ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন 

ছাত্রীদের উপস্থিতি  ছিল নজরকাড়া

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০৫:০৯ এএম

প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। হলভিত্তিক প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হলেও ভোটের দিন সকাল থেকেই ছাত্রীদের উপস্থিতি বিশেষভাবে নজর কাড়ে। টিএসসিতে অবস্থিত রোকেয়া হল কেন্দ্রে নারী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন ছিল। 

রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি), বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে। ভূতত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্রে ভোট দেন কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা এবং ইউল্যাব স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থীরা।

সবচেয়ে বেশি নারী ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে টিএসসিতে। টিএসসির প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে ডাস চত্বর পেরিয়ে মূল সড়ক পর্যন্ত লম্বা লাইন তৈরি হয়। এরপরও উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল সকাল থেকেই দলে দলে নারী শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে আসেন। কেন্দ্রপ্রধান অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা জানান, প্রথম এক ঘণ্টায়ই প্রায় ৭৬০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এক ঘণ্টায় প্রতিটি বুথে গড়ে ৪০ জন ভোট দিয়েছেন। সেই হিসাবে বলা যায়, প্রথম ঘণ্টায় কেন্দ্রটিতে ৭৬০ জনের মতো ভোট দিয়েছেন। তিনি আর বলেন, আমাদের কেন্দ্রে যে ১৯টি বুথ রয়েছে, তাতে কোনোটায় ৩৬টি, আবার কোনোটিতে ৪৫টি ভোট পড়েছে। সব বুথের ভোটগ্রহণকে গড় করে আমাদের মনে হয়েছে, প্রতিটি বুথে ৪০ জন করে ভোট দিয়েছেন প্রথম এক ঘণ্টায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাদ্রের এই ভ্যাপসা গরমে ডাকসুর নির্বাচনে কাউকে স্বস্তিতে দেখা যায়নি। তবে গরম উৎসাহে ভাটা ফেলতে পারেনি। হল থেকে শিক্ষার্থীরা আসছেন দলে দলেই। ভোট দিয়ে এসে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটপাতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন কেউ কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাসগুলোর ব্যস্ততা দেখা গেছে হল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। আবার অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়েও ক্যাম্পাসে এসে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে বাসগুলো।

এবারের ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে জানা যায়, আট কেন্দ্রে গড়ে ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। অনানুষ্ঠানিক হিসাব উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তারা যে তথ্য জানিয়েছেন, তাতে কেন্দ্রভেদে ৬৫ থেকে ৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে যায়। গতকাল বিকেল ৪টায় পর জানানো হয়, ছাত্রীদের হলে ভোট পড়েছে ৬৫ থেকে ৬৯ শতাংশ। তবে ছাত্রীদের ভোট পড়ার এ হার উল্লেখযোগ্য বলছেন সংশ্লিষ্টরা। হল ভেদে ভোটের অনুপাতÑ রোকেয়া হল ৬৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলÑ ৬৭ দশমিক ০৮ শতাংশ, কবি সুফিয়া কামাল হল ৬৪ শতাংশ এবং শামসুন নাহার হলে ৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

রোকেয়া হল থেকে আসা শিক্ষার্থী মুক্তা বলেন, ‘ইতিপূর্বে আমরা কখনো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাইনি। এটাই আমাদের জীবনের প্রথম ভোট, তাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছি।’

রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী নিশি ইসলাম বলেন, প্রথমবার ডাকসুর ভোট দিয়েছি। অনেকটা এমসিকিউ পরীক্ষার মতো লাগছিল। এ জন্য একটু ভয় কাজ করছিল। যদিও ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল। উদয়ন কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ফারহানা ইসলাম বলেন, আমাদের প্রথম ডাকসু নির্বাচন, আশা করি সামনের বছরও দিতে পারব। তবে আসার পথে বাস দেরি করায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবুও ভোট দিতে পেরে আনন্দ লাগছে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, তার আগে ডাকসু নির্বাচনকে ‘অনুশীলন’ হিসেবে দেখছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে ফারিয়া। তার ভাষায়, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে এটা ভালো প্র্যাক্টিস ছিল এবং অনেক ভালো অভিজ্ঞতা।’