- তরিকত ও সুন্নিপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো এক হচ্ছে
- ৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং বেশ কয়েকটি অনিবন্ধিত দল নিয়ে জোটের আলোচনা চলমান
- সুন্নি জনতার ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠনে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফল এই জোট, দাবি নেতাদের
বিগত আওয়ামী সরকারের পতনের এক বছর পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ বর্তমানে নির্বাচনমুখী। নিজেদের শক্তি বাড়াতে জোট গড়তে ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ, উদ্যোগ আর দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। এসব সমীকরণের প্যাঁচে কখনো জোট সৃষ্টির সম্ভবনার পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে ভাঙনও। এসবের মধ্যে নতুন খবর, সংসদ নির্বাচনে ইসলামি শক্তির জানান দিতে দেশের সুন্নিপন্থি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’ নামে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে যাচ্ছে চলতি মাসের শেষে। দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, সুন্নি জনতার ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠনে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে এই ঐক্য ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ মানুষের রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আছে চরম বিতর্ক। তবে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পরিবর্তিত হয়েছে পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন জানান, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল। স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য যা যা করা দারকার তিনি করবেন।
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন চলছে মেরুকরণ, সেখানে পৃথক বলয় তৈরির তৎপরতা নিয়ে হাজির হচ্ছে ইসলামি সুন্নি জোট। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও জাকের পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহৎ ঐক্য গড়ছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে আগামী ৩০ আগস্ট নতুন জোটের ঘোষণা জানান দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। একাধিক দলের শীর্ষ নেতাদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, জাকের পার্টিসহ অন্তত পাঁচটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং বেশ কয়েকটি অনিবন্ধিত দলের নেতারা এক হওয়ার আলোচনা চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ইসলামী ফ্রন্ট, সুপ্রিম পার্টি এবং ইসলামিক ফ্রন্ট জোটের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। বাকিদের সঙ্গে এই তিন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা জোট গড়ার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশের রাজনীতিতে অবদান রাখতে সুন্নিদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন কাজ করছি। দেশে এই নামে কয়েকটি সংগঠন থাকায় সবগুলোকে এক করা হচ্ছে। আমাদের জোট তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। জোটের যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতে উল্লেখ আছে সমমনা কোনো দল জোটে আসতে চাইলে তাদের নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, জোট করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বিষয় গুরুত্ব দেওয় হচ্ছে। প্রধানতম হলো রাষ্ট্রের স্বার্থ, দেশাত্মবোধ, দেশপ্রেম, ’৭১ এবং ’২৪কে ধারণ করে এমন দলগুলো চাইলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারবে। আরও একটি বিষয়Ñ আকিদা।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাংগঠনিক সচিব অ্যাডভোকেট কাজী ইসলাম উদ্দিন দুলাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ২৩ আগস্ট সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, কাজী মঈন উদ্দিন আশরাফীর নেতৃত্বাধীন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এবং সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বাধীন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত মিলে কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ মজিবুল হক শুক্কুর জানান, জোট করার ক্ষেত্রে সুন্নিপন্থি সব মতসহ পির-মাশায়েখদের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাজনৈতিক দল ও তরিকতপন্থি সংগঠন দুই মতাদর্শকে এক করার চেষ্টা চলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরিকতপন্থি ও সুন্নিপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো এক হওয়ার প্রচেষ্টায় আশানুরূপ স্থানে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে তিনটি দল জোট গঠনের জন্য একমত হয়েছে। সমমনা অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, তরিকতপন্থি সুফিবাদী শান্তিপ্রিয় জনগণ সবচেয়ে অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার। স্বাধীনতার পর থেকেই এ বৈষম্য চলছে। তারা রাষ্ট্রের কাছে সব সময় অবহেলিত ছিল। অধিকার আদায়ের জন্যই ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রয়োজন আর সেই পথেই হাঁটছেন। ইসলামপন্থিদের নিজেদের ভেতরে বিভক্তির কারণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন মাইজভান্ডারি বলেন, অলি-আউলিয়ার বাংলাদেশে সুন্নি জনতা এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। শান্তিপ্রিয় বৃহত্তর এই জনগোষ্ঠীকে একই প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য জোটের বিকল্প নেই। তাই জোটবদ্ধভাবে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান গড়ে নিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সুন্নিপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাইলফলক হবে। বিভেদ থাকার কারণে আমরা অনেক ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে পেরে এক হওয়ার উদ্যেগ নেওয়া। গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পেক্ষাপটে নতুন রাজনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে সরব ছোট-বাড় সব দল। দলগুলোর চাওয়াÑ আসন্ন এই নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন