ঢাকা শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

অসুস্থ বাবার চোখে সন্তানের স্বপ্ন

সৈকত ম-ল, বাগেরহাট
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৩:২৫ এএম

বাগেরহাট সদর উপজেলার মুক্ষাইট গ্রামের সাহিদুল ইসলাম একসময় পরিবারের একমাত্র ভরসা, দুই সন্তানের গর্বিত বাবা এবং সবার প্রিয় হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। স্থানীয় একটি বিস্কুট কারখানায় দিনরাত খেটে সংসার চালাতেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসারটা ছিল সুখে-শান্তিতে ভরা।

কিন্তু গত এক বছরে সেই হাসিখুশি সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকার। ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হয়ে সাহিদুল আজ সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী। ঠিকমতো কথা বলতে বা নিজের যতœও নিতে পারেন না। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি কর্মক্ষম না থাকায় থমকে গেছে আয়, ঘরে নেমেছে নীরব দুর্ভিক্ষ।

তার বড় ছেলে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ (জিপিএ-৫) পেয়েছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতেও একই কৃতিত্ব দেখিয়েছিল সে। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার বা প্রকৌশলী হয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু তিন বেলা খাবারই যেখানে কষ্টে জোটে, সেখানে বই-খাতা, কোচিং কিংবা পরীক্ষার ফি জোগাড় করা এখন প্রায় অসম্ভব।

সাহিদুলের স্ত্রী রোজিনা বেগম কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘যে মানুষটা একসময় খেটে সংসার চালাতেন, আজ তিনি বিছানায়। হাতে এক টাকাও নেই। প্রতিদিন সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি লুকাই। ভয় হয়, অভাবের কারণে হয়তো আমার ছেলের স্বপ্ন থেমে যাবে। সমাজের দয়ালু মানুষগুলো এগিয়ে না এলে হয়তো স্বামীকেও হারাব, ছেলের ভবিষ্যৎও।’

প্রতিবেশী সুমা আক্তার বলেন, ‘সাহিদুল ভাই অসুস্থ হওয়ার পর তাদের ঘরে যেন অন্ধকার নেমেছে। ছেলেটি খুব মেধাবী, কিন্তু অভাব যেন তার কলম থামিয়ে দিতে চাইছে। আমরা চাই না, টাকার অভাবে তার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাক।’

আরেক প্রতিবেশী সোহেল রানা বাবু বলেন, ‘যদি সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, শুধু একটি পরিবার নয়, একটি স্বপ্নও বাঁচবে।’

চাচাতো ভাই জাকির হোসেন জানান, ‘চিকিৎসা শুরু করতে পারলেই সাহিদুলের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু টাকা নেই, জমি নেই। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করছি, কিন্তু তা খুব সামান্য। মানুষের সহযোগিতা ছাড়া তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।’

এখন সাহিদুলের পরিবার অপেক্ষা করছে, কেউ হয়তো এই খবর পড়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। একজন সমাজসেবক, কোনো দয়ালু ব্যবসায়ী কিংবা সরকারি সহায়তা, যে কারো সহানুভূতি এই পরিবারের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।

একটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি মেধাবী ছেলের ভবিষ্যৎ। সময়মতো সহায়তা মিললে সাহিদুল সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরতে পারবেন, আর তার ছেলেও স্বপ্নের পথে হাঁটা চালিয়ে যেতে পারবে।