সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকাকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে সবকিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন সারওয়ার। এরপর একটি সেমিনারে অংশ নিয়ে দুপুরে চলে যান ভোলাগঞ্জ। পরিদর্শন করেন সাদাপাথর। গিয়েই দেখতে পান পাথর লুটের দৃশ্য। গাড়িতে পাথর বোঝাই দেখলে ডেকে আনেন শ্রমিকদের। বলেন, যা হয়েছে, সেখানেই স্টপ। এখান থেকে আর একটা পাথরও নড়বে না।
পরে তিনি মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। এ সময় কিছুদিনের মধ্যে সাদাপাথর এলাকা আগের অবস্থায় ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সিলেটের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে সাদাপাথর আগের অবস্থায় ফিরবে ইনশাল্লাহ। রিইনস্টল, লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং প্রতিরোধÑ এই তিনটি বিষয় সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। পরিদর্শনকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নবনিযুক্ত ইউএনও মোহাম্মদ রবিন মিয়াসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সঙ্গে ছিলেন।
সারওয়ার আলম বলেন, ‘আর যাতে সিলেটের পাথর লুট হতে না পারে বা বাইরে যেতে না পারে সেজন্য আমরা আরও কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করব। লুণ্ঠিত পাথরগুলো কোথায় কোথায় আছে, সেটি খুঁজে বের করে আমরা রিইন্সটল করছি। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে সাদাপাথর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’
আপাতত তিনটি বিষয় সামনে রেখে কাজ করার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘আপাতত আমরা তিনটি বিষয় সামনে রেখে কাজ করছি। লুণ্ঠিত পাথর উদ্ধার ও রিইন্সটল, জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আর যাতে পাথর লুণ্ঠন বা চুরি না হয়, সে ব্যাপারে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। পাথর লুণ্ঠনের কারণগুলো চিহ্নিত করলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার সম্ভব।’
পাথর লুটেরাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। শাস্তির চেয়ে অপরাধ প্রতিরোধই উত্তম।’
এর আগে সিলেট জেলাপ্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে সিলেটের পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেন মো. সারওয়ার আলম। জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ডিসি সারওয়ার বলেন, ‘সিলেট হলো প্রকৃতিকন্যা। এখানকার পরিবেশকে অক্ষুণœ রেখেই উন্নয়নকাজ হবে। প্রকৃতির ক্ষতি না করে উন্নয়ন নিশ্চিত করাই হবে আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা, পরিবেশ, পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যÑ এই পাঁচটি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন। ডিসি বলেন, ‘আমি নিজেও পরিবেশের ছাত্র। তাই নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করব। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পৌঁছান মো. সারওয়ার আলম। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে তাকে বরণ করেন। পরে তিনি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালাবিষয়ক এক কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম ২০০৮ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভেজালবিরোধী অভিযানে তিনি দেশজুড়ে প্রশংসিত হন। সর্বশেষ তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
উপসচিব পদে পদোন্নতির সময় তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ্। সব প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী। তিনবার বঞ্চিত হওয়ার পর আজ উপসচিব পদে পদোন্নতি পেলাম।’
সিলেটে দায়িত্ব গ্রহণের সময় সারওয়ার আলমকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সম্প্রতি আলোচনায় থাকা সাদাপাথর লুট ও অবৈধ খননের ঘটনা, পর্যটন খাতের অব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ধ্বংস এবং বাজারে নিত্যপণ্যের অস্থিরতাÑ এসব ইস্যুতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রত্যাশা করছেন সিলেটবাসী। ডিসি সারওয়ার আলম বলেন, ‘আপনারা সহযোগিতা করলে, অতীতের মতো এখানেও আমি সবার পাশে থাকব।’ নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে সিলেটে তার প্রশাসনিক যাত্রা শুরু হলো।