ঢাকা শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন - সাইবার বুলিং ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ

এফ এ শাহেদ
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৬:০৬ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অবসান ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির। একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে আবাসিক হল ছাত্ররাজনীতি। তবে ক্যাম্পাসে আগের কালচার ফিরে আসা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। সেসব শঙ্কা ঠেলে ফেলে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ডাকসু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক একটি নাম। প্রায় ছয় বছর পর ৯ সেপ্টেম্বর হবে এই নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে জমে উঠছে ডাকসু নির্বাচন। তবে এবারের ডাকসু নির্বাচনে সাইবার বুলিং ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ।

ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ৫টি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের প্যানেল চূড়ান্ত হওয়ায় ক্যাম্পাসে নির্বাচনি আমেজ তৈরি হয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, এখনো আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়নি। আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে এবং ২৬ আগস্ট বিকেল ৪টায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন বাছাইয়ের বিষয়ে একই ফর্মে সমর্থক ও প্রস্তাবকের নাম, হল, স্বাক্ষরসহ কমিশনের সাতটি বিষয় ঠিক থাকা সাপেক্ষে চলছে বাছাই প্রক্রিয়া। গত বুধবার শেষ দিন পর্যন্ত ডাকসুর ২৮ পদে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দলের প্যানেলের প্রার্থীরা গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে যাতায়াত শুরু করেছেন। ফলে ক্রমেই জমে উঠছে ডাকসু নির্বাচন। 

বিভিন্ন প্যানেলে ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে প্রশাসন ঘোষণা করেছে, প্রার্থীরা কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না। যেখানে প্রার্থীরা সাইবার নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছেন বলে হুঁশিয়ার করা হচ্ছে। যার প্রধান লক্ষ্য নারী প্রার্থীরা। 

এদিকে শেষ সময়ে ডাকসু নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। এ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির নেতা উমামা ফাতেমা। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন আল সাদী ভূইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের (২০২৫) চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এ তথ্য জানান। 

তিনি আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের কঠোরভাবে আচরণবিধি অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে গত ১৮ আগস্ট মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ দিন থাকলেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য ভিড় করেন। 

ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো কোনো হল ও কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। এই অবস্থায় গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ সবার জন্য সমান ও সমুন্নত রাখার তাগিদে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণের সময় এক দিন করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ১৯ আগস্ট বিকেল ৫টা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

ডাকসু নির্বাচনে একই ফরমে সমর্থক ও প্রস্তাবকের নাম, হল, স্বাক্ষরসহ কমিশনের সাতটি বিষয় ঠিক থাকা সাপেক্ষে বাছাইপ্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়ন বাছাই শেষে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ হবে। এদিকে ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নামের পাশে ছবি যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। 

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে সারা দেশেই চলছে আলোচনা। খবরের কাগজের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে এই নির্বাচন। সামাজিক মাধ্যমের সুবাদে ডাকসু প্রার্থীদের খবরাখবর ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশের প্রান্তিক কোনো চায়ের দোকান থেকে প্রবাসীদের কাছেও। তবে রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনার বাইরে সামাজিক মাধ্যমে অনিরাপদ হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। সাইবার জগতে ক্রমাগত হেনস্তা, অপতথ্য ও গুজবের শিকার হচ্ছেন তারা। এতে প্রধান লক্ষ্য আলোচিত নারী প্রার্থীরা। প্রার্থীদের লক্ষ্য করে চলছে ট্যাগিং, বডি শেমিং, বুলিং, গুজব, কটূক্তি, বিদ্বেষমূলক প্রচার, প্রোপাগান্ডা ছড়ানোসহ নানা ধরনের সাইবার অপরাধ। এ ছাড়া সাইবার হামলার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সংগঠনের পেইজ, বটবাহিনীর উপদ্রবও চলছে ভয়াবহভাবে।

প্রধান লক্ষ্য নারী প্রার্থীরা: ডাকসু নির্বাচনে এবার নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ২০১৯ সালের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। এমনকি এবারের ঘোষিত ৯টি প্যানেলের মধ্যে ৫টিতেই নেতৃত্ব দেবেন নারী। ভিপি পদে লড়ছেন দুজন নারী, জিএস পদে একজন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়ছেন আরও দুজন নারী। এ ছাড়া বিভিন্ন প্যানেলের সম্পাদক ও সদস্য পদে রয়েছেন একাধিক নারী প্রার্থী, এরই মধ্যে তারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেছেন। তবে নারী প্রার্থীদের লক্ষ্য করে বডি শেমিং, বুলিংয়ের অহরহ ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

যা করতে পারবেন না প্রার্থীরা: বিভিন্ন প্যানেলে ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের প্রচারণা শুরু করেছেন। ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসারের অফিস প্রার্থীদের আচরণবিধিবিষয়ক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা পক্ষ আজ থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোনো ধরনের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে পারবেন না। তারা কোনো ধরনের উপঢৌকন বিলি-বণ্টন করতে পারবেন না। এ ছাড়া আপ্যায়ন করানো, অর্থ সহযোগিতা করা কিংবা এ ধরনের কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, ডাকসু নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। এ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির নেতা উমামা ফাতেমা। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন আল সাদী ভূইয়া, যিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন এ প্যানেলের সংবাদমাধ্যম সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা রাফিজ খান। এ প্যানেল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন জাহেদ হোসেন।

তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে নূমান আহমাদ চৌধুরী; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মমিনুল ইসলাম (বিধান); কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে সুর্মী চাকমা; আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নাফিজ বাশার (আলিফ); সাহিত্য এবং সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে এ প্যানেল থেকে লড়বেন অনিদ হাসান।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল থেকে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম হোসেন ইমন; ক্রীড়া সম্পাদক পদে সাদিকুজ্জামান সরকার (সাদিক); ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে রাফিজ খান; সমাজসেবা সম্পাদক পদে তানভির সামাদ; ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ইসরাত জাহান নিঝুম এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হয়েছে নুসরাত জাহান নিসুকে।

এ প্যানেল থেকে সদস্য পদে লড়বেন ববি বিশ্বাস, নওরীন সুলতানা তমা, আবির হাসান, রক্তবীজ অর্ক বড়ুয়া, রাফিউল হক রাফি, আব্দুল্লাহ আল মুবিন (রিফাত), সাদেকুর রহমান সানি, মো. মুকতারুল ইসলাম (রিদয়), হাসিবুর রহমান, আবিদ আব্দুলাহ, মো. হাসান জুবায়ের (তুফান), মো. সজিব হোসেন, মো. শাকিল, নেওয়াজ শরীফ আরমান ও আবিদ আব্দুল্লাহ।