শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:৩৩ এএম

সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিরা সাগরপথে যান ইউরোপে

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:৩৩ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী দেশের তালিকায় এখন শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৯ হাজার ৭৩৫ জন বাংলাদেশি এভাবে ইতালি প্রবেশ করেছেন। গত এক যুগে এই পথে অন্তত ৭০ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন বলে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

জানা গেছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এভাবে ইতালি প্রবেশ করতে গিয়ে লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি হয়ে অনেক বাংলাদেশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে অর্থ, ঘটছে প্রাণহানিও।

তবে এত কিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়ায় যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বেশির ভাগ সময় মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ অন্তত ১০-১২টি জেলার বাসিন্দা। তারা অধিকাংশই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করে দালালদের ফাঁদে পড়েন। প্রতিশ্রুত চাকরির বদলে তাদের লিবিয়ায় আটকে নির্যাতন, জিম্মি করে অর্থ আদায় এবং নানা নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালেই মানব পাচার আইনে নতুন ১ হাজার ৩৪টি মামলা হয়েছে। বর্তমানে মানব পাচারসংক্রান্ত মোট ৪ হাজার ৩৬০টি মামলা ঝুলে আছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬টি মামলা তদন্তাধীন এবং ৩ হাজার ১৪টি বিচারাধীন। অনেক মামলায় বিচার সম্পন্ন হলেও অপরাধীরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় আজ বুধবার পালিত হবে আন্তর্জাতিক মানব পাচারবিরোধী দিবস। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ ৩০ জুলাইকে মানব পাচারবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানব পাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার’।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুটে ইউরোপগামী অভিবাসীদের শীর্ষে। লিবিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের ক্যাম্পে রেখে নির্যাতন, টাকা আদায়, এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে। দালালেরা এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, মামলা হলেও বিচার হচ্ছে না।

ব্র্যাকের গবেষণা অনুযায়ী, এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ৬০ শতাংশ ভালো চাকরির প্রলোভনে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু ৮৯ শতাংশ কোনো কাজ পান না, বরং ক্যাম্পে বন্দি হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার, ৫৪ শতাংশ তিন বেলা খাবার পাননি এবং ২২ শতাংশ দিনে মাত্র এক বেলা খাবার পেয়েছেন।

ঢাকা থেকে দুবাই-মিশর, ইস্তাম্বুল-কাতার বা সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার পথ এখন পাচারকারীদের ব্যবহৃত প্রধান রুট। পাশাপাশি মানব পাচারের নতুন রুট ও কৌশলও বাড়ছে। বর্তমানে পাচারকারীরা হজ ভিসা, ভিজিট ভিসা, এমনকি কনফারেন্স ইনভাইটেশন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে পাচার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুবাই, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, নেপাল, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলো নতুন গন্তব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দুবাইয়ে পার্লার বা রেস্টুরেন্টে চাকরির কথা বলে নারীদের ড্যান্সক্লাবে ও যৌন পেশায় বাধ্য করা হচ্ছে। একইভাবে মালয়েশিয়ায় বিউটি পার্লারে পাঠানোর নামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত বছর আইজেএমের সহায়তায় ছয় নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়া মিয়ানমারে ‘স্ক্যাম সেন্টারে’ বাংলাদেশিদের অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক সাইবার অপরাধে বাধ্য করা হয়েছে। এমন ১৮ জন বাংলাদেশিকে ব্র্যাক উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে এখন বাংলাদেশিদের নেপালে নিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। যেহেতু নেপালে প্রবেশে অন অ্যারাইভাল ভিসা আছে, সে ক্ষেত্রে সহজে পাচারকারীরা কর্মীদের নেপালে নিয়ে যাচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বর মাসে সে দেশে ছয় মাস আটকে রাখা তিন বাংলাদেশি হবিগঞ্জের তুহিনুর ইসলাম অনিক, রহিম খন্দকার ও শাকিব আহাম্মেদকে নেপালের এ্যান্টি প্রাফিকিং ব্যুরোর সহায়তায় উদ্ধার করে দেশে ফেরত এনেছে ব্র্যাক। এ ছাড়া মানব পাচারকারীরা বর্তমানে আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, তিউনিসিয়া, রাশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, সার্বিয়ার মতো দেশ ব্যবহার করছে। 

ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এটি সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট হিসেবে পরিচিত।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই পথে অন্তত ৯২ হাজার ৪২৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এভাবে প্রবেশ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারিতে লিবিয়ায় অন্তত ২৩ বাংলাদেশির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়, যারা লিবিয়া থেকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরে ভূমধ্যসাগরে সেটি ডুবে যায়।

ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে যারা ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের বেশির ভাগ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এলাকার। তাদের ৬০ শতাংশের পরিবারকে স্থানীয় দালালেরা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু ৮৯ শতাংশই চাকরি বা কোনো কাজ পাননি। উল্টো নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছেন।  

যাত্রাপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দুবাই-মিশর হয়ে লিবিয়ায় গেছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল-দুবাই হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে কাতার হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে দুবাই-সিরিয়া হয়ে লিবিয়া এবং অল্প কিছু লোক ঢাকা থেকে সরাসরি লিবিয়ায় গেছেন।

এভাবে লিবিয়া যাওয়ার পথে ৬৩ শতাংশই বন্দি হয়েছেন। বন্দিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। বন্দিদের ৭৯ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। এ ছাড়া লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ৬৮ শতাংশই মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতা হারিয়েছেন। ৫৪ শতাংশই বলেছেন, তারা কখনো তিন বেলা খাবার পাননি। অন্তত ২২ শতাংশ দিনে মাত্র এক বেলা খাবার পেয়েছেন। 

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালে সরকার আইন করার পর থেকে মানব পাচার আইনে নিয়মিত মামলা হলেও অধিকাংশ মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। আবার যেগুলোর বিচার শেষ হচ্ছে, সেখানে আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানব পাচার মামলাসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬০টি মামলা ঝুলে আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬টি মামলা এখনো তদন্তধীন। আর ৩ হাজার ১৪টি মামলা বিচারাধীন।

বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে রোহিঙ্গাদের পাচারও থেমে নেই। ২০১২ থেকে ২০১৫Ñ এই চার বছরে বাংলাদেশ থেকে সোয়া লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়েছে, যার বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। সে সময় মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জঙ্গলে একাধিক গণকবরের সন্ধান মেলে। এরপর মাঝখানে দুই বছর মানব পাচার কমে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এরপর ফের মানব পাচার চলছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ব্র্যাক জেনেছে, বিয়ে আর চাকরির কথা বলে এখন রোহিঙ্গাদের সমুদ্র উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে। শুধু সমুদ্রপথে নয়, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও পাচারের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!