ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জিন তাড়ানোর নামে ধর্ষণচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে মা-মেয়েকে হত্যা

মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০৬:০৯ এএম

কুমিল্লা নগরের কালিয়াজুড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ঘটেছে ভয়ঙ্কর এক ট্র্যাজেডি। জিন তাড়ানোর কথা বলে চিকিৎসা করতে এসে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয় মা তাহমিনা বেগম ফাতেমা (৪৫) ও মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিনকে (২৩)।

এই নৃশংস হত্যাকা-ের মূলহোতা কথিত কবিরাজ মোবারক হোসেন (২৯)। গত সোমবার রাতে ঢাকায় পালানোর সময় কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মোবারক কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। ঘটনাস্থলের পাশের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তাহমিনা বেগম ও সুমাইয়া আফরিনের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। তারা বিশ্বাস করতেন, জিনের আছর থেকে মুক্তি পেতে মোবারকের ‘চিকিৎসা’ দরকার। সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই এই মর্মান্তিক হত্যাকা-।

পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, কয়েক মাস আগে পরিচয়ের সূত্রে মোবারক ওই পরিবারের আস্থাভাজন হয়ে ওঠে। প্রায় সময়ই তিনি বাসায় যেতেন, কথা বলতেন, জিন তাড়ানোর নানা গল্প শোনাতেন। ধীরে ধীরে মা-মেয়ে দুজনই তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

ঘটনার দিন সোমবার দুপুরে চিকিৎসার কথা বলে বাসায় ঢুকে সুমাইয়ার ওপর ধর্ষণের চেষ্টা চালান মোবারক। বিষয়টি মা তাহমিনা দেখে ফেললে প্রথমে তাকে এবং পরে সুমাইয়াকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। এরপর বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও চার্জার নিয়ে পালিয়ে যান।

পুলিশ ও প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, দুপুরের পর থেকেই ওই বাসা অস্বাভাবিক নীরব হয়ে যায়। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, হয়তো মা-মেয়ে কোথাও বের হয়েছেন। কিন্তু বিকেল গড়াতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে দুজনের মরদেহ ঘরে পড়ে আছে।

ঘটনার পর পর নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে যান। বড় ছেলে বারবার মেঝেতে লুটিয়ে পড়ছেন, চোখে পানি আর অস্ফুট শব্দ আমি তোকে রক্ষা করতে পারলাম না, আপা। হাসপাতালজুড়ে শোক আর ক্রন্দনের শব্দে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

এ ঘটনায় মামলার পর কোতোয়ালি মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে সোমবার রাতেই মোবারককে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে নিহতদের বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও চার্জার উদ্ধার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার নজির আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যার সময় ও পরে মোবারকের চলাচলের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়।

স্থানীয় অপরাধ বিশেষজ্ঞ মেজর ডা. সাহেদ আহমেদ বলছেন, ধর্মীয় বা অলৌকিক চিকিৎসার নামে অনেক সময় প্রতারণা, যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এমন প্রতারকদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।