বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:০২ এএম

চিরুনি অভিযানে মেলেনি প্রত্যাশিত সাফল্য

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:০২ এএম

চিরুনি অভিযানে মেলেনি প্রত্যাশিত সাফল্য

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্টের পর শুরু হয় চিরুনি অভিযান।

এ অভিযানের প্রায় ১ মাস হতে চললেও কার্যত সাফল্য মিলছে না চিরুনি অভিযানে। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চিরুনি অভিযানের গত ২৫ দিনে অন্তত ৩৪ হাজার ৭২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে বড় মাপের কোনো অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া চিরুনি অভিযান ঘোষণার আগে এবং পরে আসামি গ্রেপ্তার ও অপরাধ পরিসংখ্যানেও তেমন পরিবর্তনও হয়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তীব্র গণরোষে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পুরো পুলিশ বাহিনী, ভেঙে পড়ে শৃঙ্খলা। পুরো বাহিনীতে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক-অস্থিরতা। এরপর কেটে গেল একটি বছর। দীর্ষ এ সময়কালেও আইনশৃঙ্খলা প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নতি করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেভাবে পুলিশের ঘুরে দাঁড়ানো প্রয়োজনীয়তা ছিল, তা হয়নি। ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরছে না, পুলিশ নিজেও স্বস্তি পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘঠিতস্থলে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় না। কারণ মানসিকভাবে ভেঙে পড়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে জনতার প্রতিশোধমূলক ‘মব ভায়োলেন্স’-এর ভয় এখনো কাজ করছে। যে কারণে পুলিশ এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে পারছে না। ফলে দেশে চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের গ্রেপ্তার ও উদ্ধারসংক্রান্ত পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৩ জুলাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দেন। সেই থেকে গত ৭ আগস্ট পর্যন্ত ২৫ দিনে ৩৪ হাজার ৭২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্ট মূলে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৪ হাজার ৫৪৫ জন। অন্যান্য গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪ হাজার ১৭৫ জন। তবে চিরুনি অভিযানের আগের ২৫ দিনে অর্থাৎ ডেভিল হান্টে গত ১৮ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয় ৩৯ হাজার ৪৩৪ জনকে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্ট মূলে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৬ হাজার ৪৮১ জন। অন্যান্য গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ হাজার ৯৫৩ জন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চিরুনি অভিযানের ২৫ দিনের চেয়ে আগের ২৫ দিনে ৪ হাজার ৭১৪ জন গ্রেপ্তার বেশি হয়েছে।

আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত যৌথ বাহিনী অভিযানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু যৌথ অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, ছিনতাইকারী, কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ মোট ১৩১ জন অপরাধীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৯টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ১২টি ককটেল, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, চোরাই মালামাল ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন রাতে অনেক থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে ভাংচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। লুট করা হয় পুলিশের অস্ত্র-গোলাবারুদ। এরপর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযানের ঘোষণা দেয় সরকার।

এর আগে, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে। ওই সময় পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া এর আগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে থানার লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। নির্দিষ্ট তারিখের পরে কারো কাছে পুলিশের লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানায় পুলিশ সদর দপ্তর। এরপর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাতেও তেমন সুফল পাওয়া যায়নি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন থানা ও পুলিশের স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫৩ আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখ ৭ হাজার ২৬২টি গুলি লুট হয়। এ ছাড়া ৩২ হাজার ৫টি টিয়ার গ্যাসের শেল, ১ হাজার ৪৫৫ টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড, ৪ হাজার ৬৯২ সাউন্ড গ্রেনেড, ২৯০ স্মোক গ্রেনেড, ৫৫ স্টান গ্রেনেড, ৮৯৩ মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড এবং ১৭৭টি টিয়ার গ্যাস স্প্রে লুট হয়। সেপ্টেম্বর থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী যৌথ অভিযান চালায় অন্তর্বর্তী সরকার। সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেন। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে এখনো ১ হাজার ৩৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। লুণ্ঠিত ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২ গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি। গত ৩১ জুলাই এই তথ্য পাওয়া যায়।

গত ৯ জুলাই বুধবার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে লাল চাঁদকে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফান কেউ কেউ। যে দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এরপরই গত ১৩ জুলাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মব ভায়োলেন্সে একের পর এক নৈরাজ্য ও নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে ‘চিরুনি অভিযান’র সিদ্ধান্ত হয়। অভিযানে চিহ্নিত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মব সৃষ্টিকারী, ছিনতাইকারী, ডাকাত ও মাদককারবারিদের গ্রেপ্তারের টার্গেট নেওয়া হয়। গত ১৩ জুলাই সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী চিরুনি অভিযান শুরু করার কথা জানান।

জানা গেছে, ডেভিল হান্টের শুরুতে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা তৎপরতা শুরু করেছিল। তখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে ব্যাপক তল্লাশি কার্যক্রম দেখা গিয়েছিল। র‌্যাব-পুলিশের টহল টিমের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে আইনশৃঙ্খলায়। এতে অপরাধীদের মধ্যেও এক রকম আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। যদিও সেই অভিযানও দুই সপ্তাহ পর ঢিলেঢালা হয়ে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অন্যতম সমন্বয়ক মাকসুদ হক বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা ফিরেছে ঠিকই কিন্তু জীবনের স্বাধীনতা ব্যাহত হয়েছে। আগের মতো গুম-খুন না হলেও ছিনতাই, ধর্ষণ, প্রকাশ্য চাঁদাবাজি মানুষের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দৃঢ় না হওয়ার কারণে মব ভায়োলেন্স, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলছে। জুলাই বিপ্লবের পর শুরুর দিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি পুলিশে ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। কিন্তু তারপর থেকে প্রায় ১ বছর হয়ে গেল এখনো পুলিশে যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছি, এটা আসলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব একটা ভালো বার্তা দিচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত ছিল। 

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, চিরুনি অভিযানে প্রাপ্তি প্রায় শূন্যের কোঠায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা পর্যাপ্ত না হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরছে না, তেমনি পুলিশ নিজেও স্বস্তি পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এই আস্থার সংকট কাটাতে হবে, তাদের মনোবল বাড়াতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে অপরাধের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য শিগগিরই পুরস্কার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে আমরা একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রের সন্ধান দিতে পারবে, তাদের পুরস্কৃত করা হবে। দ্রুত এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হবে যা পরবর্তী সময়ে মিডিয়ায় জানিয়ে দেওয়া হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!