- ‘জোরপূর্বক অপুকে দিয়ে চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তির ভিডিও বানিয়েছেন ইশরাক’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুর সঙ্গে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অপুর স্ত্রী আনিশা অভিযোগ করেন, অপুকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের লোকজন তুলে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করেছেন।
এদিকে অপর এক প্রশ্নের জবাবে আফিস মাহমুদ জানান, কাজ শেষ হতে দেরি হলে ভোর রাতে রাজধানীর পূর্বাচলের নীলা মার্কেটে হাঁসের মাংস খেতে যান তিনি। তবে বেশি ভোরে নীলা মার্কেট বন্ধ থাকলে গুলশানের ওয়েস্টিনে যান।
গুলশানে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম জড়ানো নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা এখনো যেহেতু তদন্তাধীন আছে, অনুসন্ধান চলছে, তাই মন্তব্য করা উচিত না। তার পরও যেহেতু আমার নাম স্পেসিফিকেলি সেখানে এসেছে এবং আমার নামটা আসার পর আমি অবাকই হই। তিনি আরও বলেন, ‘জানে আলম অপুকে আমি চিনতাম, যখন আমি ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিলাম। ২০২২ সালে যখন আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তখন সেও ছাত্র অধিকার পরিষদ করত, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে সম্ভবত সে ছিল। তখন চিনতাম। কিন্তু গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে তার সঙ্গে আমার কখনো কথা বা দেখা হয়নি। আসিফ মাহমুদ বলেন, এ ধরনের একটা অভিযোগ আসার পর আবার আরেক জায়গা থেকে জানতে পারলাম। কিছুক্ষণ আগেও আমি ক্যাবিনেট থেকে বের হয়ে দেখলাম, একজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্ত্রী পরিচয়ে। আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি, আসলে কী ঘটনা। তিনি দাবি করেছেন, অপুকে গুম করে নিয়ে এই স্টেটমেন্ট আদায় করা হয়েছে জোরপূর্বক। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে, এটা আসলেই অত্যন্ত শঙ্কাজনক।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলন করে অপুর স্ত্রী কাজী আনিশা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জানে আলম অপুকে অপহরণ করে জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও বানানো হয়েছে। আনিশার দাবি, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জানে আলম অপু নিখোঁজ ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টায় তাকে একটি মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোরপূর্বক ভিডিও করানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আনিশা জানান, গত ৮ আগস্ট কারাগারে অপুর সঙ্গে তার দেখা হয়।
তখন অপু তাকে বলেন, ‘আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভিডিও করা হয়েছে, যেকোনো সময় তা প্রকাশ হতে পারে। কিছু করার থাকলে এখনই করো।’ বিএনপি নেতা ইশরাকের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৩১ তারিখ রাত সাড়ে ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত অপুকে যে বন্দি করে রাখল, সেখানে যে ওর স্বীকারোক্তি নিল; এই স্বীকারোক্তি নিল কারা এবং গোপীবাগে কার বাসা? ইশরাক ভাইয়ের বাসা না? অপুকে তো ইশরাক ভাইয়ের বাসার সামনে থেকেই ধরছে। কয়েকটা ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগুলো তো ইশরাক ভাইয়ের বাসাতেই। এখানে তো সন্দেহের কিছু নাই। অপুকে নিয়ে ইশরাক ভাই জোর করে এগুলা করাইসে।’
৩৫ মিনিটের ওই স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও অপুকে শিখিয়ে দিয়ে কাটছাঁট করে প্রকাশ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। স্বামীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘অপুকে সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে গোপীবাগ থেকে, আর বেলা সাড়ে ১১টায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই চার ঘণ্টায় অপুকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ আমাদের অপুর কোনো সন্ধান দেয় নাই। তারা বেলা সাড়ে ১১টার পর যখন মিডিয়া জেনেছে, তারপর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অপুকে নিয়ে ঘুরেছে। তারা অপুকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও কোর্টে উঠায় নাই।’ ৬ আগস্ট রিমান্ডের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া হলেও সেখানে অপু কোনো ব্যক্তির নাম স্বীকার করেননি বলেও জানান তার স্ত্রী।
এ ঘটনাকে সাজানো পরিকল্পনা উল্লেখ করে তার স্ত্রী বলেন, ‘অপু জানত না পরের ঘটনা কী হবে, পরে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটবে কি না। এটা পুরোটাই একটা প্ল্যান ছিল। সমন্বয়ক বা এনসিপির নেতাদের দাবিয়ে রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট দল ওদের পেছনে লেগে আছে। কারণ ওদের ব্যবহার করে অনেক বড় একটা স্বার্থসিদ্ধি করতে পারে। ‘প্রতিটি দল তাদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা লিখে তাদের দাবিয়ে রাখতে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে। সে উদ্দেশ্যে অপুকে ফাঁসানো হয়েছে। ওই বাসায় অপুকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অপুরা নিজে থেকে শাম্মি আহমেদের বাসায় যায় নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলব, অপু পুরোপুরি মিডিয়া ট্রায়ালের স্বীকার হয়েছে। রিমান্ডে দুই হাজার পুলিশ হত্যা মামলায় অপুর নাম ঢোকানোর ভয় দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও দিয়েও পুলিশ ব্ল্যাকমেইল করার হুমকি দিয়েছে। অপুকে চার দিন রিমান্ডে নিয়েছে একটা নাম বের করার জন্য। এভাবে যে কেউ তা স্বীকার করতে রাজি হয়ে যাবে।
কাজ শেষ হতে দেরি হলে ভোর রাতে রাজধানীর পূর্বাচলের নীলা মার্কেটে হাঁসের মাংস খেতে যান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে বেশি ভোরে নীলা মার্কেট বন্ধ থাকলে গুলশানের ওয়েস্টিনে যান তিনি। সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে গতকাল সাংবাদিকদের ভোর রাতে মোটরসাইকেলে করে হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাতে যখন আমার কাজ শেষ হয়ে যায়, কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়, ওই সময় আসলে বাসায় খাবার-দাবার দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। আমি বেশির ভাগ সময়ই ৩০০ ফিটে নীলা মার্কেট নামে একটা জায়গায় আছে, সেখানে যাই। সেখানে হাঁসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায়, সেখানে আমরা চার-পাঁচজন মিলে যাই।’
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘ওইটা আবার বেশি ভোর হয়ে গেলে বন্ধ থাকে। তখন ওদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়। তবে এক্সাক্ট ওই দিন আমি গিয়েছিলাম কি না, সেখানে ছিলাম কি না, সেটা আমি বলতে পারব না।’ ওয়েস্টিনে যাওয়ার দিনটি ১৭ জুলাই ছিল জানানোর পর আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে হেলমেট পরা যে কাউকে যদি আমি বলে দাবি করা হয়, এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য! আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না, কারণ এটা তদন্তাধীন।’