সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ১২:০৯ এএম

পাথর লুটে প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল: পরিবেশ উপদেষ্টা

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ১২:০৯ এএম

পাথর লুটে প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল: পরিবেশ উপদেষ্টা

সিলেটের সাদাপাথর ও জাফলং থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার পৃথক অভিযানে সাদাপাথরের ১১ হাজার ঘনফুট পাথর সালুটিকর থেকে জব্দ করা হয়। এ সময় দুজনকে আটক করে যৌথবাহিনী। অন্যদিকে জাফলংয়ে অভিযান চালিয়ে ৫০টি নৌকা ধ্বংস ও দেড় হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জে টাস্কফোর্সের বিশেষ অভিযানে অস্ত্র ও মদসহ ৪ জন গ্রেপ্তার হয়। এদিকে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন পাথর লুটের ঘটনায় প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল। প্রশাসনের যোগসাজশ ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও  দেন তিনি।

সালুটিকরে ১১ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার :

সিলেটের সালুটিকর ভাটা এলাকায় যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে প্রায় ১১ হাজার ঘনফুট মাটিচাপা পাথর জব্দ করা হয়েছে। এ সময় অভিযানে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে অভিযানটি পরিচালিত হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আরডিসি আশিক মাহমুদ কবিরের নেতৃত্বে, যেখানে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও সেনাবাহিনী অংশ নেয়। ধোপাগুল সংলগ্ন সালুটিকর ভাটা এলাকার একটি ক্রাশার মিলের আঙিনায় মাটিচাপা অবস্থায় পাথর উদ্ধার করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, উদ্ধারকৃত পাথরের পরিমাণ আনুমানিক ১১ হাজার ঘনফুট। পাশাপাশি লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে অভিযান চলমান থাকবে বলেও তারা জানান। উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার ধোপাগুল এলাকায় আরেক অভিযানে আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছিল।

জাফলংয়ে অভিযানে ৫০ নৌকা ধ্বংস :

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন স্পট জিরোপয়েন্ট থেকে চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে সিলেট জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফরহাদ উদ্দিনের নেতৃত্বে দুপুর ২টা পর্যন্ত আনুমানিক ১৫০০ ঘনফুট পাথর জুমপাড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে জাফলং জিরোপয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সেই সাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য কমপক্ষে ৫০টি নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। টাস্কফোর্স অভিযানে সহায়তা করে পুলিশ ও বিজিবি।

কোম্পানীগঞ্জে টাস্কফোর্সের বিশেষ অভিযান :

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় যৌথবাহিনীর পরিচালিত বিশেষ অভিযানে দেশীয় অস্ত্র ও ভারতীয় মদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার ভোররাত পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানটি পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদের নেতৃত্বে একটি যৌথ টাস্কফোর্স টিম, যেখানে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা অংশ নেন। অভিযান শেষে জব্দকৃত অস্ত্র, মাদক এবং আটককৃত পাঁচজনকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাদের থানার হাজতে রাখা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোম্পানীগঞ্জে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক নির্মূলে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার দুই দিনের অভিযানে পিয়াইন নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৮ হাজার ৫শ ঘনফুট লুট করা পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা পাথর নদীতে প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে জাফলং জিরোপয়েন্ট এলাকায় নৌকা দিয়ে ফেলা হয়েছে।

গত শুক্রবার সকালে ৯টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সংগ্রাম বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার শহিদুল ইসলাম জাফলং বিট পুলিশের এএসআই মোবারক হোসাইনসহ পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী জানান, জাফলংয়ের জিরোপয়েন্ট থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী রাতের আঁধারে বৃষ্টির মধ্যে কিছু পাথর সরিয়ে ফেলছিল। আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত পদক্ষেপ নেই। এরপর থেকে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ-বিজিবির টহল অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেখান থেকে যে পাথরগুলো সরানো হয়েছে আমরা সেই পাথরগুলো খোঁজে বের করে সাড়ে ৯ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছি। কিন্তু পাথর লুটপাটের সাথে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

পাথর লুটের ঘটনায় প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল:

পরিবেশ উপদেষ্টা এদিকে সিলেটের সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বদলীয় ঐক্যের কারণে প্রশাসনের নিশ্চয়ই যোগসাজশ ছিল। তা না হলে তারা এখন কীভাবে বের করে যে পাথরগুলো কোথায়? আবার নীরবতাও ছিল, হয়তো তারা অত ঝুঁকি নিতে পারেনি।

তিনি জানান, সরকারের কাজ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনের। ইতোমধ্যেই ১৭টি স্থানে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই ফিল্ড পরিদর্শনে যেতে হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান অভিযোগ করেন, তার ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের ওপর হামলার পরই তিন দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে সব স্টোন ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ ও পরিবহন ধর্মঘটের হুমকিতে আবারও পাথর উত্তোলনের দাবি ওঠে।

তিনি বলেন, আজ মানুষ তার শক্তি দেখিয়েছে। লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে জনগণ দাঁড়ালে, রাজনৈতিক শক্তি যতই সমর্থন দিক না কেন, মানুষের শক্তিই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। তিনি জানান, জাফলং ও পিয়াইন নদী ২০১১ সালে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিকাল এরিয়া ঘোষণা হওয়ার পর সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকা- নিষিদ্ধ ছিল। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওই দুই নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরিবেশ উপদেষ্টা প্রশাসনের যোগসাজশ ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!