গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ (যার মধ্যে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট আছে) বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে এমন সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, জুলাই সনদের সংবিধানের বিষয়গুলো বাস্তবায়নে দলগুলো বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়। সেগুলোর মধ্যেÑ পূর্ণাঙ্গ সনদ বা তার কিছু অংশ নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠান; রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতাবলে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন করা; একটি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থা করা; ত্রয়োদশ সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এই সনদ বাস্তবায়ন করবে; সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভারূপে প্রতিষ্ঠিত করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে মতামত চাওয়া যে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না।
দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞ প্যানেল একাধিক বৈঠকে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প বিবেচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে; এগুলো হচ্ছেÑ অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ এবং ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া। পরবর্তী সময়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়া বিষয়সমূহকে (যার মধ্যে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট আছে) সেগুলো চারভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো- অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট এবং বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।
কমিশন জোর করে কিছু চাপিয়ে দেবে না: আলী রীয়াজ
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেবে না বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, সনদ বাস্তবায়নের ক্ষমতা কমিশনের নেই। কমিশন শুধু সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে সুপারিশ করতে পারে। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। বৈঠকে প্রায় ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, সর্বশেষ আলোচনায় আমরা কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছিলাম, যার একটি খসড়া আপনাদের দেওয়া হয়েছিল। সেই খসড়ার ওপর আপনারা মতামত দিয়েছেন। অঙ্গীকারনামার বিষয়েও বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে, চূড়ান্ত খসড়াটি আজ (গতকাল) বিকেলেই আপনাদের হাতে পৌঁছে যাবে। তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিকবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এই প্যানেলে দুজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী এবং একজন আইনের শিক্ষক ছিলেন।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, জুলাই সনদের কিছু বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কমিশন নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় না। বরং আমরা বিশেষজ্ঞ প্যানেল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করতে আগ্রহী।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন