শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:২০ এএম

নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তি, তবে রয়েছে সংশয়ও

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:২০ এএম

নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তি, তবে রয়েছে সংশয়ও

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ঘটনাবহুল বছর হিসেবে বিবেচিত হবে ২০২৪ সাল। গত সাড়ে তিন দশকে দ্বিতীয়বারের মতো অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতায় থাকা কোনো সরকারপ্রধানের দেশত্যাগ এটাই প্রথম।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুলাই বিপ্লবের এক বছর পূর্তিতে আমরা যেমন কিছু অর্জন দেখছি, তেমনি অনেক ব্যর্থতাও দেখছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলন নয়। এটি গত ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তির আন্দোলনও। তবে গত এক বছরে দেশের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে নানা বিষয়ে অনিশ্চয়তা, সন্দেহ আর সেই পুরোনো দোষারোপের খেলা। নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণের ফলে দেশের রাজনীতি এখন ভোটমুখি হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তি আসলেও নানাবিধ কারণে অস্বস্তিও দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। 

সম্প্রতি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে বুধবার চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছে ইসি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে কার্যত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করল। এখন সবার দৃষ্টি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভোটের তপশিল ঘোষণার দিকে।

জুলাই ঘোষণা ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাকে ইতিমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে দলটি নির্বাচনি সড়কে ওঠার আনুষ্ঠানিক বার্তাও দিয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে মনঃক্ষুণœতা প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও বিভিন্ন দাবিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনাও চালাতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ কয়েকটি দল। নির্বাচনের আগে সংস্কার ও ছাত্র-জনতার হত্যাকা-ের বিচারসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সরকার কতটা করে, সেদিকেও নজর রাখার কথা বলছে তারা। এ ছাড়া নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে দলগুলো। 

নির্বাচনের ঘোষণা ইতিবাচক হলেও মাঠের রাজনীতিতে নির্বাচন ঘিরে সংশয় এখনো কাটেনি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে।

জুলাই অভ্যুত্থানে গণগহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ছিল গত বছরের অন্যতম আলোচিত বিষয়। চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কয়েক দিন টানা কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ছাত্র-জনতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মে অন্তবর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। তারও আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনও জারি করে। 

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে রমজান মাস শুরুর আগেই নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের তোড়জোড় শুরু হলেও নির্বাচন ঘিরে এখনো সংশয় কাটেনি বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রকাশ্য দূরত্ব এতটা বাড়েনি, যাতে নির্বাচন না হওয়ার মতো কোনো সংকট তৈরি করবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান প্রেক্ষাপট সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে দেশের মৌলিক কাঠামোর সংস্কার ইস্যুতে কয়েকটি কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই লক্ষ্যে গত মার্চ মাস থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশে ঐকমত্য তৈরির প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈঠকে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের কিছু বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করলেও অধিকাংশ বিষয়ের কাঠামোগত পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও দ্বিমত থেকেই যাচ্ছে। ফলে সংস্কারের প্রস্তাবিত বিষয়গুলো নিয়ে জটিলতাও বেড়েই চলেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, জুলাই বিপ্লবের এক বছর পূর্তিতে আমরা দেখছি কিছু অর্জন আছে এবং কিছু ব্যর্থতাও আছে। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছেÑ এত বড় একটি বিপ্লবের পর একটি দুর্বল সরকার সেদিন গঠিত হয়েছিল। একদিকে দুর্বল সরকার, অন্যদিকে এই সরকারে কিছু ফ্যাসিবাদের দোসর সুশীল রয়েছে। আমলাতন্ত্রে এখনো বিরাট অংশ ফ্যাসিবাদের দোসর রয়ে গেছে। পুলিশ বাহিনীকে রিফর্ম করতে পারিনি।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের পরে দুর্বল সরকার গঠিত হলে সেই সরকারের পক্ষে ভালো কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ‘অন্যদিকে, বেশকিছু ভালো অর্জন রয়েছে। যেমনÑ দেশে গুম-খুনের অবসান ঘটেছে। ভয়ানক সেই পুলিশি রাষ্ট্রের মতো কঠোর নজরদারি এখন নেই। জনগণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উপভোগ করছে। সবচেয়ে বড় অর্জন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেষ্টায় জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে (এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছে)। খুনিদের বিচার শুরু হয়েছে। জাতিসংঘ থেকে গণহত্যার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো এ প্রক্রিয়াকে আগামী দিনে আরও এগিয়ে নেবে। আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হব।’ 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!