সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

৩২ নম্বরে ফুল দিতে যাওয়া  সেই রিকশাচালকের জামিন

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

৩২ নম্বরে ফুল দিতে যাওয়া  সেই রিকশাচালকের জামিন

  • ওসির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে সরকার: প্রেস উইং 
  • গ্রেপ্তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন: আসক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর গ্রেপ্তার রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম এ জামিন দেন। এদিকে আজিজুর রহমানকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানতে ধানমন্ডি থানার ওসির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, সাধারণ নাগরিককে শোক প্রকাশ করতে আসার কারণে শারীরিকভাবে আক্রমণ ও পরবর্তীতে কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন। একজন নাগরিক কোথায় যাবে, কোথায় যাবে নাÑ তা নির্ধারণ করার অধিকার কেবল সংবিধান প্রদত্ত স্বাধীনতার মাধ্যমে নাগরিকেরই থাকবে। অন্য কেউ বা রাষ্ট্রীয় সংস্থা এটি নির্ধারণ করতে পারে না বলে জানিয়েছে আসক।

আজিজুর রহমানের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী বলেন, ধানমন্ডি থানায় করা পুরোনো হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার তার মক্কেলের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত শুনানি নিয়ে এক হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।

পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজিজুর রহমানকে আদালতে হাজির করে ধানমন্ডি থানা-পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান কারাগারে রাখার আবেদন করেন। পরে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গতকাল সকালে ১০ মাসের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে আদালতে আসেন আজিজুরের স্ত্রী চুমকি খাতুন। শুনানিকালে আদালতে বসে ছিলেন তিনি। জামিন শুনানি শেষে চুমকি খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করেন না। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ফুল দিতে গিয়েছেন। 

চুমকি বলেন, আমার স্বামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আবেগের বশে সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন। জামিন পেয়েছেন, আমি খুশি। আজিজুরের প্রতিবেশী জোবায়ের বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তিনি ফুল দিতে গিয়েছেন। তিনি ভাড়ায় রিকশাটা চালান। সাত হাজার টাকা দিয়ে রিকশা কেনার ক্ষমতা তার নেই। তার জামিন হওয়ায় আমরা পরিবারের সবাই খুশি।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে ওসির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে সরকার:

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির পর গ্রেপ্তার রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানতে ধানমন্ডি থানার ওসির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানা যায়। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে আটক রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে ধানমন্ডি থানার ওসির কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, একই সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাম্প্রতিক কর্মকা- ও বক্তব্যে কোনো অসংগতি রয়েছে কি নাÑ তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। দায়েরকৃত মামলায় আজিজুর রহমানের সম্পৃক্ততা তদন্ত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি সংশোধিত সিআরপিসির ১৭৩(এ) ধারা মোতাবেক অতিসত্বর প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়নি বরং সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মো. আজিজুর রহমানের গ্রেপ্তার ও মামলা নিয়ে অহেতুক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

ডিএমপি দাবি করছে, প্রকৃতপক্ষে মো. আজিজুর রহমানকে যে মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে তা পেনাল কোডের একটি নিয়মিত মামলা। কিন্তু অনেকেই বিষয়টিকে হত্যা মামলা হিসেবে প্রচার করছেন। যা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক।

শোক প্রকাশ করায় আক্রমণ-গ্রেপ্তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন: আসক: মানবাধিকার আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, সাধারণ নাগরিককে শোক প্রকাশ করতে আসার কারণে শারীরিকভাবে আক্রমণ ও পরবর্তীতে কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন। একজন নাগরিক কোথায় যাবে, কোথায় যাবে নাÑ তা নির্ধারণ করার অধিকার কেবল সংবিধান প্রদত্ত স্বাধীনতার মাধ্যমে নাগরিকেরই থাকবে। অন্য কেউ বা রাষ্ট্রীয় সংস্থা এটি নির্ধারণ করতে পারে না বলে জানিয়েছে আসক। গতকাল আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসক পক্ষ থেকে বলা হয়, আশ্চর্যজনকভাবে, ধানমন্ডি থানায় পূর্বে দায়েরকৃত জুলাই ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ‘সন্দিগ্ধ আসামি’ হিসাবে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

আসকের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনে দায়েরকৃত মামলায় অনেক নিরীহ নিরপরাধ নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ  পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বারবার দাবি করছে যে, জুলাই আন্দোলনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো যাচাই-বাছাই করেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কেবল শোক জানাতে আসা একজন সাধারণ নাগরিককেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিষয়টি শুধু নিন্দনীয় নয়, এটি সরকারের নিজস্ব ঘোষিত নীতি ও নাগরিকের প্রতি অঙ্গীকারেরও ঘোরতর বরখেলাপ।

আসক আরও মনে করে, শোক প্রকাশ করা বা না করা, যেকোনো বিষয়ে প্রতিবাদ, সমর্থন বা মৌনতা এবং মতপ্রকাশÑ এসব নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার দমন করা মানে সংবিধান ও মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমন-পীড়নে লিপ্ত হয় তবে তা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।

জানা গেছে, গত ১৫ আগস্টে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন রিকশাচালক আজিজুর রহমান। পরে তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ওইদিন রিকশাচালক আজিজুর রহমান বলেন, আমি কোনো দল করি না। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসি। তাই এসেছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আসিনি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই আমার হালাল টাকা দিয়ে কেনা ফুল নিয়ে এসেছি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বলেন, মামলার ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মো. আজিজুর রহমানের জড়িত থাকার বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, এই আসামি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় ধস্তাধস্তিতে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। মামলা তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!