শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ১১:১০ পিএম

আলজাজিরার অনুসন্ধান স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনের শেষ মুহূর্তের ভয়ংকর চিত্র ফাঁস

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ১১:১০ পিএম

আলজাজিরার অনুসন্ধান   স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনের  শেষ মুহূর্তের ভয়ংকর চিত্র ফাঁস

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দমাতে ‘ওপর থেকে’ অর্থাৎ হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও শেখ হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন দমন করতে ‘প্রাণঘাতী শক্তি’ প্রয়োগের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন। একাধিক গোপন ফোনালাপ, অভ্যন্তরীণ নথি এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি এই প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে সরকারের দমনমূলক নীতির ভয়াবহ রূপ।

চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার অনুসন্ধানে। আলজাজিরার দাবি, তাদের হাতে এসেছে গোপনে রেকর্ড করা একাধিক ফোনালাপ, যেখানে শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ‘ওপেন অর্ডার’ দেওয়ার কথা বলেছেন। 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বুধবার ‘জুলাইয়ে হাসিনার ৩৬ দিন (ঐধংরহধ ৩৬ উধুং রহ ঔঁষু)’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশ করেছে। এতে গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গোপন নির্দেশনার ভয়ংকর বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। 

প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে ফোনে বলেন, ‘আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবেÑ আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম।

আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’ অন্য একটি রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনার কণ্ঠে শোনা যায়, ‘যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটি ওপরে থেকেই হচ্ছে... এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে।’

আলজাজিরা জানায়, টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলা ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলনে কমপক্ষে ১৫০০ জন নিহত হন এবং আহত হন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সরকারি বাহিনী প্রায় ৩০ লাখ রাউন্ড গুলি চালায়।
প্রামাণ্যচিত্রে এক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলা হয়, বহু আন্দোলনকারী হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলিতে নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ও নজিরবিহীন এক দমন-পীড়ন।

একটি ফোনালাপে পতিত হাসিনা তার এক কর্মকর্তাকে বলেন, ‘এবার আর কোনো কথা নাই। এবার একবারে শুরু থেকেই দিবা। তোমাদের লোকজন যেন গলির মধ্যে থাকে। যখন আন্দোলনকারীদের তাড়া করা হবে, তারা ওখানেই ঢুকবেÑ তখন যা যা করতে হবে, করবা।’

আরেকটি ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনকারীদের দমাতে কীভাবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যেখানেই কোনো জমায়েত, ওপর থেকে শুরু হবে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে কয়েকটা জায়গায়। এখন ওরা (নিরাপত্তা বাহিনী) প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে। যেখানেই পাবে, সোজা গুলি করবে।’

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আলজাজিরাকে জানান, ‘এই অভিযানের একটি কোডনাম ছিল ‘অপারেশন ক্লিন ডন’। ড্রোন দিয়ে খোঁজ করে যেখানে সবচেয়ে বেশি আন্দোলনকারী জড়ো হয়েছিল, সেখানে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাদের হত্যা করা হয়।’

আলজাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কীভাবে আন্দোলনের সময় জুলাইয়ের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তার গুলি করা ও মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা নিহত ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়েও রয়েছে বিস্ফোরক তথ্য। আলজাজিরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাঁচবার পরিবর্তন করা হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য হুমকি ও ঘুষের আশ্রয় নেওয়া হয়। আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি প্রসঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ফেঁসে যাচ্ছে যে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলছে। আমাকে পাঁচবার রিপোর্ট লিখতে হয়েছে। প্রতিবার রিপোর্ট লিখি, জমা দিতে যাই, পুলিশের মনঃপূত হয় না।’ 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ফোনে রিপোর্ট সংগ্রহে তদবির করেন। পরবর্তীতে আতঙ্কগ্রস্ত পরিবারকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাধ্য করা হয়।

আলজাজিরা জানায়, ফাঁস হওয়া সরকারি নথিপত্রে প্রমাণ মেলে যে, সরকার পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে সহিংসতার দৃশ্য ও তথ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টির বাইরে রাখার চেষ্টা করেছিল। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রতিবেদন শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থানের একটি নির্মম দলিল হয়ে থাকবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!