজীবীদের কাছ থেকে তালিকাভুক্তির আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। যারা আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনগুলো লিগ্যাল শাখায় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

দুদক উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার হলেও এখনো প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ হয়নি। তিনি বলেন, আইনজীবী প্যানেল নিয়োগের লিগ্যাল সাইডটি যিনি দেখাশোনা করছিলেন, তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। নতুন করে এখনো কেউ যোগদান করেননি। আশা করছি, দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে।

দুদক প্রধান কার্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, উচ্চ আদালতসহ সারা দেশের আদালতগুলোতে দুদকের মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগকৃত ১৩৫ জন আইনজীবীর মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্টের পর ৩-৪ জন আইনজীবী নিজ থেকে পদত্যাগ করেছেন। প্রধান প্যানেল ল-ইয়ার খোরশেদ আলম খান দীর্ঘদিন আদালতে আসছেন না। মোশাররফ হোসেন কাজলসহ অধিকাংশ আইনজীবী আদালতে অনুপস্থিত কিংবা অনিয়মিত থাকায় মামলাসংক্রান্ত কাজে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী আইনজীবী ফোরাম কিংবা দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কেউ কেউ  ৫ আগস্টের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন।

দুদক জানিয়েছে, উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য প্রধান আইনজীবী হিসেবে আছেন খোরশেদ আলম খান। তার সঙ্গে ছিলেন আরও ১৫ আইনজীবী। খোরশেদ আলম খান দুদকের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে এই পদে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী (বর্তমানে হত্যা মামলাসহ দুর্নীতি ও জ্ঞাত বহির্ভূত মামলায় কারান্তরীণ) আনিসুল হক। যিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দুদকের ফরমায়েশি মামলা দিয়ে হয়রানি করিয়েছেন। তারই বিশ্বস্ত মোশাররফ হোসেন কাজল ঢাকার বিশেষ জজ কোর্টে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন।

অপরদিকে খোরশেদ আলম খান হাইকোর্টে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের রায়ের সাজার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদনসহ নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়া সাজা খাটলেও শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্যরা খালাস পেয়েছেন।

এদিকে নুতন নিয়োগ প্রসঙ্গে জানা গেছে, দুদক যেসব যোগ্যতায় আইনজীবীর আবেদন আহ্বান করেছে তা পূরণ করা কঠিন এবং আর্থিক ব্যয় সাপেক্ষ। আইনজীবীদের মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা, আইনজীবীর করা মামলার রায় হওয়া সার্টিফাইড কপি দিয়ে আবেদন করতে হবে। তা ছাড়া বিজ্ঞপ্তির শর্ত নিয়েও অনেকের আপত্তি রয়েছে। অন্যদিকে বিজ্ঞপ্তিতে দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনায় সুপ্রিম কোর্ট ও সারা দেশে জেলাভিত্তিক সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে কেস টু কেস ভিত্তিতে প্যানেল আইনজীবী বা পিপি নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হলেও শর্ত নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে।

কমিশনের ওয়েবসাইটে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনের সচিব বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাড়ে ৪ মাস পার হলেও এখনো দুদক আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেনি।

জেলা পিপি নিয়োগের যোগ্যতায় বলা হয়েছে, বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবী হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ আদালতসমূহে ন্যূনতম ১০ বছর সক্রিয়ভাবে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আইনজীবী হিসেবে পরিচালিত দায়রা জজ ও বিশেষ জজ আদালতে ন্যূনতম ১০টি মামলা বা আপিল নিষ্পত্তির অভিজ্ঞতা (এন আই অ্যাক্ট ও দ-বিধির ৩৮৫/৩৮৭ ধারার মামলা বাদে) থাকতে হবে। তন্মধ্যে ন্যূনতম একটি হত্যা বা দুর্নীতি মামলা, দায়রা আদালতে একটি আপিল দায়েরকৃত থাকা আবশ্যক।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের যোগ্যতায় বলা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগে ন্যূনতম ১০ বছর সক্রিয়ভাবে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আইনজীবী হিসেবে পরিচালিত হাইকোর্ট বিভাগ বা আপিল বিভাগে ন্যূনতম ১০টি মামলা নিষ্পত্তির অভিজ্ঞতা (জামিন বাদে) থাকতে হবে। তন্মধ্যে ন্যূনতম একটি আপিল ও একটি ফৌজদারি রিভিশন দায়েরকৃত থাকা আবশ্যক।

অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের ক্ষেত্রে আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিলযোগ্য। তবে দায়রা জজ হিসেবে ন্যূনতম ১০টি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদানের অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। মামলা পরিচালনার জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত হারে পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের পদে থাকলে, কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত হলে, নৈতিক স্খলনের দায়ে চাকরিচ্যুত হলে, কোনো উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী হলে, ঋণখেলাপি বা বিলখেলাপি হলে তারা প্যানেল আইনজীবী হিসেবে অযোগ্য বিবেচিত হবে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বলেন, দুদক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বুঝতে সক্ষম না হলে তা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন, তারা এ দেশে আওয়ামী লীগের লুটতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে। কমিশন ১১ মাসেও আওয়ামী লীগের অনুগত আইনজীবী পরিবর্তন করতে না পারা দুঃখজনক। পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে দুদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার মর্যাদা হারাবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!