জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে ২৯৯টি মনোনয়ন ফরম তুলেছেন প্রার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম উত্তোলনের শেষ সময় পর্যন্ত ২৯৯টি মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ১৮ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলন। আগে ফরম উত্তোলনের মেয়াদ দুই দিন থাকলেও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
জাকসু উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গতকাল প্রার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সরেজমিনে দেখা যায়, মনোনয়ন ফরম নিতে শিক্ষার্থীরা ভিড় করেছেন নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন। মনোনয়ন ফরম উত্তোলন শেষে বক্তব্য দেন বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা।
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে আলাদা আমেজ কাজ করছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে অনেক প্রার্থী সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের ইচ্ছা পোষণ করেছি।’
জুলাই আন্দোলন আহত শিক্ষার্থী ও জিএস পদপ্রার্থী শাকিল আলী বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ। একজন প্রার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সব অধিকার আদায়ে আমরা কাজ করব। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাই।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনের কার্যক্রম এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। আমরা আশা করি, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবে। তারা যদি মনে করে ক্যাম্পাসে সেনা মোতায়েন করবে, আমরা বলব এই প্রশাসনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন দেখছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমাদের প্যানেল গঠিত হবে।’
বাগছাসের আহ্বায়ক ও ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত তারিখেই জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আলাদা প্যানেলের চিন্তা করছি। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করব না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে চাই।’
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ‘সংগঠনের নেতারা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা একটি প্যানেল করতে চাই, যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ থাকবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ থাকবে। সবাইকে নিয়েই আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমাদের প্যানেলের নাম হবে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জাকসু নির্বাচনের সদস্যসচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, ‘আজকে (গতকাল বৃহস্পতিবার) মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের ভিড় দেখেছি। গত দুই দিনের চেয়ে আজকে (গতকাল) প্রার্থীদের ভিড় বেশি ছিল। আমরা আশা করছি, উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারব।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন