নগরবাসীর যাতায়াত নির্বিঘœ করতে যানজট নিয়ন্ত্রণে শহরের বিভিন্ন সড়কে ডাইভারশন দিয়েছে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। এ ছাড়া সড়কের যানজট নিরসন এবং অটোরিকশা বন্ধে ট্রাফিকের উদ্যোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন, প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ-১) আনিছুর রহমান
রূপালী বাংলাদেশ: রাজধানীতে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কী কী পরিকল্পানা নিয়েছে?
আনিছুর রহমান: রাজধানীতে যানজট নিরসন আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ। ঢাকা শহরে যেহেতু খুব অল্প জায়গার মধ্যে অধিক জনগোষ্ঠীর বাস, ফলে এ কাজটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এরই মধ্যে আমরা রাজধানীতে মোট ৬৯টি জায়গায় ট্রাফিক ডাইভারশন দিয়েছি। এর মাধ্যমে বেশ কিছু সুফল পাওয়া গেছে। তবে কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে দু-একটি ডাইভারশন পাল্টানো হয়েছে। আমরা চাইছি আরও অনেক স্থানে ট্রাফিক মডিফেকেশনের মাধ্যমে সিগন্যাল কমিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে। শহরের অনেক সড়কে দুটো-তিনটা, কোনোটায় চারটা সিগন্যাল পড়ে। আমরা দেখছি, কোনো জায়গায় মডিফেকেশন করে একটা-দুটো সিগন্যাল কমিয়ে দেওয়া যায় কি না। তাতে ট্রাফিক ফ্লোতে অনেক বেশি ইমপ্রুভমেন্ট পাওয়া যায়। আমরা এভাবেই চেষ্টা করছি যানজট নিরসনে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতে থাকবে।
রূপালী বাংলাদেশ: ডাইভারশনের কারণে অনেক জায়গায় সুফল এসেছে, কিন্তু অনেক অনেক জায়গায় চালক ও যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছেÑ এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আনিছুর রহমান: আমাদের নতুন এডিশনাল কমিশনার ট্রাফিক স্যার যোগদানের পর বিষয়টি নিয়ে বসেছি। আমরা যে ৬৯টি জায়গায় ট্রাফিক ডাইভারশন বা মডিফেকেশন করেছি, এখন প্রতিটি জায়গায় আমরা সার্ভে করব। সার্ভে করে দেখব, প্রকৃত অর্থে উপকৃত হচ্ছে, নাকি কোনো সমস্যা হচ্ছে। যদি সমস্যা হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া বিশে^র কোনো স্থানে ট্রাফিকের ডোর টু ডোর সার্ভিস হয় না। আমরা যে মডিফেকেশনগুলো করেছি, হয়তো দুই থেকে তিন মিনিট বা চার মিনিট সময় লাগছে, হয়তো যানবাহনগুলো একটু ঘুরে আসতে হচ্ছে, তবে এর ফলে ট্রাফিক ফ্লো বেড়েছে।
রূপালী বাংলাদেশ: রাজধানীর মূল সড়কে এখন অনেক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এটা কেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, প্রতিবন্ধকতা কোথায়?
আনিছুর রহমান: অটোরিকশার বিষয়ে এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনসহ দেশে যত অটোরিকশা আছে, তা চিহ্নিত করা, যার মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ নিয়ে এলজিইডি মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কাজ করছে। এ বিষয়ে একটি গেজেটও প্রকাশ হয়েছে। সম্পূর্ণ কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যেই সামগ্রিকভাবে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একটি নির্দেশনা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া রিকশাগুলো লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনা হবে। পরিকল্পনা হচ্ছে, কোন এলাকায় কোন অটোরিকশা চলবে তার নির্দিষ্ট রং বলে দেওয়া হবে, যাতে এক এলাকার রিকশা অন্য এলাকায় চলতে না পারে। রাজধানীসহ দেশের মূল সড়কে রিকশা ওঠা নিষিদ্ধ। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি যাতে রিকশাগুলো মূল সড়কে না আসে। কিন্তু আমাদের জনবলের তীব্র সংকট রয়েছে। এ কারণে আমাদের পক্ষে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। প্রতিদিন যে পরিমাণ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যদি সেটা না হতো, তাহলে এতদিন প্রধান সড়কে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ত। গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের অটোরিকশায় ওঠার প্রবণতা কমবে। গণপরিবহনকে উন্নত করার জন্য আমাদের বাস রুট র্যাশনালাইজেশন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন হয়ে যাবে। গণপরিবহনব্যবস্থা যদি উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ অটোরিকশায় না উঠে বাস ব্যবহার করবে।
রূপালী বাংলাদেশ: প্রতিদিন গড়ে কী পরিমাণ মামলা ও জরিমানা হচ্ছে?
আনিছুর রহমান: প্রতিদিন ডিএমপিতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে গড়ে আড়াই থেকে ৩ হাজার মামলা ও জরিমানা হচ্ছে। ট্রাফিক মামলায় মাসে অন্তত ১৫ কোটি টাকার মতো জরিমানা করা হয়।
রূপালী বাংলাদেশ: প্রতিদিন কী পরিমাণ অটোরিকশা ডাম্পিংয়ে নেওয়া হচ্ছে?
আনিছুর রহমান: মূল সড়কে চলাচলসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রতিদিন নি¤œতম ৬০০ থেকে ৭০০ রিকশা ডাম্পিংয়ে নেওয়া হচ্ছে।
রূপালী বাংলাদেশ: অটোরিকশা ডাম্পিংয়ে নেওয়ার চার দিন বা এক সপ্তাহ পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আসলেই কি কোনো সুফল পাচ্ছেন?
আনিছুর রহমান: আমাদের পর্যাপ্ত ডাম্পিং স্টেশন নেই। বসিলায় যে ডাম্পিং স্টেশনটা ব্যবহার করছি, এটা বদ্ধভূমির একটা বর্ধিত জায়গা। পোস্তগোলায়ও একটা রয়েছে। কিন্তু এগুলো পর্যাপ্ত নয়। কাঁচপুরে একটা ডাম্পিং স্টেশন আছে, কিন্তু ওখানে যাতায়তব্যবস্থা ভালো না। আমাদের ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ব্যবস্থা ভালো না বিধায় চাইলেই অনির্ধারিত সময়ের জন্য অটোরিকশাগুলো আটক রাখতে পারি না। এ জন্য আমার সতর্কতামূলক শাস্তি হিসেবে ন্যূনতম ১৫ দিন একটা অটোরিকশা আটকে রাখি। আমাদের বড় পরিসরে জায়গা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করছি এমন একটা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য।
রূপালী বাংলাদেশ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনিছুর রহমান: রূপালী বাংলাদেশ পরিবারকেও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন